“এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী হলে কী করবেন? কবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন?”
২২ বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্ন রেখেছিলেন সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী।
যার সাক্ষাৎকার তিনি নিচ্ছিলেন, তিনি তারেক রহমান, তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে, বিএনপির আজকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তারেক সেদিন বলেছিলেন, ওই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মত কিছু তিনি ভাবছেন না। রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার কোনো স্বপ্নও দেখছেন না তিনি।
এরপর অনেক উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গেছে বাংলাদেশ। তারেক রহমানকে জেলে যেতে হয়েছে, জেল থেকে বেরিয়ে যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে কাটাতে হয়েছে প্রায় ১৮ বছর।
সেই নির্বাসনের ইতি টেনে গত ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরে লাখো জনতার সমাবেশে তারেক বলেছেন, “আই হ্যাভ আ প্ল্যান।” তাকেই বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ২০০৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর চ্যানেল আইয়ের হয়ে যখন তারেকের প্রথম টেলিভিশন সাক্ষাৎকারটি নেন, তখন বিএনপি ক্ষমতায়। ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করে চ্যানেল আই। তারেকের দেশে ফেরা উপলক্ষে সম্প্রতি সাক্ষাৎকারটি পুনঃপ্রচার করা হয়।
সে সময় তারেক বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। সরকারে না থাকলেও প্রশাসনে তার প্রভাব নিয়ে তখন নানা আলোচনা-সমালোচনা ছিল।
তারেক রহমান সে সময় বলেছিলেন, রাজনীতি কারো পেশা হতে পারে না। রাজনীতি হল আদর্শ। জীবিকার জন্য রাজনীতিবিদেরও একটি পেশা থাকতে হয়।
সে সময় তার ভাষ্য ছিল, একটি সরকার দেশের সমস্যা মেটাতে কতটা আন্তরিক, সেটাই ‘মূল বিষয়’ হওয়া উচিত।
তখনকার ৩৮ বছর বয়সী তারেকের মূল্যায়ন ছিল, শেখ মুজিবুর রহমান আর জিয়াউর রহমান– দেশ ও দেশের মানুষের জন্য দুজনেরই ‘অবদান’ আছে। প্রতিদিনের রাজনীতির মধ্যে তাদের ‘টেনে না আনাই ভালো’।
চ্যানেল আইয়ের সেই সাক্ষাৎকারের অনুলিপি পাঠকের জন্য প্রকাশ করা হল।
মতিউর রহমান চৌধুরী: প্রিয় দর্শক শ্রোতা আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। আজ আপনাদের সামনে এমন একজন অতিথিকে হাজির করেছি, যার পরিচয় দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। সবাই তাকে এক নামে চেনেন। তিনি হচ্ছেন তারেক রহমান। রাজনীতিতে নতুন চমক, এই মুহূর্তে তাকে নিয়ে রাজনীতিতে বিস্তর আলোচনা। সরকারে নেই, অথচ বিরোধীরা তার সমালোচনায় মুখর। তিনি কখনো জবাব দেন, কখনো নীরব থাকেন। বাবা ও মায়ের প্রজ্ঞা ও প্রতিভার আশীর্বাদ ধন্য তরুণ। স্বকীয় গুণে রাজনীতির উদীয়মান উজ্জ্বল তারকা। তারেক রহমান, চ্যানেল আই স্টুডিওতে আসার জন্য আপনাকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ।
তারেক রহমান: ধন্যবাদ।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আপনাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
তারেক রহমান: ধন্যবাদ। একই সাথে আমিও ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি নববর্ষের।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আপনি কেমন আছেন?
তারেক রহমান: আছি ইনশাল্লাহ ভালো।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আপনি কী করতে চান?
তারেক রহমান: কোন বিষয়ে?
মতিউর রহমান চৌধুরী: রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, দেশ, জাতি?
তারেক রহমান: খুব সংক্ষেপে বললে বলতে হয়, যেহেতু রাজনীতিতে এসেই গেছি, সুযোগ পেলে ভালো কিছু করতে চাই।
মতিউর রহমান চৌধুরী: যেমন?
তারেক রহমান: বেটার কিছু। একটা মানুষের পক্ষে তো সবকিছু করা সম্ভব নয়। তবে যতটুকু সম্ভব, মানুষ যতটুকু আশা করে, সুযোগ পেলে সেটার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করব।
মতিউর রহমান চৌধুরী: অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ?
তারেক রহমান: অতীতে ভালো ও মন্দ দুটোই আছে। তবে মন্দটাকে আমরা অতীতের মন্দটাকে বাদ দেই, ভালোটাকে সাথে রাখি এবং ভবিষ্যতে যাতে আরো ভালো করা যেতে পারে, সেই চেষ্টা করা উচিত সবার।
মতিউর রহমান চৌধুরী: চায়ের চুমুকে, চায়ের টেবিলে যখন যা আলোচনা হয়, এমনকি প্রেস ক্লাবে সর্বত্র আপনাকে নিয়ে আলোচনা হয়। আপনাকে নিয়ে ঝড় ওঠে। পল্টন ময়দানে আপনাকে নিয়ে বক্তৃতা হয়। কেন?
