Image description

১৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই দফায় বিমান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট এবং বিমানবন্দরে বোমা হুমকির পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুটি হুমকির বার্তা ভুয়া প্রমাণিত হলেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়ে গেছে। কারা এবং কী কারণে এমন বোমা হামলার বার্তা পাঠাচ্ছে, তা বের করতে গোয়েন্দারা ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন। সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ পাকিস্তান এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কর্তৃপক্ষ বোমার বার্তা দেওয়া নম্বর দুটির মালিকের সন্ধান দিতে চিঠি দেবে।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরপর দুটি বোমা হামলার হুমকির পর স্বাভাবিকভাবেই অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। বিমান এবং শাহজালাল বিমানবন্দর নিয়ে গভীর কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বোমা হুমকির বিষয়ে বলেন, হুমকির বার্তা ভুয়া প্রমাণিত হলেও আমরা বসে থাকতে পারি না। কারা এর পেছনে জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এ জন্য কাজ শুরু হয়েছে। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জানান, দুবার বোমার ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছে। এতে বিমানবন্দরের কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। স্বাভাবিক রয়েছে পরিস্থিতি। অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ দ্য বাংলাদেশ মনিটর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই এমন ভুয়া হুমকির ঘটনা ঘটে থাকে। হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতেই এসব করা হয়। এবার ঢাকায় যেটি পরপর দুবার বার্তা দেওয়া হলো, তাতে করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। যদিও আশা করছি এমন কোনো ঘটনা ঘটবে না। আর যাতে না ঘটে, সে জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বিমানবন্দর সেফ ঘোষণা করতে হবে। যারা এমন বার্তা দিয়েছে, তাদের অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে। আর এ জন্যে পাকিস্তান আর মলয়েশিয়া সিভিল অ্যাভিয়েশনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আইটির যুগে এটা সম্ভব। তিনি বলেন, বোমা হুমকির বিষয়টি আমাদের সতর্কবার্তা হিসেবেই মেনে নিতে হবে। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। যেখানে শৈথিল্য আছে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভবিষ্যতে এমন কোনো ঘটনা ঘটবে না, তা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বোমা হামলার এমন হুমকির পেছনে দেশবিদেশে কারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে গোয়েন্দারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। মালয়েশিয়া এবং পাকিস্তান সিভিল অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন। নম্বর দুটির মালিকের নাম-পরিচয় জানতে তাদের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। ঢাকায় গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয়বারের মতো হুমকি : দ্বিতীয়বারের মতো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেওয়া হুমকির বার্তাটিও ভুয়া প্রমাণিত হয়। তল্লাশি করে হুমকিস্বরূপ কিছু পায়নি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বুধবার রাত ১১টায় এয়ারপোর্ট এপিবিএনের ডিউটি অফিসারের হোয়াটসঅ্যাপে মালয়েশিয়ার একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে বিমানবন্দরে হুমকির বার্তাটি আসে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, বার্তা পেয়েই নির্ধারিত প্রোটোকল অনুযায়ী বিমানবন্দরে দায়িত্বরত সব বাহিনীর সমন্বয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তল্লাশি হয়। তবে হুমকির কোনো সত্যতা না পাওয়ায় রাত আড়াইটায় নিরাপত্তা তল্লাশি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ ঘোষণা করা হয়। হুমকির বার্তা পাওয়ার পরও বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামায় কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। স্বাভাবিকের মতোই ছিল।

এর আগে ইতালির রোম থেকে ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকিতে তোলপাড় শুরু হয় শাহজালাল বিমানবন্দরে। পাকিস্তানি একটি ফোন নম্বর থেকে বিমানবন্দর এপিবিএনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে বোমা হামলার হুমকির পর সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়। ফ্লাইটটি বিমানবন্দরে অবতরণের পর যাত্রীদের নিরাপদে বের করে নিয়ে আসে যৌথ বাহিনী। এরপর শ্বাসরুদ্ধকর ৬ ঘণ্টা সময় পার করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে শেষ পর্যন্ত উড়োজাহাজটিতে তল্লাশি চালিয়ে বোমা বা বোমাজাতীয় কোনো বস্তুর উপস্থিতি পায়নি বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল।

ফ্লাইটটি সকাল ৯টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। পরে পুরো প্লেনে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশিতে প্লেনে বোমা ও বোমাসদৃশ কিছু পাওয়া যায়নি। বিমানে ওই বিস্ফোরক থাকার বার্তাটি পাকিস্তানি নম্বর থেকে বিমানবন্দর এপিবিএনের ডিউটি অফিসারের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এসেছিল।