সিলেটে বাসাবাড়ি নির্মাণে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। অনুমোদন না পাওয়ায় অনেকে উদ্যোগ নিয়েও শেষ পর্যন্ত বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা বাদ দিতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলছে অন্তত প্রায় দেড় বছর। আর অনুমোদন জটিলতার কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে আবাসন কোম্পানিগুলো। যথা সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় একদিকে যেমনই বাড়ছে নির্মাণ খরচ, অন্যদিকে অনেক ক্রেতা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
ব্যবসায়ীদের দাবি, সময়মতো অনুমোদন না পেয়ে অনেক প্রবাসী বাসাবাড়ি নির্মাণ ও এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন। আর সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) কর্তৃপক্ষ বলছে, আগের মেয়র অনুমোদন আটকে রাখায় এবং ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তা পরিবর্তনের কারণে এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই জটিলতা কেটে যাবে বলে আশাবাদী সিসিক কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, সিলেট নগরের আবাসন কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগ ক্রেতা প্রবাসী। এ ছাড়া প্রতি বছর প্রবাসীরা দেশে বাসাবাড়ি নির্মাণে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেন। কিন্তু প্রায় দেড় বছর ধরে সিসিক অনুমোদন না দেওয়ায় কয়েক শ’ আবেদন আটকা পড়ে। এতে অনেক প্রবাসী বাসা নির্মাণের জন্য দেশে এসে ফিরে গেছেন। অনেক আবাসন কোম্পানি প্রতিশ্রুত সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় প্রবাসী ক্রেতারা বুকিং বাতিল করে দেন। সিলেট অ্যাপার্টমেন্ট অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট গ্রুপের (সারেগ) সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসেন জানান, সিলেটে প্রবাসীদের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আবাসন খাতে। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে তারা বাসাবাড়ি নির্মাণ করেন। এ ছাড়া আবাসন কোম্পানিগুলোর পরিচালক এবং ক্রেতা উভয়পক্ষেই রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্য প্রবাসী। কিন্তু ভবন নির্মাণের অনুমোদন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। নগর ভবন সূত্র জানায়, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর সিলেট ভূমিকম্পনপ্রবণ এলাকা এবং বিশেষজ্ঞের মতামত ছাড়া অনুমোদন দেওয়া যাবে না- এমন অজুহাতে বাসাবাড়ি ও বহুতল ভবনের অনুমোদন আটকে রাখেন। ৫ আগস্ট-পরবর্তী পট পরিবর্তনের পর মেয়রের পদ থেকে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে অপসারণ করে বিভাগীয় কমিশনারকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর দুইবার প্রশাসক বদল হয়েছে। পরিবর্তন এসেছে প্রধান প্রকৌশলী পদেও। ফলে গত ৬ মাসে ভবন অনুমোদনের কাগজ-কলমই ধরেনি সিসিক। এতে সিসিকের প্রকৌশল শাখায় ৩২৩টি ভবন নির্মাণের অনুমোদন জমা হয়। এই অবস্থায় ১২ জানুয়ারি সারেগ নেতারা সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অনুমোদন চালুর অনুরোধ জানান। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, নানা জটিলতায় বাসাবাড়ি ও বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হয়নি। গত বুধবার সভা করে দুই শতাধিক স্থাপনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে।