Image description

১-১২তম নিবন্ধনধারী ও ১৮তম নিবন্ধনধারীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের কারণে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কার্যালয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সংস্থাটির কর্মকর্তারা কোণঠাসা হয়ে অফিসে ঠিকমতো প্রবেশও করতে পারছেন না। অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাইরে, কেউবা যাচ্ছেন সচিবালয়ে। নিরাপত্তার অভাব, শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার আতঙ্ক এবং টানা অবরোধের কারণে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।

নিরাপত্তার স্বার্থে একাধিকবার পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদনও করেছে এনটিআরসিএ। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ ভবনের নিচতলায় অবস্থান করা ছাড়া কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আন্দোলনকারীদের সরানো কিংবা নির্বিঘ্ন কর্মপরিবেশ তৈরিতে দৃশ্যমান তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তারা। অপরদিকে দাবি আদায়ে অনড় আন্দোলনকারীরা দাবি না মানা পর্যন্ত সরবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। 

আন্দোলনকারীদের মধ্যে উত্তেজনা এতটাই তীব্র যে তারা অফিসে ঢুকতে সাহস পাননি। শারীরিকভাবে হেনস্তার শঙ্কায় অফিসের বাহির থেকেই বাসায় ফিরে যেতে হয়েছে। আন্দোলনকারীদের চাপ, প্রশাসনিক অচলাবস্থা, সব মিলিয়ে এনটিআরসিএর কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত সমাধান না হলে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রমও থমকে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা এনটিআরসিএর দুই কর্মকর্তা

বুধবার সরেজমিনে রাজধানীর ইস্কাটনে বোরাক টাওয়ারে গিয়ে দেখা যায়, টাওয়ারের নিচে অবস্থান করে রয়েছেন ১-১২তম নিবন্ধনধারীরা। নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে গত কয়েকদিন ধরে এখানেই অবস্থান করছেন। চতুর্থ তলায় এনটিআরসিএর কার্যালয়ের কেচি গেটের সামনে একই ব্যাচের আরেকদল প্রার্থী অবস্থান করছেন। এর ফলে সকাল থেকেই এনটিআরসিএর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসে ঢুকতে পারেননি। অফিস কক্ষটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। 

এনটিআরসিএর কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ১-১২তম নিবন্ধনধারীরা

বোরাক টাওয়ারের মূল সড়কের এক পাশে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশ না পাওয়া প্রার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন। তারা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। দীর্ঘদিন ধরে সুপারিশ না পাওয়ায় ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। ১৯তম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতেও চলতি সপ্তাহে আন্দোলন হয়েছে। এ ছাড়া আলাদা গণবিজ্ঞপ্তির দাবিতেও এক পক্ষ আন্দোলন করছেন।

 

১-১২তম নিবন্ধনধারী এবং ১৮তম নিবন্ধনধারীদের আন্দোলনের বিষয়টি পুরোপুরি অযৌক্তিক বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংস্থাটি বলছে, ১-১২তম নিবন্ধনধারীদের নিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন তারা। তবে ১৬৬টি মামলা আদালতে রিভিউয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া বয়স সংক্রান্ত বিষয়ে আদালত নির্বাহী বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়েছে। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর। যার কারণে ১-১২তম নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

‘নিরাপত্তা চেয়ে আমরা একাধিকবার পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ শুধু নিচতলায় দাঁড়িয়ে থাকে; আন্দোলনকারীদের সরানোর মতো কোনো উদ্যোগ নেই। এতে আমাদের কর্মকর্তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন’—মুহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এনটিআরসিএ

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘১-১২তম নিবন্ধনধারী সবার বয়স ৩৫ বছরের বেশি। তাদের নিয়োগ সুপারিশের সুযোগ নেই। এরপরও তারা অযৌক্তিকভাবে আন্দোলন করছে। আদালতের মাধ্যমে কোনো নির্দেশনা আসলে তখন বিষয়টি ভিন্ন। এভাবে কার্যালয় অবরুদ্ধ করে আন্দোলন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের উচিত তাদের সরিয়ে দেওয়া। এছাড়া ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশবঞ্চিতদের জন্য ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপরও তারা আন্দোলন করছেন। বিষয়গুলো স্বাভাবিক নয়।’

এনটিআরসিএর বাইরে ১৮তম নিবন্ধনধারীদের অবস্থান

কার্যালয়ের বাইরে অবস্থানরত এনটিআরসিএর দুই কর্মকর্তা জানান, আন্দোলনকারীদের মধ্যে উত্তেজনা এতটাই তীব্র যে, তারা অফিসে ঢুকতে সাহস পাননি। শারীরিকভাবে হেনস্তার শঙ্কায় অফিসের বাহির থেকেই বাসায় ফিরে যেতে হয়েছে। আন্দোলনকারীদের চাপ, প্রশাসনিক অচলাবস্থা, সব মিলিয়ে এনটিআরসিএর কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত সমাধান না হলে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রমও থমকে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।

বিষয়টি নিয়ে সচিবালয়ে এনটিআরসিএর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা হলে তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অফিসে এখন কাজের পরিবেশ নেই। ১-১২তম নিবন্ধনধারীরা আমাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করতে পারে, এমন তথ্য পেয়েছি। তাই বাধ্য হয়ে আজ অফিসে যাইনি।’

ভেতরে নেই এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা, এভাবেই পড়ে আছে পত্রিকাগুলো

তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা চেয়ে আমরা একাধিকবার পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ শুধু নিচতলায় দাঁড়িয়ে থাকে; আন্দোলনকারীদের সরানোর মতো কোনো উদ্যোগ নেই। এতে আমাদের কর্মকর্তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ডিএমপির রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) রেজোয়ানুল ইসলাম এবং রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুকের নম্বরে কল দেওয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস্ বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনি রমনা থানার ওসির সাথে কথা বলতে পারেন।’