Image description
 

প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট, উদীচী ও নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবীরের ওপর হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে পরিকল্পিত সন্ত্রাসী আক্রমণ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে’ আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশের আগে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

বিক্ষোভপূর্ব সমাবেশে আয়োজকরা সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার, দেশজুড়ে সংঘটিত প্রতিটি ‘মব ও সন্ত্রাসী হামলার’ তদন্ত ও বিচার, ‘সহিংসতায় উসকানিদাতাদের’ অনতিবিলম্বে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবিসহ মোট ৭টি দাবি উপস্থাপন করেন।

 

সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ঐকমত্য কমিশনের জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে, ‘নতুন সভ্যতার’ কথা বলেছিলেন বলে উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, যে নৃশংসতা আমরা দেখলাম, মাসের পর মাস দেখছি, বিশেষত ১৮-১৯ তারিখে যে নৃশংসতা আমরা দেখলাম, এটাই কি মুহাম্মদ ইউনূসের সেই সভ্যতারই নমুনা, এই প্রশ্ন আজ সবাইকে করতে হবে।

 
 

আনু মোহাম্মদ বলেন, এই আক্রমণগুলো উদ্দেশ্যহীন কিছু যুবকের উচ্ছৃঙ্খলতা নয়। বরং এটি ছিল সুপরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা। প্রতিটি ঘটনায় আক্রমণকারীর সংখ্যা বেশি ছিল না। তারা প্রকাশ্যে আগুন লাগিয়েছে, সম্পদ ধ্বংস করেছে এবং মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে আর সেই সময় সামনে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত থাকলেও তারা নিষ্ক্রিয় ছিল।

 

তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ের পুলিশ বা সেনাসদস্যদের আলাদাভাবে দোষারোপ করা যায় না, কারণ তারা ওপরের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেন।

আনু মোহাম্মদ প্রশ্ন করেন, উপর থেকে নির্দেশ আসে নাই কেন? সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেন তারা হস্তক্ষেপ করল না? কেন পুলিশ, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কেন নীরব থাকল? এই নিষ্ক্রিয়তা এমন একটি চিত্র তৈরি করেছে, যেন রাষ্ট্র ও সরকার পরোক্ষভাবে এই ধ্বংসযজ্ঞে পৃষ্ঠপোষকতার ভূমিকায় নেমেছে।

ঘটনাগুলো অবিশ্বাস্য হলেও আকস্মিক নয় বলে মন্তব্য করেন আনু মোহাম্মদ। তিনি বলেন, গত কয়েক মাস ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক বিভিন্ন স্থানে আক্রমণের আহ্বান ও উসকানি বহুদিন ধরেই প্রকাশ্যে দেওয়া হচ্ছিল। এসব তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার অজানা থাকার কথা নয়। দেশি-বিদেশি উসকানিদাতারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আক্রমণের ডাক দিয়ে আসছিল।

আনু মোহাম্মদের মতে, যাদের উপর আক্রমণ হয়েছে তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং বাংলাদেশের ইতিহাসজুড়ে শোষণ, নিপীড়ন, বৈষম্য ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিবর্গের উপরে হামলা হয়েছে।

তিনি বলেন, যাদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে, তাদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তারা শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। শুধু তাই নয়, তারা বাংলাদেশের ইতিহাসজুড়ে শোষণ, নিপীড়ন, বৈষম্য ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। তারা মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি। বৈষম্যহীন ও মানবিক বাংলাদেশের যে প্রত্যাশা তা যারা ধারণ ও তুলে ধরেন, মূলত তারাই এই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু।

তাদের ৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- শরিফ ওসমান হাদি, দীপু চন্দ্র দাশ ও আয়শা আক্তার হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা। উদীচী, ছায়ানট, প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ দেশজুড়ে সংঘটিত প্রতিটি মব ও সন্ত্রাসী হামলার তদন্ত ও বিচার করা।

এছাড়া, সহিংসতায় উসকানিদাতাদের অনতিবিলম্বে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা। মতপ্রকাশের অধিকার এবং জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সকল সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

দাবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, জনগণের নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণ এবং ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন।

সমাবেশ শেষে তারা শাহবাগ থেকে একটি মিছিল বের করে রাজু ভাস্কর্য, নীলক্ষেত ও কাঁটাবন হয়ে পুনরায় শাহবাগ অতিক্রম করে উদীচী কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির সমাপনীর ঘোষণা দেন।