Image description

খুলনার একাধিক স্বামী পরিত্যক্তা টিকটকার ৩৪ বছর বয়স্ক সুমাইয়া জান্নাত পিয়ার প্রতারণার কবলে পড়ে আমার ১৭ বছরের কিশোর তরিকুজ্জামান বিজয়ের জীবন বিপন্নের পথে। এই মহিলার কাজ হচ্ছে- উঠতি বয়সের ছেলেদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা আদায় করা। টাকা না দিলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। বুধবার খুলনা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন নগরীর খালিশপুর নয়াবাটি এলাকার বাসিন্দা আশাফুজ্জামান চন্দন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে আমার ছেলে তরিকুজ্জামান বিজয়ের এসএসসি পরীক্ষার প্রায় এক মাস আগে পরিচয় হয় সুমাইয়া জান্নাত পিয়ার সঙ্গে। নগরীর ৭নং ঘাট এলাকায় ওই মহিলা মোবাইল ফোনে ছবি তুলে দেয়ার অনুরোধ করলে আমার ছেলে তুলে দেয়। এরপর ওই মহিলা নিজেকে ভারতীয় বাসিন্দা উল্লেখ করে বলে এখানে কাউকে সে চেনে না। তখন বিজয়কে তার মোটরসাইকেলে চড়িয়ে খুলনা শহর ঘুরে দেখানোর অনুরোধের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলে। নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বললেও ওই মহিলার বাড়ি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের মাদ্রাসা গলি রোডে। তার মা রিতা পারভীন ওই হাসপাতালের বাবুর্চি পদে চাকরি করেন। আমার ছেলে এতকিছু জানতো না। এভাবে দিনের পর দিন মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আমার ছেলেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে। একপর্যায়ে আমার ছেলে বিজয় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। ওই মহিলা নিজেও একজন মাদকসেবী। ফলে প্রায় সময়ই আমার ছেলে বাড়িতে থাকতো না।

আশাফুজ্জামান চন্দন বলেন, তখন আমার ছেলের খোঁজ না পেয়ে ২০২৪ সালের ৩১শে মে স্থানীয় থানায় জিডি করি। এ ঘটনার ৬ দিন পর যশোর জেলার মনিরামপুর থেকে ওই মহিলাসহ আমার ছেলেকে উদ্ধার করা হয়। তখন আমার ছেলে স্বাভাবিক না থাকায় দ্রুত খুলনায় এনে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করি। কিছুদিন পর তাকে তাবলীগে পাঠাই। কিন্তু ওই বছরের ২৬শে জুলাই নিরালা মারকাজ মসজিদ থেকে বিজয় নিখোঁজ হয়। ওই সময় দেশের পরিস্থিতি খারাপ থাকায় সোনাডাঙ্গা ও খালিশপুর থানায় গিয়ে পুলিশের কোনো সহযোগিতা পাইনি। তারা লিখিত অভিযোগও গ্রহণ করেনি। ফলে আমার ছেলের সন্ধান চেয়ে ফেসবুকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করি। কয়েকমাস পর ২০২৪ সালের ২৩শে অক্টোবর জানতে পারি বিজয় কুষ্টিয়ার কুমারখালী পান্টি বাজারে পাগলের মতো ঘুরছে। বিজয়কে উদ্ধারের পর জানতে পারি ওই মহিলা বিজয়কে দর্শনায় নিয়ে গিয়ে মাদক পাচার করাতো।