পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের মামলার শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের রায় নিয়ে আওয়ামীপন্থি ও শেখ হাসিনার ভিন্ন মামলার আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন বলেছেন, এ রায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। বিশেষ করে শেখ রেহানা ও টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে যে প্রভাবিত করার অভিযোগ সেটি অযৌক্তিক। টিউলিপ সিদ্দিক একজন ব্রিটিশ এমপি। তিনি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। সেখানে তাকে অভিযুক্ত করে যে রায় দেওয়া হলো, টিউলিপ সিদ্দিক যদি দেশে এসে আপিল করেন– একজন আইনজীবী হিসেবে বলছি, এ মামলা টিকবে না। তিনি খালাস পেয়ে যাবেন।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) আদালত চত্তরে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে দুদক প্রসিকিউটর খান মো. মাইনুল হাসান লিপন বলেন, ‘আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রত্যাশা করেছিলাম। সেটা হয়নি। কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।’
আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের আইনজীবী শাহীনুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার তিনটি মামলায় রায় হয়েছে। সেখানে খুরশীদ আলমের এক বছর করে মোট তিন বছর সাজা হয়েছে। এই মামলার অভিযোগও প্রায় একই রকম ছিল। আশা করেছিলাম, সাজা হলেও আগের ন্যায় হবে। হয়েছে পাঁচ বছর। রায়ে অসন্তোষ। সাজার বিরুদ্ধে আপিল করবো।’
এ মামলায় শেখ রেহানার সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিকের দুই সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলাটি করেছিল গত ১৩ জানুয়ারি। দুদকের অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির এমপির ক্ষমতা ব্যবহার করে মা শেখ রেহানা, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রাদওয়ান মুজিবের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেন। তিন জনই পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন।
তবে এই মামলায় শুধু রেহানার প্লট পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। যে কারণে এ মামলায় আজমিনা ও রাদওয়ানকে আসামি করেনি দুদক। দুজনকে অন্য দুটি মামলায় আসামি করেছে সংস্থাটি।
এ মামলার মোট আসামি ১৭ জন। শেখ হাসিনা, রেহানা ও টিউলিপ ছাড়া এই মামলার অন্য ১৪ আসামি হলেন– জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, একই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক চার সদস্য—মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন ও মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী; রাজউকের সাবেক পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। ১৭ আসামির মধ্যে খুরশীদ আলম কারাগারে আছেন।
প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় গত ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার ২১ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।