Image description
 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র **শহীদ শরিফ ওসমান হাদি** ছিলেন একাধারে মেধাবী, সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনৈতিক সংগঠক। গত ১২ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হলেও বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর শাহাদাতের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে তাঁর উজ্জ্বল একাডেমিক ফলাফল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর
জানা গেছে, শরিফ ওসমান হাদি ২০১০–১১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।  অনার্সে অর্জন করেন ৩.৪৯ সিজিপিএ, মাস্টার্সে পান ৩.৫২ সিজিপিএ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও তিনি ছিলেন মেধাবী ও সক্রিয় শিক্ষার্থী।

মাদ্রাসা শিক্ষায়ও কৃতিত্ব
বিশ্ববিদ্যালয়ের আগেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন হাদি। ঝালকাঠির এনএস কামিল মাদ্রাসা থেকে— দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৭৫, আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন তিনি।

বিতর্ক, আবৃত্তি ও বক্তৃতায় জাতীয় পুরস্কার
পড়াশোনার পাশাপাশি হাদি ছিলেন একজন দক্ষ বিতার্কিক। আবৃত্তি, বিতর্ক ও উপস্থিত বক্তৃতায় একাধিকবার জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।

ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা
অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় বাংলাদেশ পরিচালনার স্বপ্ন নিয়ে২০২৪ সালের আগস্টে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। তরুণ সমাজকে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে গড়ে তোলেন ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার।

নাম ও পরিচয়ের গল্প
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি পরিচিত হন শরিফ ওসমান হাদি নামে। তবে তাঁর প্রকৃত নাম ওসমান গনি। এর আগে ‘সীমান্ত শরিফ’ নামে কবিতা লিখতেন তিনি। প্রয়াত পিতা মাওলানা শরিফ আব্দুল হাদির নামানুসারেই নিজের নামের সঙ্গে ‘শরিফ’ ও ‘হাদি’ যুক্ত করেন।

শিক্ষক পরিবারে জন্ম
শিক্ষক পরিবারের সন্তান শরিফ ওসমান হাদির জন্ম ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি। তাঁর গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি পৌরসভার খাসমহল এলাকায়। পিতা প্রয়াত মাওলানা শরিফ আব্দুল হাদি ছিলেন নলছিটি সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ ও খাসমহল জামে মসজিদের পেশ ইমাম।
মাতা তাসলিমা হাদিগৃহিণী।

ভাই-বোনদের পরিচয়
৬ ভাই-বোনের মধ্যে- বড় ভাই (দ্বিতীয়) ড. আবু বকর ছিদ্দিক বরিশালের বাঘিয়া আল আমিন কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, চতুর্থ ভাই-বোন মাছুমা নলছিটি ইসলামি সিনিয়র মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক, ভাই ওমর বিন হাদি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে সুগন্ধা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজমের সিইও, বড় বোন ফাতেমা বেগম ও তৃতীয় ইয়াসমিন আক্তার গৃহিণী

ব্যক্তিগত জীবন
হাদির স্ত্রী রাবেয়া ইসলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তাঁদের একটি ৯ মাস বয়সী ছেলে সন্তান রয়েছে।

শিক্ষকতা ও পেশাগত জীবন
সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তিনি রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া সাইফুর’স কোচিংয়ে সিনিয়র আইইএলটিএস ট্রেইনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৩ সালে সেখানে যোগ দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হয়েও ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।