ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হামলায় নিহত দিপু চন্দ্র দাসের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান। একই সাথে দিপু দাসের স্ত্রী মেগনা রানীকে চাকরী আশ্বাস দেন।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়া কান্দা গ্রামের দিপু দাসের বাড়ি পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসন সাইফুর রহমান।
এসময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ ২৫ হাজার টাকা, শীত বস্ত্র, শুকনো খাবার ও একটি সেলাই মেশিন দিপুর পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়। পাশাপাশি দীপুর স্ত্রীকে চাকরির প্রদানের ঘোষনাও দেন জেলা প্রশাসক। এদিকে দিপুর পরিবারের নিরাপত্তায় ওই বাড়িতে সার্বক্ষনিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান বলেন, নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সহযোগিতাসহ সবসময় তাদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছি।
এসময় তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। কর্মকর্তাগণ দিপুর পরিবারের খোঁজখবর নেন এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
নিহতের বাবা রবি চন্দ্র দাস বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল দিপু। তাকে এভাবে মারা হবে কোনদিন ভাবতেও পারিনি। আমার ছেলের কি দোষ ছিল বলেন? ধর্মনিয়ে কটূক্তি করলে দেশে তো আইন ছিল। সেই আইনে তো বিচার হতো। আমরা গরীব তাই ছেলের জীবন রক্ষা করতে পারিনি। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
নিহতের স্ত্রী মেগনা রানী বলেন, আমার একমাত্র সন্তান বাবা হারা হয়েছে। অভাবের সংসারে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো ভেবে পাচ্ছি না। হত্যার যেনো বিচার হয় রাষ্ট্রের কাছে এটাই চাওয়া।
এদিকে, এখনো থামেনি শোকের মাতম। প্রতিদিনই বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। আর্থিক সহায়তাসহ দেয়া হচ্ছে নানা আশ্বাস। স্বামী ও সন্তান হারানোর বেদনায় পুরো পরিবার যেন শোকে কাতর। পরিবারের একমাত্র উপার্জণক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে শোকের মাতম যেন তাদের পরিবারের এখন নিত্যসঙ্গী।
গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাসকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে উত্তেজিত জনতা। পরে তার মরদেহ বিবস্ত্র করে গাছে ঝুলিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এঘটনায় নিহতের ছোট ভাই অপু দাস ১৯ ডিসেম্বর বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামী করে ভালুকা থানায় মামলা দায়ের করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী এখন পর্যন্ত হত্যাকান্ডে জড়িত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
নিহত দিপু চন্দ্র দাস জেলার তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়া কান্দা গ্রামের রবি চন্দ্র দাসের ছেলে। দুই বছর ধরে ভালুকার জামিরদিয়া পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কোম্পানীতে কাজ করছিলেন।