Image description

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের অভিযান ও জরিমানার পরও থামছে না পাহাড় খেকোদের তৎপরতা। এবার বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা মিলে গড়ে তুলেছেন পাহাড় কাটার সিন্ডিকেট।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সরেজমিন উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চাকফিরানী দুর্লভেরপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে টিনের ঘেরা দিয়ে বিশাল আকৃতির পাহাড়টির অর্ধেক কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। প্রায় ২৫ ফুট উচ্চতার ও ২০০ ফুট দৈর্ঘ্যের পাহাড়টির বেশিরভাগ অংশ এক্সকেভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। কেটে সাবাড় করা হয়েছে পাহাড়ের শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।

 

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, পাহাড়টি স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল কবিরের পুত্র জাফর ও মনজুর এবং আলী আহামদের পুত্র শামসুল ইসলামের মালিকানাধীন। দীর্ঘ ১ সপ্তাহ ধরে রাতের আঁধারে এক্সকেভেটর দিয়ে পাহাড়টি কেটে ৪-৫টি ডাম্পার দিয়ে মাটি নিয়ে যাচ্ছে মাটিখেকোরা।

এসব মাটি গাড়িপ্রতি স্থান ভেদে ১ হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে মাটিখেকোদের তাণ্ডব। এরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না।

বর্তমানে পাহাড়টির পশ্চিমের যে অংশ কাটা হচ্ছে সেটির মালিক মনজুর আলম। পাহাড় কেটে তিনি একটি পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন মাস ছয়েক আগে। সেটির নির্মাণকাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। একইভাবে পূর্বপাশের বিশাল আকারের পাহাড়টি কেটে সমতল করা হয়েছে, সেখানে চলছে পাকাঘর নির্মাণের প্রস্তুতি।

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাহাড় কাটার অবৈধ সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দীন ও আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবু রেজা নদভীর ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর আইয়ুব।

অভিযুক্ত হেলাল একই ইউনিয়নের বাসিন্দা লিয়াকত আলীর পুত্র। তিনি স্থানীয় বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অপরজন মো. আইয়ুব একই এলাকার দেওয়ানপাড়ার বাসিন্দা মোস্তফা কামালের পুত্র। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে তার সম্পৃক্ততার কথা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি পাহাড়ের পশ্চিম অংশ কেটেছি আর পূর্বপাশের বিশাল উচ্চতার পাহাড়টি কেটেছে আইয়ুব।

অপরদিকে অভিযুক্ত আইয়ুবের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, অনেক পাহাড় তো কেটেছি, আপনি যে পাহাড়টির কথা বলছেন সেটা খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে বলে মোবাইলে আর কথা বলতে রাজি হননি।

বিষয়টি জানতে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার পরিচালক মইনুদ্দীন ফয়সালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে এমনকি মোবাইলে খুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

লোহাগাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং এছেন বলেন, পাহাড় ও বালু খেকোদের ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও ছাড় নেই। এদের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। পাহাড় কাটার স্থানটি সরেজমিন পরিদর্শন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।