বিশ্ববাজারে সোনার দাম আকাশচুম্বী হওয়ার পর এবার রূপার দামও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বিবিসি বলছে, গতকাল মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো খোলাবাজারে রুপার দাম আউন্সপ্রতি ৬০ ডলার (৪৫ দশমিক ১০ পাউন্ড) ছাড়িয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ও বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কার কারণে এ বছরের শুরুর দিকে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। সেই ধারাবাহিকতায় এ সপ্তাহেও সোনার দাম বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুদের হার কমলে কিংবা মার্কিন ডলারের মান পড়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা সাধারণত সোনা ও রুপার মতো মূল্যবান ধাতুতে বিনিয়োগ করেন।
আজ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সুদের হার এক-চতুর্থাংশ কমাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইয়াও হি চুয়া বলেন, 'সুদের হার কমলে ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ বা স্বল্পমেয়াদী বন্ড কেনার সুবিধা কমে যায়, ফলে ব্যবসায়ীরা সাধারণত রুপার মতো সম্পদ কেনেন।'
'এতে স্বাভাবিকভাবেই রুপাসহ মূল্যবান সম্পদের দিকে চাহিদা সরে যায়', যোগ করেন তিনি।
বিবিসি বলছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়ার পেছনে তথাকথিত 'নিরাপদ সম্পদে' বিনিয়োগ বৃদ্ধিও একটি প্রধান কারণ।
ওসিবিসি ব্যাংকের বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার ওং বলেন, 'তুলনামূলক সস্তা বিকল্প খুঁজতে গিয়ে সোনার মূল্যবৃদ্ধির "ছিটকে পড়া প্রভাব" হিসেবেও রুপার উত্থানকে দেখা যেতে পারে।'
এ বছর সোনার দাম ৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণে সোনা ক্রয় যার একটি বড় কারণ। একইসঙ্গে এ বছর প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের দামও বেড়েছে।
চাহিদা সরবরাহকে ছাড়িয়ে গেছে
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রযুক্তি খাতের অধিক চাহিদা সরবরাহকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় রুপার মূল্য আরও বেড়েছে।
এর ফলে রুপার দাম এ বছর দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে এবং সোনাসহ অন্যান্য মূল্যবান ধাতুকে পেছনে ফেলেছে।
সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কোসমাস মারিনাকিস বলেন, 'রুপা শুধু বিনিয়োগের সম্পদ নয়, বরং এটি একটি কাঁচামালও এবং আরও বেশি সংখ্যক উৎপাদক এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন।'
সোনা বা তামার চেয়ে রুপা অধিক বিদ্যুৎ পরিবাহী হওয়ায় মূল্যবান এই ধাতুটি বৈদ্যুতিক যান (ইভি) ও সৌর প্যানেলের মতো পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস, ইভির বিক্রি বাড়তে থাকায় রূপার চাহিদা এবং উন্নত ব্যাটারি তৈরিতে ধাতুটির প্রয়োজন আরও বাড়বে।
তবে রুপার সরবরাহ দ্রুত বাড়ানো কঠিন। কারণ রুপা মূলত সিসা, তামা বা সোনার মতো ধাতুর উপজাত হিসেবে খনি থেকে পাওয়া যায়।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র রুপার ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারে, এমন উদ্বেগও রুপার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রে রুপার মজুত বাড়ছে, যার ফলে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র তার মোট রুপার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আমদানি করে, যা উৎপাদন, গহনা এবং বিনিয়োগে ব্যবহৃত হয়।
অধ্যাপক কোসমাস মারিনাকিস বলেন, 'রুপার ঘাটতি রোধে নির্মাতারা দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিতে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, যা বৈশ্বিক বাজারে ধাতুটির দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।'
আগামী মাসগুলোতেও রুপার দাম উচ্চ পর্যায়ে থাকবে বলে জানান তিনি।