Image description

আমদানির পাশাপাশি দেশীয় বেসরকারি চারটি সিআরইউ (ক্যাথালেটিক রিফর্মিং ইউনিট) রিফাইনারি থেকে জ্বালানি তেল কিনে বিক্রি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এ কার্যক্রমে অনিয়মে বিগত অর্থবছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে বিপিসির গচ্চা গেছে প্রায় ২৮ কোটি টাকা।

এসব তেলের ক্রয়মূল্য নির্ধারণে সরকারি আদেশ তোয়াক্কা না করে দেরিতে প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিপিসির সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠার পর বিপিসি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও ১৫ দিনের ওই কমিটি তিন মাস পর ‘বিষয়টি স্পর্শকাতর’ উল্লেখ করে তদন্তে অপারগতা জানিয়েছে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়কের দাবি, অপেক্ষাকৃত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও প্রাইসিং কমিটিতে রয়েছেন। আবার সদস্য সচিব হিসেবে আছেন সম-পদবির সহকর্মী। যে কারণে অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারার কারণে তদন্তে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তিনি।

 

অভিযোগ ওঠা প্রাইসিং কমিটির সদস্য সচিব বিপিসির শাহরিয়ার মো. রাশেদকে অন্য বিভাগে বদলির পর এখন নিয়মিত হয়েছে সেই বিজ্ঞপ্তি। এরপর কোটি কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাচ্ছে বিপিসি। তবে বিষয়টিতে দাপ্তরিক জটিলতায় সময়ক্ষেপণ হয়েছে দাবি করে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধা দেওয়া-নেওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয় বলে দাবি করা হয়।

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, দেশের চারটি বেসরকারি সিআরইউ রিফাইনারি থেকে পরিশোধিত জ্বালানি হিসেবে অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেল কেনে বিপিসি। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী পাড়ের সুপার পেট্রোকেমিক্যাল লিমিটেড, পারটেক্স পেট্রো লিমিটেড, নরসিংদীর ঘোড়াশাল শীতলক্ষ্যা নদী তীরের অ্যাকোয়া রিফাইনারি লিমিটেড এবং বাগেরহাট জেলার মংলায় পশুর নদীর তীরের পেট্রোমেক্স রিফাইনারি লিমিটেড।

বিপিসির টাকা মানে রাষ্ট্রের টাকা, মানে সাধারণ নাগরিকের টাকা। এখানে প্রাইসিং কমিটি দায় এড়াতে পারেন না। এত বড় দুর্নীতিতে কারা কারা জড়িত তা তদন্ত করে বের করা উচিত। তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।-সুজন চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী

প্রতিষ্ঠানগুলো বিপিসি থেকে এবং বিপিসির মাধ্যমে কেনা ন্যাফতা, কনডেনসেট, ডিজেল রিচড কনডেনসেট, ক্রুড থেকে পরিশোধিত জ্বালানি উৎপাদন করে।

এসব রিফাইনারি থেকে জ্বালানি তেল কেনার ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণ করার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর তারিখের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ‘প্রাইসিং ফর্মুলা’ রয়েছে। একই সঙ্গে ওই প্রজ্ঞাপনে ফর্মুলা অনুযায়ী ডিজেল, পেট্রোল, অকটেনের দাম পুনর্নির্ধারণ করে প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করার কথা। তবে সরকারি ওই নির্দেশনা অমান্য করে ৭ তারিখের পরিবর্তে মাসভেদে পরের মাসের ২০ তারিখেও প্রজ্ঞাপন জারির কারণে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়ে বিপিসি। এতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিপিসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

ফর্মুলা অনুযায়ী এসব জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের জন্য বিপিসির সাত সদস্যের কমিটি রয়েছে। গত অর্থবছরে ওই কমিটির আহ্বায়ক বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) ড. একেএম আজাদুর রহমান এবং ২০২২ সালের ১০ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপনের তারিখ থেকে সদস্য সচিব হিসেবে ছিলেন উপ-মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) শাহরিয়ার মো. রাশেদ।

দুদকে অভিযোগ

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা হওয়া এ সংক্রান্ত এক অভিযোগের সূত্র ধরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ, এপ্রিল, মে মাসের তথ্য পর্যালোচনা করে বেসরকারি চারটি প্ল্যান্ট থেকে জ্বালানি কেনায় তিন মাসে বিপিসির ২৮ কোটি টাকা মতো গচ্চার তথ্য মেলে। ওই অর্থবছরের এপ্রিল-মে মাসের প্রাইসিং বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় ১৭ মে। সেটি বিজ্ঞপ্তিতে ১৮ মে থেকে দর কার্যকরের কথা উল্লেখ করা হয়। পরবর্তী মাসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পর্যন্ত এ দর কার্যকর থাকে।