তারেক রহমান: এটা যারা করেন, তারা ভালো বলতে পারবেন; কেন করেন তারা। তবুও আপনি কীভাবে দেখছেন এটা? যখন আমার কোনো ভালো কাজ নিয়ে কথা হয়, অনুপ্রাণিত অনুভব করি। যদি কোনো ভুল করে থাকি, যেটা সমালোচনা হয়, চেষ্টা করি যাতে সেটা ভবিষ্যতে না হয়।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আপনি কেন রাজনীতিতে এলেন?
তারেক রহমান: আসলে এটা পরিস্থিতির সাথে জড়িত বিষয়টা অনেকটা। খুব সংক্ষেপে বলতে হয় যে, ১৯৯১ সালে যখন নির্বাচন হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়, সে সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উনি পাঁচটি আসনে নির্বাচন করেন। যেহেতু উনি অন্যান্য আসনগুলো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, আমার দলের আমাদের দলের অন্যান্য যারা নমিনেশন পেয়েছে সেই সকল আসন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, আমাকে উনার আসনগুলোতে যেতে হয়েছিল। সেখানকার মানুষের দাবি ছিল এবং সেই কারণে আমাকে যেতে হয়েছিল। বিশেষ করে আমি যখন আমার নিজ এলাকায় যাই, সেখানে মানুষকে বলেছিলাম যে নির্বাচন এবং নির্বাচনের পরবর্তী সময় আসব।
মতিউর রহমান চৌধুরী: নিজ এলাকা মানে বগুড়ায়?
তারেক রহমান: বগুড়া গাবতলী, বগুড়া ৭ যেটা। সেখানে যখন যাই, সেখানে যাওয়ার পরে মানুষের সাথে কথা বলি। নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের পরে আবারো মানুষের কাছ থেকে দাবি ওঠে যাওয়ার। এবং এভাবেই আস্তে আস্তে প্রথমে নিজ থানা, তারপরে নিজ জেলা এবং আস্তে আস্তে দলের নেতাকর্মী বা দলের সমর্থকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রেশারে আস্তে আস্তে রাজনীতির সাথে ইনভলভ হয়ে গেছি। বলা যায় যে, পরিস্থিতি আমাকে অনেকটা বাধ্য করেছে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: কার আদর্শ, বাবা না মায়ের?
তারেক রহমান: উভয়ই।
মতিউর রহমান চৌধুরী: কী রকম? একটু এক্সপ্লেইন করেন। বাবা এবং মা দুজনের রাজনীতি যদিও একই আদর্শ। তারপর দুইটা স্টাইল আছে। তো আপনি কোনটাকে প্রেফার করবেন?
তারেক রহমান: আসলে প্রেফারের তো ব্যাপার না এখানে। দুটি রাজনীতি একই আদর্শকে ঘিরে। দুজনের উভয়ের রাজনীতি একটি আদর্শকেই লক্ষ্য করে। এবং খুব স্বাভাবিকভাবে আমারও লক্ষ্য সেটাই।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আমরা এর মধ্যে যা দেখেছি, তাতে অনেক সময় দেখা যায় যে আপনি আসলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে কিছুটা অনুসরণ বা অনুকরণ করছেন।
তারেক রহমান: এটা কি খুব স্বাভাবিক নয়? প্রত্যেক সন্তানই তো নিজের বাবাকে, বাবার ভালো জিনিসগুলোকে অনুসরণ করে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আপনি এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী হলে কী করবেন?
তারেক রহমান: আসলে এই মুহূর্তে এরকম কিছু আমি ভাবছি না। কাজেই আমি উত্তরে যাচ্ছি না।
মতিউর রহমান চৌধুরী: সুযোগ তো আসবে। আপনি রাজনীতি করেন, সুযোগ আসবে। আপনার ফার্স্ট এজেন্ডা কী হবে?
তারেক রহমান: ফার্স্ট এজেন্ডা খুব স্বাভাবিকভাবেই থাকবে সেই, আপনি যেটা বললেন, ওই মুহূর্তে যেটা মানুষের কাছে ফার্স্ট প্রায়োরিটি থাকবে, কমিটমেন্টের ফার্স্ট প্রায়োরিটি থাকবে, সেগুলোকে যথা সম্ভব অ্যাজ আর্লি পসিবল সেটাকে পূরণ করা।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আপনি নেপথ্যে ছিলেন, বিশেষ করে ২০০১ সনের নির্বাচনের আগে নেপথ্য থেকেই আপনি ভূমিকা পালন করেছেন। হঠাৎ করে সামনে এলেন। বিশেষ করে, আপনি যেভাবে নেপথ্যে থেকে দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন, হঠাৎ করে সামনে এলেন। তো এটা রাজনীতিতে আসার আগে কি আপনার কোনো চিন্তা ছিল?
