Image description

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চলমান চীন সফর নজর কেড়েছে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের। বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা কোয়ার্ডভুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরের গন্তব্য বেইজিং হওয়ায় ওই বাড়তি কৌতূহল! গত সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনা সরকারে চারজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তাদের সবার দ্বিপক্ষীয় সফরের গন্তব্য ছিল নয়াদিল্লি। সূত্র মানবজমিনকে এটা নিশ্চিত করেছে যে, অনানুষ্ঠানিক ফর্মেই দেশ দু’টি উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে খোঁজ-খবর করেছে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে কোনো ধরনের রাখঢাক করেনি বরং এ নিয়ে যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয় সেজন্য একধাপ এগিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট অবধি সফরের বিষয়ে ব্রিফ করা হয়েছে। চীন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ভারতের সরাসরি কোনো জিজ্ঞাসা ছিল কিনা? এমন প্রশ্নে ঢাকায় দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার মন্তব্য ছিল এমন- ‘যেহেতু ৩৬শে জুলাই খ্যাত ৫ই আগস্টের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন, শেখ হাসিনার পলায়ন, সীমান্ত উত্তেজনা এবং সংখ্যালঘু ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান নেতৃত্বের খোলামেলা আলোচনায় এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে, তাই বিষয়টি সেভাবেই রয়ে গেছে। তবে নয়াদিল্লির তরফে যে এ নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ রয়েছে- তা সহজেই অনুমেয়। ওই কর্মকর্তা বলেন, নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাম্প্রতিক বক্তব্যে অনেক মেসেজ রয়েছে। বাংলাদেশ প্রশ্নে যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মনোভাব কাছাকাছি সেটি তার ‘অপ্রত্যাশিত’ সেই বক্তব্যে স্পষ্ট। ওই কর্মকর্তা এটা নিশ্চিত করেছেন যে, বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লিস্থ আমেরিকান দূতের আচমকা ওই বক্তব্যের বিষয়টি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওয়াশিংটনের নোটিশে এনেছে ঢাকা। স্মরণ করা যায়, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন গত ১১ই জানুয়ারি ঢাকা মিশন শুরু করেছেন। চীনের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার রওনা করার ক’ঘণ্টা আগে তিনি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তার আগে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন দূত। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরে যাওয়ার দিন (প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শপথের দিন) ২০শে জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন অন্তর্বর্তীকালীন মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স প্রভাবশালী কূটনীতিক ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওই সাক্ষাৎ হয়। যেখানে তিনি উন্নয়ন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইউনূস সরকারের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, বেইজিং এবং সাংহাইয়ে ব্যস্ত সফর শেষে আজই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশে ফিরছেন। রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্য ওই সফর বিষয়ে বাংলাদেশ ও চীনের নিজস্ব মূল্যায়ন রয়েছে। ভূ-রাজনীতিতে এই সফরের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন পেশাদার কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মূল্যায়ন: সফরের সমাপনী দিনে চীনের সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গভীরতা ও ব্যাপ্তি অনেক। আমরা সম্পর্কের সবদিক নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। আলোচনায় বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্প, বিনিয়োগ প্রাধান্য পেয়েছে। রাজনৈতিক কিছু বিষয় আলোচনায় এসেছে। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার তো দীর্ঘমেয়াদে থাকবে না। এটি নিয়ে অনেকের দ্বিধা থাকতে পারে। এ সরকার কতদিন থাকবে? এ সময় বিনিয়োগে যাওয়া কতটুকু লাভজনক হবে? এই সফরে দ্বিধা-দ্বন্দ্বগুলো সহজে দূর করা গেছে। আমি উল্লেখ করেছি, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল বা সরকারের ওপরে নির্ভর করে না। আমাদের সরকারের ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি কখনও হয়নি হবেও না। যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রতিটি সরকার চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এই ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকারও চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। আমরা বোঝাতে পেরেছি, আমাদের সরকার সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় যেসব সিদ্ধান্ত নেবে, পরবর্তীতে যারা আসবেন তারা ঠিকমতো সেটি ফলো করবেন। এটি চীনা কর্তৃপক্ষ অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন।