গণমাধ্যম হিসেবে আমরা প্রতিদিন সারা দেশ থেকে তোলা শত শত ছবি পর্যালোচনা করি এবং এর মধ্যে কিছু অনলাইন ও প্রিন্ট সংস্করণে প্রকাশ করি। স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশিত অধিকাংশ ছবি খবরের ঘটনাই তুলে ধরে। কিন্তু কিছু ছবি প্রকৃতির সৌন্দর্য এমনভাবে উপস্থাপন করে, যেন মনে করিয়ে দেয় 'জীবন কত সুন্দর'। অনেক ছবি মানুষের জীবনের মুহূর্তগুলোকে অনবদ্যভাবে ফুটিয়ে তোলে। সেগুলো কখনো আমাদের বিষণ্ন করে, কখনো উচ্ছ্বসিত করে। আবার কিছু ছবি কেবল একটি মুহূর্ত নয়, আরও গভীর কিছু তুলে ধরে। সেটা হতে পারে অসাধারণ কোনো সাফল্য বা বিশাল ব্যর্থতার গল্প—যেগুলো নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো।
গত ১৯ নভেম্বর আমরা খুলনার ডুমুরিয়ার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের ছবি প্রকাশ করেছি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ক্লাসরুমের বেঞ্চগুলো একসঙ্গে জড়ো করে উঁচু মঞ্চের মতো বানানো হয়েছে। তার ওপর প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থী বসে আছে, আর পেছনে শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা বেঞ্চের বদলে কেন এই অস্থায়ী উঁচু মঞ্চে? কারণ, শ্রেণিকক্ষের মেঝেতে গোড়ালি-সমান পানি। কতদিন ধরে এই পানি আটকে আছে? পাঁচ মাস। কেন? কারণ, পাশের শৈলমারী নদী পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা কবে স্বাভাবিক শ্রেণিকক্ষ পাবে? নদীর পলি অপসারণে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, খুব শিগগির সেটা সম্ভব না। কাজেই নিকট ভবিষ্যতেও এভাবেই তাদের স্কুলজীবন কাটবে। সেখানেও শর্ত থাকে—যদি না তারা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। যদি আক্রান্ত হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে তাদের জন্য কী ধরনের চিকিৎসাসুবিধা আছে, সেটা কি কল্পনাও করতে পারি?
এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের যে প্রচেষ্টা, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, গত পাঁচ মাস ধরে এবং প্রায় প্রতি বর্ষায় এই 'দুর্দশা' তাদের জীবনে স্বাভাবিক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।
আমাদের খুলনা সংবাদদাতা জানান, অন্তত ২২ গ্রামের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন নৌকায় স্কুলে যাতায়াত করছে এবং ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে ক্লাস করছে। শীত চলে এসেছে। এই কনকনে ঠান্ডায় অনেককে হয়তো কোমর-সমান পানি পেরিয়ে স্কুলে যেতে হবে। তারা হয়তো ঠান্ডা, জ্বর, চর্মরোগসহ নানা অসুখে আক্রান্ত হবে।
আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষায় এসব শিশুরা কীভাবে ভালো ফলাফল করবে? ডুমুরিয়াসহ আশেপাশের মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্যও এই প্রশ্ন সমানভাবে প্রযোজ্য এবং তাদের পরীক্ষা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এমনকি এসএসসি পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষাও শুরু হয়ে গেছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, কেবল ডুমুরিয়া উপজেলাতে ১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি কলেজসহ মোট ৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত।
তারপরও নদীর পলি অপসারণের প্রকল্প আটকে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। কতদিন এই এলাকার মানুষকে এভাবে ভুগতে হবে, তা কেউ জানে না। তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এই উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবনের অমূল্য সময় ও সুযোগ হারাচ্ছে।
এটা তো জলাবদ্ধতার কারণে শুধু একটি উপজেলার স্কুলের অবস্থা। কিন্তু সারাদেশে বাকি স্কুলগুলোর সার্বিক অবস্থা কী? প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশে ১ লাখ ৭ হাজার প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৯ হাজার ৬৫৬টির ভবন নতুন ও ভালো অবস্থায় আছে। বাকিগুলোর মধ্যে ১৮ হাজার ২৭১টি পুরোনো, ১৬ হাজার ৯৯৮টি মেরামতযোগ্য, ১১ হাজার ৬১৩টি জীর্ণ, ৫ হাজার ২৫২টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৩ হাজার ৩০৭টি পরিত্যক্ত এবং ১ হাজার ৩৪৮টি ব্যবহার অনুপযোগী।
যদি জীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ, পরিত্যক্ত ও ব্যবহার অনুপযোগী স্কুলগুলোকে একত্র করি, তাহলে সাড়ে ২১ হাজারের বেশি স্কুল আমাদের শিশুদের জন্য নিরাপদ নয়। মৌসুমি বৃষ্টিপাত, নদীর পলি জমা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে অচল হয়ে যাওয়া স্কুলগুলোকেও এর সঙ্গে যুক্ত করলে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এর ফলে প্রতি বছর কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এর সঙ্গে যদি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফ পরিচালিত সাম্প্রতিক মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের তথ্য যোগ করা যায়, যেখানে ৬৩ হাজার পরিবারের ওপর করা জরিপে দেখা গেছে—মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৪৪ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারে, আর ৫৬ শতাংশই পারে না।