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়- পরবর্তীতে ওই মহিলা ফেসবুকে আমার ছেলের নামে একটি ফেইক আইডি খোলে। ‘এমটি বিজয়’ নামের ওই ফেইক আইডি থেকে আমাদের গালিগালাজসহ দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মামলার ভয় দেখায়। একপর্যায়ে ওই বছরের ১০ই অক্টোবর সোনাডাঙ্গা থানায় মিথ্যা ধর্ষণ মামলা করে। ওই মামলায় উল্লেখ করা হয় যে- ওইদিন বেলা সাড়ে ১২টায় আমার ছেলে নাকি ওই মহিলাকে ধর্ষণ করেছে। এজাহারে বলা হয়েছে যে- আমার ছেলে বিজয় ১০০ টাকার দু’টি স্ট্যাম্পে পিয়াকে বিয়ে করে। বিয়েই যদি করে থাকে তাহলে ধর্ষণ মামলা কীভাবে হয়? এই মিথ্যা মামলায় ওই বছরের ৪ঠা নভেম্বর সোনাডাঙ্গা মডেল থানার এসআই খালিদ আমাদের থানায় ডেকে পাাঠায়। তখন বিজয়কে থানা হাজতে ঢুকিয়ে পরেরদিন ৫ নভেম্বর পিয়ার দায়ের করা মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দিয়ে চালান দেয়। পরবর্তীতে রিমান্ডে এনে আমার ছেলেকে মারধর করার হুমকি দিয়ে আমার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়। এরপর ওই মহিলা আরও একটি মামলা করে। এরপর খুলনা জজ কোর্টের লিগ্যাল এইডে অভিযোগ করা হলে তারা আমাদের দুই পক্ষকেই ডেকে কথা বলে। ওই সময় সুমাইয়া জান্নাত পিয়া আর মামলা করবে না বলে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে- সুমাইয়া জান্নাত পিয়ার কথিত বাবা হানিফ মিয়া বাদী হয়ে ২০২৪ সালের ১০ই অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা আদালতে আমার ছেলের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করে। মিথ্যা মামলায় বলা হয় যে, বিদেশে যাওয়ার কথা বলে বিজয় তার কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে ১০ই অক্টোবর। ওই মামলায় ৪ লাখ টাকা নেয়ার সময় দেখানো হয় বেলা দশটা। আবার ধর্ষণ মামলায় দেখোনো হয় ১০ই অক্টোবর বেলা সাড়ে ১২টা। এখন আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে- চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে আড়াই ঘন্টায় খুলনায় এসে ধর্ষণ করা সম্ভব? 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সুমাইয়া জান্নাত পিয়ার মা রিতা পারভীনের একাধিক বিয়ে হয়েছে। আমরা তার মায়ের তিনটি বিয়ের খবর জানতে পেরেছি। এছাড়া সুমাইয়া জান্নাত পিয়ার এ পর্যন্ত ৪টি বিয়ের খবর পাওয়া গেছে। আশরাফুল আলম নামের এক ব্যক্তিকে ২০১৪ সালে বিয়ে করে। এরপর তার কাছ থেকে সহায়-সম্পত্তি আত্মসাৎ করে তালাক দিয়ে আশরাফুলকে জেল খাটায়। এরপর পিয়া বিয়ে করে বয়রা পাাবলিক কলেজের ব্যবসায়ী মানিককে। পরে মানিকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিলে মানিক জীবন বাঁচাতে খুলনা থেকে পালিয়ে যায়। এরপর বিয়ে করে বয়রা এলাকার শিবলুকে। তার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় পেটে বাচ্চা আছে বলে চাপ দিয়ে শিবলুর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর বিয়ে করে টুটপাড়া এলাকার মাদক বিক্রেতা জিতুকে। তাকেও তালাক দেয়। এভাবে একের পর এক বিয়ে করে অর্থকড়ি হাতিয়ে নিয়ে তালাক দিয়ে নতুন মক্কেল ধরে এই আলোচিত সুমাইয়া জান্নাত পিয়া। এই মহিলার দুইটি জন্মসনদ রয়েছে। একটিতে তার জন্মতারিখ রয়েছে ১৯৯৩ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি। অপর জন্মসনদে ২০০৩ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি। জাল-জালিয়াতি করে জন্মসনদ দেখিয়ে একাধিক বিয়ে করে প্রতারণা করে যাচ্ছে।