Image description
ভোটার হবেন ২৭শে ডিসেম্বর

অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে দীর্ঘ ১৭ বছরের। লন্ডনের নির্বাসিত জীবন শেষে আর মাত্র একদিন পরই দেশের মাটিতে পা রাখবেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন তিনি। তাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইটটি সিলেট হয়ে ঢাকায় নামবে। দলের এই কাণ্ডারিকে বরণ করতে বর্ণাঢ্য আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বিএনপিতে। রাজধানীর পূর্বাচলের তিনশ’ ফিট সড়কে সংবর্ধনা দিতে বড় সমাবেশের আয়োজন করছে দলটি। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে সমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ। গঠন করা হয়েছে শৃঙ্খলা কমিটি। সাজানো হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক টিম। জেলায় জেলায় চলছে প্রস্তুতি সভা, স্বাগত মিছিল। ভাড়া করা হচ্ছে বাস, ট্রাক, মাইক্রো। বুকিং দেয়া হয়েছে দেশের সাতটি রুটের বিশেষ ট্রেন। 

বিএনপি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিমানবন্দরে অবতরণের পর দলের সিনিয়র নেতারা তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন। এরপর এসএসএফ’র নিরাপত্তায় বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কুড়িল বিশ্বরোড সংলগ্ন ৩০০ ফিট এলাকায় নির্মিত সংবর্ধনা মঞ্চে উঠবেন তিনি। সেখানে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন। এরপর সমাবেশস্থল থেকে সরাসরি যাবেন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসুস্থ মা বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে। সেখানে মায়ের শয্যাপাশে কিছু সময় কাটিয়ে গুলশানে মায়ের বাসায় ফিরবেন। এদিকে তারেক রহমানকে বরণ করতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে সদস্য সচিব করে একটি অভ্যর্থনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্বে একাধিক প্রস্তুতি সভা হয়েছে। গত রাতে গুলশান কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা হয়েছে। সভায় শৃঙ্খলা টিম, স্বেচ্ছাসেবক টিম,  মেডিকেল টিম, ট্রাফিকিং টিম গঠনের কথা রয়েছে। এদিকে বিএনপি’র পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও পৃথকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিলও করেছেন। রঙ-বেরঙের টি-শার্ট ও ক্যাপ এবং ব্যানার-ফেস্টুনও তৈরি করা হচ্ছে। 

তিনশ’ ফিটে চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে ৩০০ ফিট এলাকা সংলগ্ন মহাসড়কে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশাল সংবর্ধনা মঞ্চ। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রমে ব্যস্ত শ্রমিকরা। রোববার দুপুর থেকেই মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ৪৮ ফিট বাই ৩৬ ফিট মঞ্চ। সংবর্ধনা কমিটির সদস্যরা দিন-রাত তদারকি করে আয়োজনকে পূর্ণতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং মহানগরের শীর্ষ নেতারা ক্ষণে ক্ষণে এসে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। গতকাল রাজধানীর ৩০০ ফিটে তারেক রহমানের জন্য তৈরি মঞ্চ ও আয়োজনের প্রস্তুতি দেখতে আসেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি আমিনুল হকসহ সিনিয়র নেতারা। এই বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা আয়োজনের জন্য ইতিমধ্যে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক লিখিত অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। অনুমতিপত্রটি গত রোববার রাতে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সমাবেশের ভেন্যু পরিদর্শনে গিয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা চলছে। ইতিমধ্যে একটা জাগরণ তৈরি হয়েছে। সেই জাগরণের প্রতিফলন ঘটবে আশা করছি। লাখো মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমাগম ঘটবে। তিনি আরও বলেন, আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা করছি। বাকিটা সরকার দেখবে।

এদিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অভ্যর্থনা কমিটির সদস্য ও বিএনপি মনোনীত ঢাকা-৪ আসনের প্রার্থী তানভীর আহমেদ রবিন বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন। ঢাকা মহানগরসহ প্রতিটি জেলার নেতাকর্মীদের সমন্বয়ের জন্য আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, লাখ লাখ নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে প্রিয় নেতাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।