তারেক রহমান: আসলে নেপথ্যে বা সামনে বিষয়টা না। বিষয়টা আমি আমার চেষ্টা করেছি, আমার দলের জন্য যতটুকু সম্ভব, আমার পক্ষে কাজ করার। তারপর নির্বাচনের পরে একসময় আমার দলের নেতাকর্মীদের চাপে এবং বিভিন্ন শ্রেণির নেতাকর্মীদের চাপেই পরে আমি দেখলাম যে, বিএনপির যেটা সবচেয়ে হাইয়েস্ট ফোরাম, স্ট্যান্ডিং কমিটি, তারা সিদ্ধান্ত নেন যে, অফিশিয়াল একটা স্ট্যান্ডিং দেবেন আমাকে দলে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: অনেকে বলেন যে আপনি উত্তরাধিকারের রাজনীতির… আপনি নিজে বলে থাকেন যে আমি উত্তরাধিকারের রাজনীতি থেকে আসিনি। কিন্তু এটা তো বাস্তব সত্য, যেহেতু একই রাজনৈতিক পরিবার থেকে আপনার রাজনীতিতে আসা। তো আপনি ২০০২ এর জুন মাসে বিএনপির প্রথম যুগ্ম মহাসচিব হয়েছেন। এর পরবর্তী পর্যায়ে এখন আপনি গ্রামে গঞ্জে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সর্বত্র কথাবার্তা বলছেন, আলোচনা সমালোচনা আপনার বক্তব্য নিয়ে হচ্ছে। আপনি সরকারের কেউ না, অথচ আপনাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
তারেক রহমান: এটাকে আমি দেখি, যারা আলোচনা করেন, তারা অজ্ঞতাবশতই আলোচনা করেন। হয় অজ্ঞতাবশত তারা আলোচনা করেন, না জেনে, না শুনে আলোচনা করেন, অথবা তাদের কোনো দুর্বলতা থাকে বা কোনো কিছু থেকে তারা এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেন।
মতিউর রহমান চৌধুরী: দেখা যাচ্ছে যে রাজনীতিতে আসার আগে আপনি ব্যবসা করেছেন। ব্যবসা করে মোটামুটি সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তো রাজনীতিতে আসার আগে ব্যবসাতে গেলেন কেন?
তারেক রহমান: ওয়েল, কী করব? হয় কোথাও চাকরি করতে হবে, কোনো প্রতিষ্ঠানে, অথবা নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অথবা নিজের একটা পেশা থাকতে হবে তো। কিছু তো করে আমাকে তো রুজি রোজগার করতে হবে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: না, কিন্তু রাজনীতিতে তো দেখা যায় যে অনেকের আবার পেশা নেই।
তারেক রহমান: ওয়েল, এই বিষয়ে আমি একমত নই। পৃথিবীর আপনি যেকোনো উন্নত দেশ দেখেন, ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডে দেখেন, ইউরোপে দেখেন, আমেরিকায় দেখেন; যারা রাজনীতিবিদ আছেন, তাদের কিন্তু রাজনীতিটা আদর্শ, ব্যবসাটা কিন্তু পেশা। ব্যবসাটা পেশা, রাজনীতি পেশা হতে পারে না। রাজনীতিটা হচ্ছে আদর্শ। রাজনীতি করি আমি, রাজনীতি আমার আদর্শ। কিন্তু আমার তো একটা পেশা থাকতে হবে, আমাকে তো চলতে হবে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: কিন্তু সরকার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
তারেক রহমান: দেখুন বাংলাদেশের মতন একটি দেশে সরকার পরিচালনা করতে গেলে আমি যতটুকু বুঝি, যতটুকু দেখেছি আমি, প্রচুর সমস্যা আছে আমাদের। এবং সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে যে, সরকার কতটুকু আন্তরিক। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে সুন্দরভাবে দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে কতটুকু আন্তরিক তারা পরিচালনার জন্য। এটাই বোধহয় মূল বিষয় হওয়া উচিত। কাজেই সকল সমস্যাকে সামনে রেখে পর্যায়ক্রমে যা আমাদের রিসোর্স আছে, যা কিছু আছে, তার মধ্যে সরকার সঠিকভাবে আন্তরিকতার সাথে পরিচালনা করাটাই বোধহয় সবচেয়ে বড়। সফলতা হয়ত পুরাপুরি আমরা পাইনি। তবে আমি বিশ্বাস করি ব্যক্তিগতভাবে যে, আমরা যদি আন্তরিকতার সাথে চেষ্টা চালিয়ে যাই, সফল ইনশাআল্লাহ আমরা হবই।
মতিউর রহমান চৌধুরী: না, বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যটা, যেটা নিয়ে সবচাইতে বেশি আলোচনা হচ্ছে, সেটা আপনার দলের পক্ষ থেকে কি সরকারকে বলেননি?
তারেক রহমান: আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আমরা জানিয়েছি সরকারকে। আর সরকারের যারা আছেন, তারাও তো আমাদের দলেরই নেতৃবৃন্দ। আমরা চেষ্টা করেছি, আপনারা দেখেছেন বিভিন্ন সময় সরকার বিভিন্ন দ্রব্যের ট্যাক্স কমিয়েছে, ব্যাংকে যে এলসি মার্জিন, সেটাও মওকুফ করে দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের সরকার চেষ্টা করছে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটো ধারা। দুইজন ব্যক্তির নামে দুটি ধারা, দুইটি রাজনৈতিক ধারা চলছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে একটি ধারা, একটি রাজনীতি চলছে। আরেকটা বঙ্গবন্ধুর নামে চলছে। আপনি একজন তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে, আপনি ভবিষ্যতের বাংলাদেশের নতুন করে স্বপ্ন দেখেন। এই দুইজন রাজনীতিবিদ সম্পর্কে, দুইজন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
তারেক রহমান: ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, এই দুজন মানুষেরই দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য অবদান আছে। এবং আমরা আমাদের প্রতিদিনকার রাজনীতির মধ্যে এই দুজন মানুষকে টেনে না আনাটাই বোধহয় ভালো। তাদেরকে তাদের অবস্থানে থাকতে দেওয়া… সাধারণ মানুষ কিন্তু তাদেরকে শ্রদ্ধার চোখেই দেখে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: এবার মিডিয়া প্রশ্নে আসি, যেহেতু রাজনীতিতে আবার যাবো। একটু ব্রেক দেই রাজনীতিতে, অনেক সময় রাজনীতি নিয়ে হয়ে গেল। বাংলাদেশের মিডিয়া সম্পর্কে ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, দুটোই সচল এবং দুইটা সম্পর্কে আপনার চিন্তা চেতনা ধারণা…আপনি কীভাবে দেখেন মিডিয়াকে?
তারেক রহমান: মিডিয়ার মধ্যেই তো বসে আছি এখন। মিডিয়া সম্পর্কে বলতে হলে–অনেক সময় আমরা লক্ষ্য করেছি যে, মিডিয়ায় যারা যুক্ত আছেন, অনেক সময় তাদের প্রফেশনের সাথে তাদের রাজনৈতিক দর্শনকে উনারা অনেক সময় মিশিয়ে ফেলেন। তো আমার অনুরোধ থাকবে তাদের কাছে যে, যার যার অবশ্যই ব্যক্তিগত রাজনৈতিক দর্শন আছে এবং সেই দর্শনটার পক্ষে বা বিপক্ষে মত দেওয়ার দিন কিন্তু ভোটের দিন, ব্যালট। তো সেটা সেদিন প্রকাশ করাটাই বোধহয় সবচেয়ে ভালো। রিপোর্টিং যখন উনি করেন, মিডিয়াতে যারা নিযুক্ত আছেন, যখন রিপোর্ট তৈরি করেন বা রিপোর্ট করেন, সেই সময় তার রাজনৈতিক দর্শনের সাথে প্রফেশনকে না মিশিয়ে, শুধু প্রফেশনকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। যদি এটা হয়, আমার মনে হয় মিডিয়া আরো বেটার হবে, মানুষের কাছে আরো বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: দলীয় রাজনীতি করছেন। সংসদীয় রাজনীতিতে কবে আসছেন? এটা কি সিলেট হবে না বগুড়া?
তারেক রহমান: এটা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি।
মতিউর রহমান চৌধুরী: তবুও। কবে এবং কখন? আগামী নির্বাচনে আগেই আমরা দেখতে পাবো আপনি সংসদে এমপি, না আগামী নির্বাচনে?
তারেক রহমান: আসলে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। কেমন করে বলব? তবে স্বাভাবিকভাবে যদি হয়েও থাকে সেটা তাহলে আগামী নির্বাচনের সময়ই হবে; জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ই হবে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: বলা হয়ে থাকে যে জিয়াউর রহমানের একটা গুণ আছে, যিনি তার জন্য কিছু করতেন, তার বেশি প্রতিদান দিতেন। এই জিনিসটা আপনার মধ্যে আছে।
তারেক রহমান: আছে নাকি?
মতিউর রহমান চৌধুরী: এটা অনেকে বলেন। নিশ্চয় আপনি ভালো জানবেন এটা।
তারেক রহমান: না, এটা তো আমি বলতে পারব না। এটা যারা বলেন, তারা নিশ্চয় কিছু বিবেচনা বা বিচার করে বলেন। এটা অন্য কেউ বলতে পারবে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: বাংলাদেশের কোন বিষয়টি আপনাকে কষ্ট দেয় খুব বেশি? আপনি যখন ভাবেন, যখন একা বসে থাকেন, চিন্তা করেন; কোন বিষয়টি? কারণ ৩২ বছর তো একটা দেশের জন্য কম সময় না।
তারেক রহমান: এটা, প্রশ্নটা ছোট হলেও আসলে বিষয়টি অনেক বিশাল। প্রত্যেকে যদি নিজের যতটুকু কাজ অতটুকু সম্পর্কে যত্নশীল হয়, তাহলে কিন্তু আমরা অনেক দ্রুত পুরা পরিস্থিতি, পুরা দেশের পরিস্থিতি কিন্তু চেইঞ্জ করতে পারব।
মতিউর রহমান চৌধুরী: কিন্তু সেটা হচ্ছে না কেন?
