দীর্ঘ আকাঙ্খিত জাতীয় নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৬। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দু'দিন পর মনোনয়ন পত্র জমাদান। কিন্তু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত লেভেল প্লেইয়িং ফিল্ড নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। জন্ম নিচ্ছে নানা প্রশ্ন। অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে তড়িৎ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেকোন মূল্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
প্রশাসনের সকল পর্যায় থেকে একটি দলের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আনুগত্য শুরু থেকেই দৃষ্টিকটু ছিল। উনাদের ইচ্ছার বিরুদ্বে সরকার যেন অসহায়। জুলাই বিপ্লব উত্তর নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর মানুষগুলো নীরবে অনেক বিষ হজম করেছে শুধুমাত্র একটি সুষ্টু নির্বাচনের আশায়। জনগনের আস্থার শেষ ঠিকানা নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনুছ। চলমান শতাব্দীর বিস্ময়কর জুলাই বিপ্লবে হাজারো সন্তানের রক্তস্রোতের উপর দাঁড়ানো দেশবাসীর প্রতি অন্তত তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না।
কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনা প্রবাহ বিশ্বাসের ভীত নাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রথম আলোর ফরমায়েশী জরীপের সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সম্পাদকের অগ্রিম প্রধানমন্ত্রী ঘোষণায় ২০০৭ এর ১/১১ এবং ২০০৮ এর ভারতীয় নীল নকশার নির্বাচন মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারন এসবের অনুঘটক উত্তরপাড়ার মুখপাত্রের ভূমিকায় তিনারাই ছিলেন। তার নিজের স্বীকারোক্তি এবং প্রণব মুখার্জির লেখায় দালিলিক প্রমান সাবিত হয়ে আছে।
এমনকি পতিত ফ্যাসিবাদী খুনী হাসিনার শেষদিন পর্যন্ত ভ্যানগার্ড -এর ভূমিকা পালনকারীদের বিএনপির ব্যানারে হঠাৎ লাইম লাইটে চলে আসা সত্যিই উদ্বেগজনক। মতি, মা আলম, এ আজাদ ছাড়াও এক যোগে প্রায় সকল মিডিয়ার একক দলীয় মুখপাত্রের আচরনে সম্মিলিত ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যায়। সর্বোপরি শহীদ ওসমান হাদী হত্যার বিচার নিয়ে সরকারের স্পষ্ট নিস্পৃহতায় ধৈর্য্যের বাধ ভাঙ্গার উপক্রম হয়ে উঠছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা সমূহের তৎপরতা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে।
প্রসঙ্গত বলা দরকার ষড়যন্ত্রের এই জালের সূচনা সেই ৩রা আগস্ট ২০২৪ থেকে দৃশ্যমান রয়েছে। শেখ হাসিনাকে ঠিকাতে না পেরে সেকেন্ড অপশনের শুরু কিন্ত তখন থেকেই। কিছু মুখ সামনে আনা শুরু হয় যাদের দিয়ে আজ অবদি অন্তর্বর্তী সরকারের লাগাম ধরে রাখা হয়েছে। সকল ভুজবাজী কাণ্ডকারখানার উৎস এখানেই। প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেয়ার দুদিন আগে রহস্যজনক নিয়োগ হয় এটর্নি জেনারেল ও আইজিপি। যে দু'জনই বিএনপির (?)। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন, বিচারপতি ও পিপি নিয়োগ সহ সকল ক্ষেত্রে ৯০ থেকে ৯৫% একই ঘরানার। অথচ কাল্পনিক রিউমার ছড়ানো হয় অন্যদলের প্রতি। শুধ তাই নয়, সাম্প্রতিক ডিসি, এসপি , ইউএনও সহ গুরুত্বপূর্ণ বদলিতেও একই দলের জনৈক ব্যাক্তির তালিকা ধরে হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের নিম্নস্তর পর্যন্ত নির্দিষ্ট ম্যাসেজ পৌঁছে যাওয়ায় সেই দলটি ব্যতিরেখে অন্যদের প্রতি ব্যাবহারে দুঃখজনক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে।
২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তথাকথিত নির্বাচনী অভিজ্ঞতা ছাড়াও মিশর আর পাকিস্তানের নজির সামনে হয়তো রাখছেন সকল কুশীলবরা। কিন্তু ভুল করছেন ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবের গভীরতা অনুধাবনে। সামান্য নজির শহীদ ওসমান হাদীর জানাযা, আবালবৃদ্ধ্বনিতার অবিরাম অশ্রু বিসর্জন ও বিচারের দাবিতে সোচ্ছার অবস্থান । সাধারণ জনগনের এ অভূতপূর্ব পরিবর্তনের শক্তি ও চেতনায় ধরাশায়ী হয়ে সদলবলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন লেডি হিটলার। একই ভুলে রয়েছেন বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত তথা ওই নির্দিষ্ট দলটির নেতৃত্ব সহ পেটোয়া বাহিনী।
শহীদ হাদী হত্যার বিচার নিয়ে সরকারের ভূমিকা রহস্যজনক। জানাজায় প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে বিচারের প্রসঙ্গে একটি শব্দ নেই। দিনে দুপুরে রাজপথে জনসমক্ষে গুলি করে কয়েক ঘন্টা রাজধানীতে অবস্থান করে খুনী নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তার ঠিকির খোঁজ নেই। মিডিয়া যেন পিন পতন নীরবতায়। স্পষ্টত: নাটাই কোথা হতে ঘোরানো হচ্ছে। সবকিছুই জনগণকে বিক্ষুব্দ করে তুলছে। - হুসে ফিরে আসতে হবে সকলকে। অন্তর্বর্তী সরকার, প্রশাসনের সকল কর্তাবৃন্দ ও ক্ষমতা পিপাসু রাজনৈতিক দল একই বিন্দুতে মিলিত হতে হবে। আর তা হচ্ছে অবাধ, সুষ্ট ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এজন্য এখনই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং শহীদ হাদীর খুনী চক্রের গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিতকরণ। উল্টা পাল্টা চিন্তা পরিহার করে সরল সঠিক পথে চলতে হবে। নচেৎ আবারো জুলাই অপরিহার্য হয়ে উঠবে। কারন নিজেদের অস্তিত্ব তথা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অন্য কোন বিকল্প যে আর নেই।
-সিরাজুল ইসলাম শাহীন