কোনো শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের অর্ধেকেরও বেশি যদি শিক্ষা সম্পন্নই করতে না পারে, তাহলে সেটা কেমন শিক্ষা ব্যবস্থা? হ্যাঁ, বাল্যবিয়েসহ আমাদের নানা আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা রয়েছে, যা এই পরিস্থিতির অন্যতম প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করা হয়। তাহলে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো কী করছে? যদি জবাবদিহিতা থাকত, তাহলে এই অবস্থা হতো না।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকে ৩৪ হাজার ১০৬টি প্রধান শিক্ষক ও ২৪ হাজার ৫৩৬টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। তাদের নিয়োগ দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে এমনও না। কারণ, শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতি বহুদিন ধরে চলে আসছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এসব নিয়োগ দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখবে কেন? এখানেও একই সমস্যা—জবাবদিহির অভাব।
আমরা যে প্রশ্নটি তুলতে চাই তা হলো—স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও কেন আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা এত করুণ অবস্থায়? কেন এখনো শিক্ষার্থীদের মান সেই গড়পরতাই থেকে যাচ্ছে? ভর্তি বাড়লেও শিক্ষার্থীদের শেখার দক্ষতা, জ্ঞান আত্মস্থ করার সক্ষমতা ও তাদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। সরাসরি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কি জুলাই সনদে আলোচনা করার কথা ছিল না—বিশেষত যে আন্দোলনটির নেতৃত্ব দিয়েছে শিক্ষার্থীরাই?
স্বাধীনতার পর আমরা মোট আটটি শিক্ষা কমিশন পেয়েছি—
১. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন, ১৯৭২
২. কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী শিক্ষা নীতি, ১৯৭৮
৩. মজিদ খান শিক্ষা কমিশন, ১৯৮৩
৪. মফিজ উদ্দিন শিক্ষা কমিশন, ১৯৮৮
৫. শামসুল হক শিক্ষা কমিশন, ১৯৯৭
৬. এমএ বারী শিক্ষা কমিশন, ২০০২
৭. মোহাম্মদ মোনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশন, ২০০৩ এবং
৮. কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে শিক্ষা নীতি প্রণয়ন কমিটি, ২০০৯।
এর বাইরেও গত ৫৪ বছরে আরও বেশ কিছু কমিটি ও নীতি-সংক্রান্ত সংস্থা গঠিত হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই শিক্ষা কমিশনগুলো বেসামরিক ও সামরিকসহ বিভিন্ন সরকারের অধীনে গঠিত হয়েছিল। কিন্তু, তারপরও এসব কমিশনের কোনোটারই সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশও কার্যকর করা হয়নি। অথচ, এর পেছনে গিয়েছে বিপুল শ্রম ও সম্পদ।
এটি আমাদের কাছে স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, সার্বভৌম দেশ হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সামগ্রিকভাবে শিক্ষা, বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকে আমরা কতটা হালকাভাবে নিয়েছি।
আমাদের মতে, অন্যান্য বিষয়ের মতোই শিক্ষা কমিশনগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নয়, দলীয় রাজনীতির চশমা দিয়ে দেখা হয়েছে। কারণ, কমিশনকে নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক রাখার কোনো চেষ্টা কখনো হয়নি। নতুন কমিশন গঠনকালে সেই সময়ের সরকার কখনোই বিরোধী দলের প্রতি আস্থা রাখেনি। ফলে পরিবর্তিত সরকারের অধীনে সেই কমিশনের প্রাসঙ্গিকতা থাকেনি। নতুন সরকার পূর্ববর্তী কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, বরং উল্টো পথে হেঁটেছে। এভাবে প্রতিবার সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে সুপারিশগুলোও বদলে গেছে। শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি দেখা হয়েছে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, আমাদের শিশুদের বা জাতির চাহিদা থেকে নয়। ফলে শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকায়নের জন্য মূল্যবান সময় ও সুযোগ হারিয়ে ফেলেছি।
গত ৫৪ বছর ধরেই একটি শক্তিশালী, স্বাধীন বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের অভাব ছিল। শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার দীর্ঘমেয়াদি কাজ। এগুলো প্রতিবার নির্বাচনের পর পরিবর্তন হতে পারে না। অরাজনৈতিক ভিত্তিতে, বিরোধী দলের অংশগ্রহণে গঠিত একটি বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষই ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন—যে চেষ্টা কখনোই করা হয়নি।