তারেক রহমান: সেটা হচ্ছে না আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে বোধহয় সব রাজনৈতিক দলের সকল পর্যায়ের নেতারা, উপর থেকে নিচ পর্যন্ত, সকল পর্যায়ের নেতারা… এটা কনশাসনেসের ব্যাপার আসলে। এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে হবে। শুধু বক্তৃতা দিলে হবে না, বক্তৃতায় এসব বিষয় থাকতে হবে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী?
তারেক রহমান: আমি মনে করি ভালো; আমি মনে করি ভালো। কারণ, দেখুন আপনি, যেভাবেই হোক ১৯৯১ সাল থেকে একটা ডেমোক্রেটিক প্রসেসের মধ্যে আমরা চলে এসছি। সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হচ্ছে। হয়তো বিভিন্ন সমস্যা আছে, বিভিন্ন প্রবলেম আছে। এগুলোও একসময় শেষ হয়ে আসবে। আরো স্মুথ হয়ে যাবে সিচুয়েশন। যা বর্তমান পরিস্থিতি, আমি মনে করি ভালো।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আপনি কবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন বা স্বপ্ন দেখেন?
তারেক রহমান: এরকম কোনো স্বপ্ন-টপ্ন আমি এখনো দেখছি না।
মতিউর রহমান চৌধুরী: যেহেতু আপনি রাজনীতি করেন, আপনার তো ইচ্ছা থাকবেই।
তারেক রহমান: হ্যাঁ, এইটা এইটা তো একচুয়ালি, আমি বিশ্বাস করি, এটা যার কপালেই থাকুক না কেন, এটা তো উপর থেকে, এটা আল্লাহ্র তরফ থেকে ইশারা হবে। কাজেই যদি ওরকম ইশারা থাকে আল্লাহ্র, তাহলে সেটা তো উনিই ডিসাইড করবেন কবে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: বাবা প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন। মা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাদের হাসি কান্না দুঃখ বেদনা আপনি কীভাবে দেখেছেন?
তারেক রহমান: এটা তো আসলে এভাবে না। বিষয়টা হচ্ছে, আর দশটি পরিবার যেভাবে দেখে, দশটি পরিবারের সন্তান যেভাবে দেখে মা বাবার হাসি কান্না, আমিও ঠিক সেভাবেই দেখেছি।
মতিউর রহমান চৌধুরী: যেহেতু তারা রাষ্ট্র ক্ষমতা বাংলাদেশের মত একটা দেশে…।
তারেক রহমান: তারপরেও, যতই হোক, আমার কাছে তো উনি প্রেসিডেন্ট নন, উনি প্রধানমন্ত্রী নন, আমার কাছে উনি আমার বাবা, আমার কাছে উনি আমার মা। কাজেই আমি ওভাবেই দেখব।
মতিউর রহমান চৌধুরী: ব্যক্তিগত কিছু প্রশ্নে আসতে চাই। সংসার কেমন চলছে?
তারেক রহমান: সংসার একটু অভিযোগের পালায় চলছে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: যেমন?
তারেক রহমান: স্বাভাবিকভাবেই যেহেতু রাজনীতিতে জড়িয়ে গেছি এবং ওদিকেই সময়টা একটু বেশি দিতে হচ্ছে, সেজন্য স্ত্রীর অভিযোগ থাকে, সন্তানের অভিযোগ থাকে যে, তাদেরকে সময় দিতে পারি না। যেমন আজ ছুটির দিন, কিন্তু আজ আপনার সাথে এখানে আসতে হল। তো আজকেও তো তাদেরকে নিয়ে কোথাও যেতে পারিনি, এই অভিযোগটা আছে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: অবসর পেলে কী করেন?
তারেক রহমান: অবসর পেলে ছবি দেখি।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আপনি লেখালিখি করেন?
তারেক রহমান: এক সময় ছোটবেলায় ছড়া লিখতাম, কবিতা লিখতাম, বা গল্প লিখতাম। এখন হয় না।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আপনার স্ত্রী একজন চিকিৎসক, মানে ডাক্তার; এবং রাজনীতিবিদ, এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয়টা কী রকম?
তারেক রহমান: উনার পেশা এবং আমার রাজনীতি, এটা দেখে তো আসলে বিয়ে হয়নি। বিয়েটা হয়েছে অবভিয়াসলি মানুষ হিসেবে, কাজেই কোনোটিই কনফ্লিক্ট করে না।
মতিউর রহমান চৌধুরী: কোনো সময় না?
তারেক রহমান: না।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আপনি কি রাষ্ট্র পরিচালনায় মাকে কখনো অনুযোগ করেন না, এটা এভাবে চললে ভালো হত?
