বাংলাদেশে এ বছর পেঁয়াজের রেকর্ড উৎপাদনে বিপাকে পড়েছেন ভারতের কৃষকেরা। চড়া দামে রপ্তানির সুযোগ না পেয়ে, মাত্র দুই রুপিতেও দেশীয় বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পেরে তারা কার্যত পথে বসেছেন। ক্ষোভ–হতাশার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষকেরা আয়োজন করছেন পেঁয়াজের প্রতীকী শেষকৃত্য—যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে।
বাংলাদেশে রেকর্ড উৎপাদন, আমদানি বন্ধ—বিপাকে ভারতের কৃষক
চলতি বছরে বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন গত কয়েক বছরের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, দেশে কোনো ঘাটতি নেই। স্থানীয় কৃষকের স্বার্থ রক্ষা ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বড় ধাক্কা দেয় ভারতের মধ্যপ্রদেশের মান্দাসৌর অঞ্চলে। বাংলাদেশ ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির একটি প্রধান বাজার ছিল—যেখান থেকে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ রপ্তানি হতো। এবার সেই বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় পাইকারি বাজারে সরবরাহ বেড়ে যায় এবং দাম নেমে যায় ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
ভারতে দুই রুপি কেজিতেও ক্রেতা নেই
মধ্যপ্রদেশের বহু এলাকায় পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি মাত্র দুই রুপি। এত কম দামেও যখন কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না, তখন ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা রাস্তায় বস্তা বস্তা পেঁয়াজ ফেলে প্রতিবাদ করছেন। অনেক চাষি আবার ‘প্রতীকী শেষকৃত্য’ আয়োজন করে দেখাচ্ছেন তাদের হতাশা ও দুঃখ। এসব ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুক ও টুইটারে।
বাংলাদেশে ঠিক উল্টো চিত্র
বাংলাদেশে এখন নতুন দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে, বাজারেও রয়েছে স্বস্তির হাওয়া। শিগগির শুরু হবে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ওঠা—যা রবি মৌসুমে মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ দেয় এবং তিন থেকে পাঁচ মাস বাজারকে স্থিতিশীল রাখে। এর সঙ্গে খারিফ–১ মৌসুমের উৎপাদন মিলিয়ে বছরজুড়েই দেশীয় পেঁয়াজের যোগান থাকে; ফলে আমদানির প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
ভারতের বাজারে পচে যাচ্ছে পেঁয়াজ
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, বাংলাদেশ বাজার হারানোর কারণে ভারতের বিভিন্ন পাইকারি মার্কেটে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ অবিক্রীত অবস্থায় পচে যাচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর দাবি, রপ্তানি বন্ধ থাকাই এই সংকটের মূল কারণ।
অন্যদিকে বাংলাদেশে কৃষকেরা মনে করছেন, দেশীয় উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাজার ও কৃষক—দু’পক্ষেরই জন্য ইতিবাচক।