অভিযোগ পর্যালোচনায় যা পাওয়া গেলো

পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৭ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত সুপার পেট্রোকেমিক্যাল থেকে ৩ পার্সেলে ৩০ লাখ ১৩ হাজার ৪৫২ লিটার পেট্রোল, ৩ পার্সেলে ৪৩ লাখ ২৯ হাজার ৮৪৬ লিটার ডিজেল, ৪ পার্সেলে ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ২২২ লিটার অকটেন, পারটেক্স পেট্রো লিমিটেড থেকে ৩ পার্সেলে ২৯ লাখ ৯৩ হাজার ২৬৯ লিটার পেট্রোল, অ্যাকোয়া রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ২ পার্সেলে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৪০৭ লিটার অকটেন, ৭ পার্সেলে ৫২ লাখ ৫৬ হাজার ৮২৩ লিটার পেট্রোল, ২ পার্সেলে ১০ লাখ ১১ হাজার ৭৫ লিটার ডিজেল এবং পেট্রোমেক্স রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ৫ পার্সেলে ৬৮ লাখ ৭৬ হাজার ৬১৮ লিটার অকটেন ও ৫ পার্সেলে ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ১৭১ লিটার ডিজেল কেনে বিপিসি।

বিজ্ঞাপন

আমি এখন প্রাইসিং কমিটির দায়িত্বে নেই। আর কমিটিতে আমি সবচেয়ে কনিষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলাম। আমি শুধু লিখেছি মাত্র। কমিটির সবার পর্যালোচনার মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করা হয়।- বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বণ্টন ও বিপণন) শাহরিয়ার মো. রাশেদ

১৭ মে প্রকাশিত প্রাইস অনুযায়ী অকটেন লিটারপ্রতি ৭৬ টাকা ৬৬ পয়সা, পেট্রোলের দাম লিটারপ্রতি ৭২ টাকা ৬ পয়সা এবং ডিজেল ৮০ টাকা ৪২ পয়সা। কিন্তু আগের এপ্রিল মাসে অকটেনের নির্ধারিত দাম ছিল ৮০ টাকা ৫৭ পয়সা, পেট্রোল ৭৫ টাকা ৯৭ পয়সা এবং ডিজেল ছিল ৮৪ টাকা ৬৮ পয়সা।

১১ দিন দেরিতে প্রাইস ঘোষণার কারণে ওই ১১ দিনে চার কোম্পানি থেকে কেনা জ্বালানির মধ্যে অকটেন ও পেট্রোলে লিটারপ্রতি ৩ টাকা ৯১ পয়সা এবং ডিজেলে ৪ টাকা ২৬ পয়সা করে বেশি দিতে হয়েছে। এতে চার প্রতিষ্ঠান থেকে ওই সময়ে নেওয়া দুই কোটি ৩২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮৩ লিটার জ্বালানিতে সবমিলিয়ে ৯ কোটি ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৭৬৫ টাকা বিপিসির গচ্চা (বেশি) গেছে।

একইভাবে মার্চ-এপ্রিল মাসের প্রাইসিং বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় ১৫ এপ্রিল। সেটি বিজ্ঞপ্তিতে ১৬ এপ্রিল থেকে কার্যকরের কথা উল্লেখ করা হয়। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৭ এপ্রিলের পর ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সুপার পেট্রোকেমিক্যাল থেকে তিন পার্সেলে ৩০ লাখ ৯ হাজার ৭৬ লিটার পেট্রোল এবং ৬ পার্সেলে ৫১ লাখ ৬ হাজার ৬৮৭ লিটার অকটেন, পারটেক্স পেট্রো লিমিটেড থেকে এক পার্সেলে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ২৩৭ লিটার পেট্রোল এবং দুই পার্সেলে ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮৬৫ লিটার অকটেন, অ্যাকোয়া রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ৫ পার্সেলে ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ২৬৫ লিটার পেট্রোল ও ৪ পার্সেলে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৪ লিটার পেট্রোল এবং পেট্রোমেক্স রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ৭ পার্সেলে ২৬ লাখ ৫৭ হাজার ২৭৬ লিটার অকটেন ও ৪ পার্সেলে ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫০ লিটার ডিজেল কিনেছে বিপিসি।