তারেক রহমান: এটা একচুয়ালি উনি অ্যালাউ করেন না আমাদেরকে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আপনি কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?
তারেক রহমান: আমার কাছে যদি বলেন, বাংলাদেশের পরে, মানে অনেক সময় অনেকে বলে না যে একটা দেশ খুব পছন্দ হয়, অনেকের থাকে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন দেশ পছন্দ হয়। আমার কাছে একটা দেশ খুব পছন্দ হয়, সেটা হচ্ছে মালয়েশিয়া। আমি সুযোগ পেলে মালয়েশিয়াতে যাই, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন জায়গা আমি ঘুরে দেখি। কারণ, যেটা আমি শুনেছি, পড়েছি, অনেক জনের কাছে শুনেছি, যে এক সময় আজকে থেকে প্রায় ২০ বছর আগে, ওই দেশটা আমাদের মতনই ছিল। কিন্তু গত ১৫-২০ বছরে ওই দেশটা অনেক ডেভেলপ করে গেছে। তাদের অনেক কিছু কিন্তু আমাদের সাথে মিল আছে, সামাজিকতা বলেন, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলেন, বিভিন্ন জিনিস কমবেশি বাংলাদেশের সাথে মিল আছে। সেজন্য ওই দেশটা দেখতে ভালো লাগে আমার কাছে যে, কীভাবে তারা চেইঞ্জ করল, কোথায় কোথায় তারা চেইঞ্জ করল, কী চেইঞ্জ করল। তো আমি ওইরকম একটা দেশ দেখতে আগ্রহী বা ইচ্ছা করে, যে হ্যাঁ, আমার দেশে চেইঞ্জ হচ্ছে, মুভ হচ্ছে, দেশ এগোচ্ছে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: সেখানে তো বলা হচ্ছে যে কোয়ালিটি অব লিডারশিপ, যেটা সেই লিডারশিপ তো বাংলাদেশে এখনো ডেভলপ করেনি।
তারেক রহমান: করবে। করেনি, করবে। তাদের দেশে তো তাদের দেশের নেতাদের মধ্যে থেকেই লিডারশিপ ডেভলপ করেছে, কোয়ালিটি লিডারশিপ, আমাদেরও করবে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আপনি কি আশাবাদী যে এইরকম নেতৃত্ব গড়ে উঠবে?
তারেক রহমান: অবশ্যই
মতিউর রহমান চৌধুরী: এটা খুব তাড়াতাড়ি? না আরো সময় লাগবে?
তারেক রহমান: আমি তো মনে করি, বোধহয় তৈরি হওয়া শুরু হয়ে গেছে। কারণ দেখেন এই যে বিফোর… মানে ৯১ সাল থেকে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রাটা শুরু হয়েছে। তার আগে ৯-১০ বছর আন্দোলন হয়েছে, অনেক কিছু হয়েছে। কিন্তু একটা প্রসেসের মধ্যে এসেছে, এখন আস্তে আস্তে এগোচ্ছে। গণতন্ত্রটা বা গণতন্ত্রের যে বেইজটা, আস্তে আস্তে শক্তিশালী হচ্ছে, এগোচ্ছে জিনিসটা। কাজেই সবকিছুই কিন্তু এরকম শুরু হবে, প্রসেস শুরু হবে। আমি মনে করি ভালো লিডারশিপের প্রসেস শুরু হয়েছে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: কিন্তু আমাদের যে নির্বাচনি পদ্ধতি, সেটা তো সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতিতে ভরা। তার কারণটা হচ্ছে, যার টাকা আছে, যার কালো টাকা আছে, সে এমপি হতে পারছে।
তারেক রহমান: আপনি তো একটু আগে বললেন যে, বিগত নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: না, নিরপেক্ষ হয়েছে, কিন্তু নির্বাচনে যে প্রভাব বিস্তার করার, যে টাকাটা প্রভাব বিস্তার করে, তা অস্বীকার করার কোনো পথ নাই।
তারেক রহমান: না।
মতিউর রহমান চৌধুরী: তো, সেটা বন্ধ করতে না পারলে তো কোয়ালিটি লিডারশিপ হবে না।
তারেক রহমান: সেটা তো কোনো আইন করে বা জোর করে বন্ধ করা যাবে না। এটা হচ্ছে যে ইলেকশন যত হবে, ইলেকশন যত হবে, পাঁচ বছর পর পর ইলেকশন হবে, দেশের মানুষ অভ্যস্ত হবে, তখন কিন্তু দেশের মানুষ কনশাস হয়ে যাবে, মানুষ সচেতন হয়ে যাবে, যে একচুয়ালি এগুলো, কে তাদের জন্য কী বলছে, বা কী করতে চাচ্ছে। মানুষ যত কনশাস হবে, এই জিনিসগুলো কিন্তু আস্তে আস্তে সরে যাবে। এক সময় হয়ত খুব বেশি ছিল, এখন কিন্তু কমে এসেছে। কারণ নির্বাচন না করি, কিন্তু নির্বাচনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে তো জড়িত, আমি তো দেখেছি। আমার যেটা ব্যক্তিগত এক্সপেরিয়েন্স, সেটা হচ্ছে যে, এগুলো জিনিস কিন্তু আস্তে আস্তে আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। পেশী বলেন, টাকা পয়সা বলেন, মানে মাসল বলেন, টাকা পয়সা বলেন, বা ভয় ভীতি, এগুলো কিন্তু কমে যাচ্ছে। মানুষ কিন্তু এখন কনশাস হয়ে যাচ্ছে। তারা কিন্তু চিন্তা করে। আমরা যত যাই বলি না কেন, গ্রামের মানুষ কিন্তু, বা মফস্বলের মানুষ, তারা কিন্তু চিন্তা করে। আপনি কী বললেন আজকে রাজনীতিবিদ হিসেবে, কী বলতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য কী করতে চাচ্ছেন, আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, এগুলো কিন্তু তারা চিন্তা করে। শুধু মাসল বা ভয় ভীতি বা টাকা পয়সা কিন্তু এখন…।
মতিউর রহমান চৌধুরী: তার মানে মানুষের মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
তারেক রহমান: ইয়েস।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আগামী নির্বাচনে বিএনপি কেমন ফল করবে বলে আপনার ধারণা?
