Image description

চুরি-ছিনতাইয়ের মাধ্যমে অপরাধ জগতে পা রাখা শহিদুল ইসলাম ওরফে বুইস্যা চাঁদা না পেলেই গুলি ছুড়তেন। তার নেতৃত্বে ৩০ সদস্যের একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে ওঠে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ এলাকায়। কোমরে অস্ত্র ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াতেন, গড়ে তুলেছিলেন গোপন টর্চার সেলও। গত শনিবার রাতে নগরের দুই নম্বর গেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৭।

র‌্যাব-৭ জানায়, শহিদুল ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সমাবেশে দলবল নিয়ে অংশ নেওয়ার ছবি-ভিডিও রয়েছে তার। নিজেকে নগর ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেতা পরিচয় দিলেও কোনো পদে ছিলেন না।

পুলিশ বলছে, শহিদুল ইসলাম ওরফে বুইস্যা প্রথমে ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েন। পরে মাদক কারবারে নামেন। চান্দগাঁও-পাঁচলাইশে কিশোর গ্যাংয়ের নেতা হিসেবে পরিচিতি পান। তার বিরুদ্ধে ছিনতাই, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, মাদকসহ অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে। চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার অভিযোগও অসংখ্য। মাদক বিক্রি ও চাঁদাবাজির টাকা দ্রুত গোনার জন্য টাকা গণনার মেশিনও সঙ্গে রাখতেন তিনি।

র‌্যাব-৭ কর্মকর্তা এ আর এম মোজাফফর হোসাইন বলেন, চাঁদা না দিলেই লোকজনকে গুলি করতেন তারা। গত ৪ অক্টোবর তার সহযোগী মুন্না পাঁচলাইশ বাদুড়তলায় একটি গ্যারেজের সামনে গুলি ছোড়েন। ওই ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিজয় চৌধুরীর গ্যারেজের সামনে এসে হুমকি দিয়ে পিস্তল বের করে গুলি করছেন মুন্না। গ্যারেজ মালিকসহ স্থানীয়রা ‘ডাকাত’ বলে চিৎকার করলে হামলারকারীলা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়।

এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর চান্দগাঁও থানার পাশে এক গ্যারেজে চাঁদা না পেয়ে গুলি করেন শহিদুল। ওই গ্যারেজের মালিক মারুফ খান জানান, প্রথমে ২০ লাখ, পরে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। চাঁদা না দেওয়ায় গুলি করা হয়।

শহিদুল চান্দগাঁও-পাঁচলাইশে ৩০ জনের এটি বাহিনী গড়ে তোলেন। সহযোগীদের মধ্যে আইয়ুব আলী (১৮ মামলা), ইদ্রিস (৯ মামলা), ইয়াসিন (৫ মামলা), শিবু, রাকিব, সবুজ, রাসেল, ইমন, কামরুল, হাফিজুল, মুন্না, হাবিব, মুরাদ, আজিম, শাহাব উদ্দিন, হিরু, শাকিব, বোরহান, মারুফ, আল আমিন, মিজানুর, রোকন, আলী আহাম্মদ, শান্ত মজুমদার, অন্তর, বিরো পাল, রাহাত, ফরহাদসহ অনেকেই।

গত ৯ অক্টোবর তার তিন সহযোগীর কাছ থেকে ১৩টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৩টি ম্যাগাজিন ও ৫৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়। ২০ জুলাই আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ছাড়া চান্দগাঁও বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের একটি ভবনের তৃতীয় তলার বাসাকে ‘টর্চার সেল’ বানিয়েছিলেন শহিদুল।। গত ২১ জুলাই সেখানে অভিযান চালিয়ে শহিদুলের ১১ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে সময় উদ্ধার হয় দেশি অস্ত্র, গুলি, গুলির খোসা, প্লায়ার্স, রামদা, সিসিটিভি ক্যামেরা। চান্দগাঁও থানা থেকে লুট হওয়া গুলি ও খোসাও পাওয়া যায়।

তৎকালীন ওসি আফতাব উদ্দিন বলেন, চাঁদা না দেওয়া ব্যক্তিদের সেখানে নিয়ে নির্যাতন করা হতো। ১০ অক্টোবর শুলকবহরে অভিযানে তিন সহযোগী গ্রেপ্তার হন। তাদের তথ্যে মাদক, অস্ত্র ও টাকা গণনার যন্ত্র উদ্ধার হয়।

বুইস্যা বাহিনীর ত্রাসে আতঙ্কিত ছিল চান্দগাঁও-পাঁচলাইশের বাসিন্দারা। অবশ্য র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে বাহিনীটি এখন ছত্রভঙ্গ। পুলিশ বলছে, অপরাধীদের সমূলে উৎপাটন করা হবে।