রাজনৈতিক বিভাজন আমাদের জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রে ক্ষতি করেছে। কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে শিক্ষাখাতে। বিশ্বের খুব কম দেশই ৫৪ বছরে আটটি শিক্ষা কমিশন দেখেছে। যদি কমিশনগুলো আগেরটির সুপারিশ ধরে এগোতো, গল্পটা ভিন্ন হতে পারত। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কখনোই ধারাবাহিক সমর্থন পায়নি। সবকিছুর মতো এখানেও সর্বনাশ ডেকে এনেছে দলীয়করণ।
এছাড়াও শক্তিশালী, সুসংগঠিত নানা গোষ্ঠী যেকোনো পরিবর্তনের বিরোধিতা করেছে। শিক্ষক সংগঠনগুলো ধারাবাহিকভাবে পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় বিরোধী। কারণ, পরিবর্তন মানেই তাদের নতুন দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রয়োজন হবে। প্রায় একই কারণে আমলাতন্ত্রেও ছিল প্রতিশ্রুতির ঘাটতি। বর্তমানে দেশের শিক্ষাখাত দেখভাল করে দুটি মন্ত্রণালয়—প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা আধুনিকায়নে এর কোনোটিরই দক্ষতা, অবকাঠামো কিংবা ইচ্ছাও নেই।
আমাদের শিক্ষা আধুনিকায়নে প্রযুক্তির ব্যবহারের কথাই ধরুন। এখানে নেতৃত্ব দেবে কোন বিভাগ? আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ভেদ করে যেকোনো পরিবর্তন বা উদ্ভাবন আসে 'প্রকল্প' আকারে। সেগুলো চলে দাতা সংস্থা বা বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে। এসব প্রকল্পের বড় দুর্বলতা হলো—এগুলো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসে। সময় শেষ হলেই কাজ থেমে যায়। পরবর্তী প্রকল্প না আসা পর্যন্ত আবারও স্থবিরতা। অবশ্য দাতারা, বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, একাধিক পর্যায়ে প্রকল্পে অর্থায়ন করে কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়েছে। আবার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত থাকলেও আমাদের দূরদৃষ্টি, প্রতিশ্রুতি ও অনুপ্রেরণার অভাব ছিল। এর একটি কারণ ছিল প্রশাসনিক নেতৃত্বে ঘনঘন বদলি। তাদের অনেকেই নিজেদের সীমিত মেয়াদ সম্পর্কে জানলেও ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করেছেন, দামি গাড়ি ব্যবহার করেছেন এবং ভবিষ্যতে পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করার অভিপ্রায় থেকে এর সর্বোত্তম ব্যবহার করেছেন—এমনকি যদি অবসর নেওয়ার সময়ও হয়ে থাকে।
দীর্ঘমেয়াদি ও অতি প্রয়োজনীয় এই বিষয়েও আমরা কেন বাইরের দাতাদের অপেক্ষায় থাকব? যাই হোক না কেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও খাদ্যখাতে যখনই প্রয়োজন তখনই নিজেদের অর্থায়ন করা উচিত এবং সেটাও পর্যাপ্ত পরিমাণে। অপ্রতুল অর্থায়ন আমাদের বহুদিনের ব্যর্থতা। আমরা শিক্ষাখাতে ব্যয়ের দিক থেকে বিশ্বে, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও সর্বনিম্ন ব্যয় করি। আমরা এমনকি নেপালের চেয়েও পিছিয়ে—যাদের সম্পদ আমাদের চেয়ে অনেক কম।
ড. ইউনূস সরকার সামগ্রিক শিক্ষাখাত নিয়ে কোনো কমিশন না করার বিষয়টি নিয়ে বেশ হইচই হয়েছে। অথচ আমাদের উচিত ছিল এবং আমাদের সামনে যে বিরল সুযোগটি ছিল (হয়ত এখনো আছে) তা হলো—আগের আটটি শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ও বাস্তবসম্মত সুপারিশ বাছাই করা, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে 'ঐকমত্য বৈঠকে' আলোচনা করা এবং একটি অভিন্ন নীতিমালা তৈরি করা—যা অত্যন্ত প্রয়োজন। কিংবা এই সরকার অনেক ক্ষেত্রেই প্রশংসনীয়ভাবে যে কাজটি করেছে সেভাবে সবচেয়ে জরুরি, প্রাসঙ্গিক ও সর্বজনগ্রাহ্য শিক্ষা সংস্কারের ওপর অধ্যাদেশ জারি করতে পারত।
প্রতিটি আধুনিক জাতির সাফল্যের মূলে রয়েছে শিক্ষা। নিয়মিত শিক্ষার আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশের জনগণকে উৎপাদনশীল, উদ্ভাবনী, সমসাময়িক ও সমৃদ্ধ করেছে। এতে একটি জাতি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সমাজবিজ্ঞান, আধুনিক প্রশাসন ও ব্যবসার সব উদ্ভাবনের পূর্ণ ব্যবহার করতে পারে। শিক্ষা সংস্কার না করা মানে একটি জাতিকে স্থবির করে রাখা। ইসলামের স্বর্ণযুগ, বিশেষ করে আব্বাসীয় যুগ (অষ্টম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী), জাপানের মেইজি যুগ (১৯৬৮-১৯১২) এবং চীনের আধুনিক যুগ—এমনই কিছু প্রাসঙ্গিক উদাহরণ যেখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, কীভাবে শিক্ষা একটি সভ্যতাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়।
মাহফুজ আনাম: সম্পাদক ও প্রকাশক, দ্য ডেইলি স্টার