তারেক রহমান: আমরা যদি ভালো করতে পারি, অন্তত মানুষের সামনে যদি এতটুকু প্রমাণ করতে পারি, দেশের মানুষের সামনে, অন্তত ভালো করার জন্য চেষ্টা করছি আমরা, আমাদের আন্তরিকতাটা, সৎ আন্তরিকতাটা যদি প্রমাণ করতে পারি, ইনশাআল্লাহ ভালো করব।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আমাদের যদি আরো সম্পদ না বাড়ানো যায়, তাহলে কী করে আপনি ভবিষ্যতের, আজকে যেটা আপনার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, বলছেন, বা সবাই বলছে যে, বাংলাদেশের একটা বিরাট একটা পরিবর্তন হয়ে যাবে মানুষের, এটা কি সম্ভব, মানুষের সম্পদ তো খুবই লিমিটেড, সীমিত।
তারেক রহমান: সম্পদ লিমিটেড, সম্পদ তো বাড়ানো যায়। আমরা সবাই মিলে যদি চেষ্টা করি, আমরা সবাই মিলে যদি কাজ করি, আমি একটু আগে কথা প্রসঙ্গে যেটা বললাম, অন্তত যার যতটুকু কাজ, ততটুকু যদি আমরা সিনসিয়ারলি করি, ওই আট ঘণ্টা অফিস, আট ঘণ্টা অফিসে যদি, যতটুকু কম সময় সম্ভব ওয়েস্ট করে বাকি সময়টা সত্যিকারভাবে সিনসিয়ারলি যদি, তার যেটা দায়িত্ব সেটা পালন করি, তাহলে অবশ্যই সম্ভব। সম্পদ বাড়ানো সম্ভব, সংগঠিত করা সম্ভব, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
মতিউর রহমান চৌধুরী: একটা প্রশ্ন না করলেই নয়, কারণটা হচ্ছে যখন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়, পরবর্তী পর্যায়ে বলা হচ্ছে যে ৬০ সদস্যের যে মন্ত্রিসভা হয়, তাতে আপনার অনেকখানি ভূমিকা ছিল।
তারেক রহমান: ঠিক আছে। আমার বিবেক বিবেচনা দিয়ে আমি মনে করছিলাম যে আমার দলের এই নেতাটা যদি মন্ত্রিসভায় স্থান পায়, তাহলে হয়তো ভালো করবে। সে ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ হিসেবে আমিও মতামত দিতে পারি। আমার যদি গ্রাম পর্যায়ে একজন নেতা বা একজন কর্মী যদি বলতে পারে– ভাই অমুক লোকটা মন্ত্রী হলে হয়তো ভালো হবে। সে ক্ষেত্রে তো স্বাভাবিকভাবেই আমিও বলতে পারি, এটা আমার রাইট, তো এটা আমার আমার দলের একজন…আজ হয়ত দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আমি, কিন্তু সে সময় আমি দলের মেম্বার ছিলাম। এবং মেম্বার হিসেবে আমার বলার রাইট তো অফকোর্স থাকতেই পারে।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আপনি প্রায়ই দেখি গ্রামে গঞ্জে যান, কয়দিন আগে মুক্তাগাছায় গেলেন, এর আগে বগুড়া বিভিন্ন গ্রামে যাচ্ছেন; সফল মানুষদেরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এটা কী চিন্তা থেকে আপনি করছেন?