বিভিন্ন রুটে ১০টি ট্রেন পাচ্ছে বিএনপি
বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় যাতায়াতের উদ্দেশ্যে বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচ বরাদ্দ করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। অন্যদিকে সেদিনের বিশেষ ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে নিয়মিত চলাচলকারী তিনটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করেছে রেলওয়ে। গতকাল সোমবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপি’র কর্মী ও সমর্থকদের যাতায়াতের জন্য ১০টি রুটে স্পেশাল (বিশেষ) ট্রেন পরিচালনা করা হবে এবং নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে। এ কারণে স্বল্প দূরত্বের রাজবাড়ী কমিউটার (রাজবাড়ী-পোড়াদহ), ঢালারচর এক্সপ্রেস (পাবনা-রাজশাহী) এবং রোহনপুর কমিউটার (রোহনপুর-রাজশাহী) ট্রেনের আগামী ২৫শে ডিসেম্বরের যাত্রা স্থগিত রাখা হবে। ট্রেনগুলো একদিনের জন্য যাত্রা স্থগিত করায় ওই রুটের যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধার কারণে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। বিএনপি’র চাহিদার ভিত্তিতে কক্সবাজার-ঢাকা-কক্সবাজার, জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা-জামালপুর, টাঙ্গাইল-ঢাকা-টাঙ্গাইল, ভৈরববাজার-নরসিংদী-ঢাকা-নরসিংদী-ভৈরববাজার, জয়দেবপুর-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-জয়দেবপুর (গাজীপুর), পঞ্চগড়-ঢাকা-পঞ্চগড়, খুলনা-ঢাকা-খুলনা, চাটমোহর-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-চাটমোহর, রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী এবং যশোর-ঢাকা-যশোর রুটে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। এ বাবদ রেলওয়ে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব পাবে। বিশেষ ট্রেন এবং অতিরিক্ত কোচে দলীয় নেতাকর্মীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা-২০২৫ প্রতিপালন করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

কঠোর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকবেন তারেক রহমান
দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে কঠোর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকবেন তারেক রহমান। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর নিরাপত্তা প্রটোকল সরবরাহ করা হবে। 
এ ছাড়া পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রায় দুই হাজার সদস্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতাল এবং গুলশান এভিনিউয়ের বাসভবন পর্যন্ত পুরো পথটি নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে। পুলিশের স্পেশাল এস্কর্ট ছাড়াও সাদা পোশাকে ও পোশাকি পুলিশের পাশাপাশি বিএনপি’র নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ‘চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স’ (সিএসএফ) সমন্বিতভাবে এই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২৩শে ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকেই পুলিশের বিশেষ পাহারা শুরু হতে পারে। বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত প্রতিটি থানা এলাকায় পুলিশ মোতায়েন থাকবে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে নতুন করে চেকপোস্ট বসানো হবে। বর্তমানে গুলশান ও বারিধারা এলাকায় যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে তা আরও জোরদার করা হচ্ছে। বিশেষ করে তার বাসভবন ও আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন দেড় শতাধিক পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্য মোতায়েন রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে এই বিষয়ে বৈঠক হয়েছে।

বুলেট প্রুফ গাড়ি প্রস্তুত
তারেক রহমানের ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন একটি বুলেট প্রুফ ‘হার্ড জিপ’ গাড়ি দেশে আনা হয়েছে। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো এলসি ২৫০ মডেলের এই গাড়িটি ইতিমধ্যেই বিএনপি’র নামে নিবন্ধিত হয়েছে। এ ছাড়া তার নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের জন্য বুলেট প্রুফ বাসও দেশে এসেছে। বাসটি রোববার চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়েছে। এটি আজ-কালের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাবে।

সিলেট জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মকসুদ আহমদ মানবজমিনকে বলেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি সভা ও স্বাগত মিছিল করেছি। সিলেট জেলা যুবদলের ২০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবে। ইতিমধ্যে অনেকে ট্রেন, বাস, ফ্লাইটের টিকিট কেটেছেন। অনেকে যাবেন ব্যক্তিগত যানবাহনে। আমরা সংবর্ধনাস্থলে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নেবো। 
ঢাকা মহানগর যুবদল দক্ষিণের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে ইতিমধ্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি সভা করেছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এক লাখ লোক সমাগম করার টার্গেট নিয়েছে। 

তারেক রহমান ভোটার হবেন ২৭শে ডিসেম্বর
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণের জন্য আগামী ২৭শে ডিসেম্বর ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রণয়নের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামী ২৫শে ডিসেম্বর দেশে প্রত্যাবর্তন করবেন। ২৫শে ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। শনিবার ২৭শে ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের অফিস খোলা থাকবে। ওইদিনই ভোটার হওয়া, ভোটার আইডি ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সব কার্যক্রম তিনি সম্পন্ন করবেন।