ভারত থেকে আমদানির খবরে দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজারগুলোতে পিয়াজের দাম কমেছে। পাশাপাশি খুচরা বাজারেও দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একদিনের ব্যবধানে পিয়াজের দাম কমেছে কেজিতে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে নতুন পিয়াজ আসার পাশাপাশি ভারত থেকে আইপি (আমদানি অনুমতি) অনুমোদনে সরকারের ঘোষণার প্রভাব বাজারে পড়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। ভারতীয় পিয়াজ বাজারে এলে দাম আরও কমে আসবে বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে শনিবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন এক বার্তায় জানান, পিয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে আগামী ৭ই ডিসেম্বর থেকে সীমিত আকারে পিয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) প্রদান করা হবে। প্রতিদিন ৫০টি করে আইপি ইস্যু করা হবে। প্রত্যেকটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পিয়াজের অনুমোদন দেয়া হবে। পিয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয় বার্তায়।
মৌসুম শেষ হওয়ায় সরবরাহ কম, বাড়তে থাকে পিয়াজের দাম। তবে এবার দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানির অনুমতির খবরে দিনাজপুরের হিলিতে এক রাতের ব্যবধানে পিয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ৩০ টাকা। আমদানি শুরু হলে পিয়াজের দাম আরও কমবে বলে মনে করছেন আমদানিকারক ও বিক্রেতারা।
এদিকে আমদানির খবরে পিয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। আগে যে দেশীয় পুরনো পিয়াজ ১৪০ টাকা বিক্রি হয়েছিল এখন তা কমে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন পিয়াজ আগে ১১০ টাকা বিক্রি হলেও এখন কমে ৮০ টাকায় নেমেছে। আমদানি হলে আরও দাম কমবে বলে দাবি বিক্রেতাদের।
গত বুধবার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পিয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। এরপর প্রতিকেজি পিয়াজ বিক্রি হয় ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৪০ টাকা। আর শনিবার রাজধানীর বাজারে প্রতিকেজি পিয়াজ বিক্রি হয় ১৫০-১৬০ টাকায়। তবে বিক্রেতারা জানান, তাদের এক কেজি পিয়াজ পাইকারি কেনা পড়ছে ১৪০-১৪৮ টাকা।
রোববার রাজধানীর বাজারে কমতে শুরু করেছে পিয়াজের দাম। কাওরান বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারেও।
এদিকে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকার পিয়াজের আড়তগুলোতে এসেছে নতুন পিয়াজ। খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মিয়া বাজারের মেসার্স আল মুনিরিয়া ট্রেডার্সের ম্যানেজার আবদুল আজিজ বলেন, ভারত থেকে আমদানির খবরে রাতের মধ্যেই পিয়াজের দাম কমে গেছে। শনিবার যে পিয়াজ আমরা ১৩০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন সেটা ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন মেহেরপুরি পিয়াজ এসেছে। এগুলো কেজিতে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি করছি।
এদিকে হিলির বাজারে পিয়াজ কিনতে আসা কয়েক জন ক্রেতা বলেন, ভারত থেকে পিয়াজ আমদানির খবরে দেশের বাজারে পিয়াজের দাম কমে যায়। কিন্তু আমাদের দেশেই তো পর্যাপ্ত পরিমাণ পিয়াজ মজুত আছে। কিন্তু দেশের মোকামে কিছু কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পিয়াজের দাম বৃদ্ধি করে দেয়। এতে করে আমাদের সাধারণ মানুষদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। হিলি স্থলবন্দরের পিয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারত থেকে পিয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে এটি অল্প পরিসরে। প্রতিদিন ৫০ জন আমদানিকারক আইপি পাবেন এবং একজন আমদানিকারক ৩০ টন পিয়াজ আমদানি করতে পারবেন।
এদিকে দু’দিন আগেও বগুড়ার পিয়াজের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। অথচ এখন তার চিত্র ঠিক উল্টো। ভারত থেকে আমদানির খবরে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পিয়াজের দামে বড় ধরনের পতন ঘটেছে। মাত্র একদিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম কমেছে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত।
ওদিকে আমদানির অনুমতি দেয়ার পর থেকে বাজারে পিয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে বলে দাবি করেছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি করেন। তিনি আরও দাবি করেন, আমদানির ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কৃষক এবং ভোক্তা দুইদিকেই সরকারকে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। আলু চাষিদের সহায়তার বিষয়ে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আলুতে এবার চাষিরা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। আলুর ক্ষেত্রে কৃষককে ভর্তুকি দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। পিয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে অসাধু চক্রের হাত রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, হঠাৎ করে পিয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে একটা চক্র আছে। এই চক্রকে খুঁজে বের করতে হবে। অনেকে আমদানির জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল। বাজারে পিয়াজ আছে, কিন্তু কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়েছে।