বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা ও সীমিত সরকারি সক্ষমতার কারণে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে উঠছে। জাতীয় স্বাস্থ্য হিসাব দেখায় যে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৬৯% জনগণের নিজস্ব পকেট থেকে আসে এবং ৬২% মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবহার করে। ফলে বেসরকারি খাত ইতোমধ্যেই দেশের স্বাস্থ্যসেবার অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। এই বাস্তবতা সামনে রেখে সম্পদ, অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP) অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা—বিশেষত যুক্তরাজ্য, ভারত এবং থাইল্যান্ড—দেখায় যে PPP স্বাস্থ্যসেবাকে প্রসারিত, প্রযুক্তিনির্ভর ও সাশ্রয়ী করতে কার্যকর মডেল হিসেবে কাজ করে। এসব দেশে সরকারি অর্থায়ন, সেবার মান নিয়ন্ত্রণ এবং বেসরকারি দক্ষতার সমন্বয়ে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা, রোগ নির্ণয়, জটিল চিকিৎসা ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশও এসব অভিজ্ঞতা অনুসরণ করে 'স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি' (SSK)-এর মতো স্কিমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা, জটিল চিকিৎসা সেবা PPP-র মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা এবং সেবার মান রক্ষা নিশ্চিত করতে কঠোর চুক্তিভিত্তিক জবাবদিহতা প্রবর্তন করতে পারে।
স্বাস্থ্যখাতকে আমদানি নির্ভরতা থেকে মুক্ত করতে আমাদের সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে, যেমন আমাদের এখন সময় হয়েছে মেডিকেল ডিভাইস ফ্যাক্টরি স্থাপন করা বা অগ্রাধিকার দেয়ার। বর্তমানে, আমরা প্রায় ৯৯% চিকিৎসা সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আমদানি করি, যা স্বাস্থ্যখাতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় বাড়ায়। তাই দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারের অব্যবহৃত/পড়ে থাকা জমিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মেডিকেল ডিভাইস ফ্যাক্টরি স্থাপনে সহায়তা করতে পারে।
কার্যকর PPP বাস্তবায়নের জন্য শক্তিশালী রেগুলেটরি কাঠামো, স্বচ্ছ চুক্তি, ডেটাভিত্তিক তদারকি এবং বাজেট বৃদ্ধি অপরিহার্য। পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে মেডিকেল ডিভাইস ফ্যাক্টরি স্থাপন, বেসরকারি খাতকে মাননির্ভর করতে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং সহজ অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। অবকাঠামো নয়, বরং সেবার মান, জনগণের প্রবেশাধিকার ও জবাবদিহতাকে কেন্দ্র করে PPP গড়ে তুলতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন এবং ২০৩৩ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যখাতকে বহুগুণ সমৃদ্ধ করা সম্ভব।