তারেক রহমান: এটা দুটো চিন্তা থেকে একচুয়ালি। আমি পার্সোনালি যেটা বিশ্বাস করি, আমরা যে বলি– কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ। কৃষি প্রধান দেশ হলে আমাদের কৃষিটাকে এনরিচ করতে হবে; রিচ করতে হবে কৃষিটাকে। এইটা একটা উদ্দেশ্য আছে। মানুষকে এনকারেজ করা যে, জায়গা যেটা আছে, সেটা ফেলে যাতে না রাখে, যেভাবে হোক। সেটা সে, যেমন গ্রামে অনেক ঘরবাড়ি, অনেক বাড়ি আছে, যেখানে সামনে কিছু জায়গা খালি থাকে। সেখানে সে পরিবারের সদস্যরা হাঁস-মুরগির চাষ করতে পারে, শাকসবজি করতে পারে। সেটাতে তার পরিবারের অভাব কিছুটা হলেও দূর হবে, তার বাড়তি ইনকাম হবে, সে পরিবারের নিজের ব্যবহারের জন্যও ব্যবহার করতে পারবে। নিজের জন্য ব্যবহার করতে পারবে। এইটা একটা দিক আছে। আর আরেকটি দিক হচ্ছে যে এই যে, আপনি বললেন যে সম্পদ কম, দেশে জনসংখ্যা এখন অনেক বেশি। এই জনসংখ্যাটা তো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিন্তু এদেরকে তো আমার প্রোডাক্টিভিটিতে নিয়ে আসতে হবে। মানে এদের দিয়ে যাতে প্রোডাক্টিভিটি বাড়ে, এইটা তো চেষ্টা করতে হবে। সেজন্য এই সফল মানুষগুলোকে দিয়ে আমি, যারা এখনো সফলতা পায়নি বা যারা বেকার বা ফ্রাস্ট্রেটেড, এই মানুষগুলোকে আমি চেষ্টা করি এনকারেজ করার জন্য। যে ওই লোকটা যখন পেরেছে, ও বেকার ছিল তোমার মতন এক সময়, কিন্তু ও ওর যা ছিল তা দিয়েই ও শুরু করে আজকে বাড়াতে পেরেছে। ওর সম্পদ থেকে আরম্ভ করে ওর সবকিছু বাড়াতে পেরেছে। ও একটা সচ্ছল অবস্থানে গিয়েছে। কাজেই ও পারলে তুমি পারবে না কেন? একই দেশের মানুষ তো তুমি; কাজেই ও যদি পারে, তুমিও পারবে। সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা আমার; যতটুকু আমার পক্ষে সম্ভব এনকারেজ করা।
মতিউর রহমান চৌধুরী: আপনি যেটা বলছেন যে মানুষকে স্বাবলম্বী হতে চাওয়ার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশে আসলে কোনো ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন তো হচ্ছে না; শিল্পায়ন হচ্ছে না। শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে খুব কম।
তারেক রহমান: হচ্ছে, অবভিয়াসলি হচ্ছে, কেন হচ্ছে না?
মতিউর রহমান চৌধুরী: কিন্তু যে তুলনায় হওয়া উচিত ছিল সেরকম হচ্ছে না। যে কারণে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ যে পদ্ধতিতে বা যেভাবে বেকারদেরকে কর্মসংস্থানের চেষ্টা করা হচ্ছে, তা তো খুব সীমিত, কারণ অনেক বেশি লেখাপড়া জানা ছেলেরা আজকাল বেকার।
তারেক রহমান: সেজন্যই তো বলছি যে শুধু একটা সেক্টর দিয়ে তো আপনি সবাইকে প্রোভাইড করতে পারবেন না, একটা সেক্টর দিয়ে প্রোভাইড করতে পারবেন না। ইন্ডাস্ট্রি যেরকম একটা বিশাল সেক্টর, একই সাথে কৃষি কিন্তু আরো বড়, আরো বড় সেক্টর। কাজেই এখানে কিন্তু আপনি আরো অধিক সংখ্যক লোককে প্রোভাইড করতে পারবেন। আমাদের দেশে বহু ইন্ডাস্ট্রি আছে, যেগুলোর বহু প্রোডাক্ট বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, কিন্তু এগ্রিকালচার সেক্টর থেকে কিন্তু এখনো রপ্তানি হচ্ছে না, যেটার হিউজ একটা প্রসপেক্ট রয়ে গেছে কিন্তু, সম্ভাবনা রয়ে গেছে। কাজেই আজকে যদি আমরা সবাই মিলে এইটা থেকে আমরা আস্তে এক্সপোর্ট শুরু করতে পারি, তাহলে আপনি চিন্তা করে দেখেন, কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারব আমরা? কাজেই আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের সরকার চেষ্টা করছে, আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা চেষ্টা করছি। আমি মনে করি যে রাজনৈতিক দলের একচুয়ালি কাজ হচ্ছে কিন্তু মানুষকে সচেতন করা, মানুষকে পথ দেখানো। আমাদের সামনে একটি সুন্দর সময় এবং সুন্দর দেশ অপেক্ষা করছে, আমরা যদি সবাই চেষ্টা করি, সবাই আন্তরিক হই, সবাই অতীতের ভেদাভেদগুলো ভুলে গিয়ে আমরা যদি একসাথে কাজ করি, নিশ্চয় আমরা ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য একটি সুন্দর দেশ গড়ে তুলতে পারব।