Image description

২০২৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন শুরু হতে আর মাত্র ছয় মাস বাকি। যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডা—তিন দেশ মিলে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর আয়োজনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। কিন্তু আয়োজক দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ও কূটনৈতিক সম্পর্কের মাঝে একের পর এক অস্থিরতা তৈরি করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার নীতিগত সিদ্ধান্ত, ভিসা কড়াকড়ি ও রাজনৈতিক বক্তব্য পুরো আয়োজনকে ফেলেছে অনিশ্চয়তার চাপে।

 

কঠোর ভ্রমণনীতি: বিদেশি সমর্থকদের দুশ্চিন্তা

বিশ্বকাপের ১০৪টি ম্যাচের মধ্যে ৮২টিই যুক্তরাষ্ট্রে হবে। অর্থাৎ লাখ লাখ বিদেশি সমর্থকের ঢল নামবে যুক্তরাষ্ট্রে। ঠিক সে সময়ই ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে আরও কড়া করেছেন অভিবাসননীতি। দেশজুড়ে অভিযানে বাড়ছে গ্রেপ্তার, নির্বাসন ও বিতর্ক।
হোয়াইট হাউসের কাছে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে গুলির ঘটনায় এক আফগান নাগরিককে অভিযুক্ত করার পর ট্রাম্প ঘোষণা দেন—“তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করা হবে।” এর ফলে হাইতি, ইরানসহ ১৯টি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এমনকি এসব দেশের আশ্রয় আবেদনও অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত।
ভিসা না পাওয়ায় ইরান একসময় ঘোষণা দিয়েছিল, ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ড্র-এ তারা অংশ নেবে না। যদিও পরে তারা সিদ্ধান্ত বদলায়।

 

বিশেষ ভিসা প্রক্রিয়া, তবুও কড়া যাচাই

বিশ্বকাপের আগে বিদেশিদের ভিসা-সংকট কমাতে ট্রাম্প প্রশাসন টিকিটধারী সমর্থকদের জন্য বিশেষ দ্রুত-প্রক্রিয়া চালু করেছে। এতে ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্টের অগ্রাধিকার মিলবে।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, 'টিকিট মানে ভিসা নয়। শুধু দ্রুত সাক্ষাৎকার মিলবে, কিন্তু যাচাই-বাছাই একইভাবে কঠোর থাকবে।'
ফলে বিশ্বকাপ দেখা নিয়ে সমর্থকদের দুশ্চিন্তা কাটলেও জটিলতা পুরোপুরি দূর হয়নি।

 

অনিরাপদ’ বলেই হুমকি—শহর বদলাতে চান ট্রাম্প

ট্রাম্প বহুবার অভিযোগ করেছেন, ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু শহর ‘অনিরাপদ’। তিনি হুমকি দিয়েছেন—নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপ মনে হলে এসব শহর থেকে ম্যাচ সরিয়ে নেবেন।
ঝুঁকিতে থাকা শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে—বোস্টন: ৭টি ম্যাচ, সান ফ্রান্সিসকো: ৬টি, সিয়াটল: ৬টি, লস অ্যাঞ্জেলেস: ৮টি
ম্যাচ সরানো মানে ফিফার জন্য পরিকল্পনায় বিশাল বিপর্যয়—ফ্লাইট, হোটেল বুকিং, লজিস্টিকস—সবকিছুই হুমকির মুখে পড়বে। তাছাড়া আইনগত বাধাও আছে; কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বড় বিপর্যয়ের মতো চরম পরিস্থিতিতেই হোস্ট সিটি বদলানো যায়।
এদিকে ট্রাম্প এই বছরও কয়েকটি ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত শহরে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন। অভিবাসনবিরোধী অভিযান বিশেষত লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো শহরে আতঙ্ক তৈরি করেছে, বিশেষ করে লাতিনো সম্প্রদায়ের মধ্যে। এসব অভিযান বিশ্বকাপ চলাকালেও চলতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

কানাডা-মেক্সিকোর সঙ্গে টানাপোড়েন আরও বাড়ছে

মিত্র দেশ হয়েও ট্রাম্পের কূটনীতি যুক্তরাষ্ট্রের দুই কো–হোস্ট সঙ্গীকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। 
* মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক আরোপ
* কানাডাকে ‘অধিগ্রহণ’ করা নিয়ে মন্তব্য
* মাদকচক্র দমনে মেক্সিকোতে সম্ভাব্য বিমান হামলার ইঙ্গিত
এসব মন্তব্য দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলছে।

বর্ধিত টুর্নামেন্ট, বাড়তি ঝামেলাও

প্রথমবারের মতো ৪৮ দল নিয়ে তিন দেশে বিশ্বকাপ হচ্ছে। এমন বিশাল আয়োজন নিজেই একটি চ্যালেঞ্জ। তার ওপর ট্রাম্পের ভিসা নীতি, রাজনৈতিক অবস্থান, শহর বদলের হুমকি ও বিদেশ সম্পর্কের উত্তেজনা পুরো আয়োজনকে আরও কঠিন করে তুলছে।
বিশ্ব যখন ফুটবলের সবচেয়ে বড় উৎসবের অপেক্ষায়, আয়োজক তিন দেশকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপে থাকা বিশ্বকাপ আয়োজন করতে হচ্ছে—আর এই চাপের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।