১৫ এপ্রিল প্রকাশিত প্রাইস অনুযায়ী অকটেন লিটারপ্রতি ৮০ টাকা ৫৭ পয়সা, পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি ৭৫ টাকা ৯৭ পয়সা এবং ডিজেল ৮৪ টাকা ৬৮ পয়সা। কিন্তু আগের মার্চ মাসে অকটেনের নির্ধারিত দাম ছিল ৮৫ টাকা ৮১ পয়সা, পেট্রোল ৮১ টাকা ২১ পয়সা এবং ডিজেল ৯০ টাকা ৪ পয়সা। ৯ দিন বিলম্বে প্রাইস ঘোষণার কারণে ওই ৯ দিনে চার কোম্পানি থেকে কেনা জ্বালানির মধ্যে অকটেন ও পেট্রোলে লিটারপ্রতি ৫ টাকা ২৪ পয়সা এবং ডিজেলে ৫ টাকা ৩৬ পয়সা করে বেশি দিতে হয়েছে।

এতে চার প্রতিষ্ঠান থেকে ওই সময়ে নেওয়া ২ কোটি ১৬ লাখ ১৪ হাজার ৫০ লিটার জ্বালানিতে সবমিলিয়ে ১১ কোটি ৩৫ লাখ ৪৯ হাজার ৪১৯ টাকা গচ্চা গেছে বিপিসির। একই কায়দায় মার্চ মাসে কেনা জ্বালানিতেও ৭ কোটি টাকা বেশি দিতে হয় বিপিসিকে। তিন মাসের (মার্চ থেকে মে) হিসাবে ২৭ কোটি ৭১ লাখ টাকার বেশি গচ্চা গেছে বিপিসির।

প্রাইস নির্ধারণের বেশ কিছু নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রাইস নির্ধারণ কমিটির ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের সভা হয় ৭ এপ্রিল সোমবার। সভার কার্যবিবরণী স্বাক্ষর হয় ৯ এপ্রিল বুধবার। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার। পরের দিন ১৬ এপ্রিল নির্ধারিত প্রাইস কার্যকর হবে বলে বিপিসির ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রাইসিং নিয়ে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তিন মাস পর লিখিতভাবে জানিয়েছে, তারা তদন্ত করতে অপারগ। আমি সাচিবিক দায়িত্ব পালন করি। এখন অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট বিভাগ তদারকি করবেন।- বিপিসির সচিব শাহিনা সুলতানা

বিজ্ঞপ্তিটি স্বাক্ষর করেন উপ-মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) শাহরিয়ার মো. রাশেদ। ২০২২ সালে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে মূল্য নির্ধারণ কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে শাহরিয়ার মো. রাশেদের স্বাক্ষরে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ হয়ে আসছিল। এভাবে বিলম্বে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে গচ্চা যাওয়া টাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনা তদন্তে কমিটি

এ নিয়ে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে অভিযোগ ওঠার পর গত ৩ জুলাই শাহরিয়ার মো. রাশেদকে হিসাব বিভাগ থেকে বিতরণ ও বণ্টন বিভাগে বদলি করা হয়। একই সঙ্গে গত ২০ জুলাই অভিযোগ তদন্তে বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে বিপিসি। বিপিসির সচিব শাহিনা সুলতানা ওই কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে বিপিসির চেয়ারম্যান বরাবর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তিন মাসে প্রায় ২৮ কোটি টাকা গচ্চার বিষয়কে দুর্নীতি হিসেবে আখ্যায়িত করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মাসের ৭ তারিখ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের কথা থাকলেও স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে কৌশল করেই দুর্নীতির জন্য বিলম্বিত করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি ৮-১০ দিন কিংবা ১৫ দিন বিলম্বে করা হলেও সরকারি নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে মাসের ৭ তারিখ থেকে দাম কার্যকর হবে উল্লেখ করলে বিপিসির কোনো টাকা গচ্চা যেত না।’

তিনি বলেন, ‘বিপিসির টাকা মানে রাষ্ট্রের টাকা, মানে সাধারণ নাগরিকের টাকা। এখানে প্রাইসিং কমিটি দায় এড়াতে পারেন না। এত বড় দুর্নীতিতে কারা কারা জড়িত তা তদন্ত করে বের করা উচিত। তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।’

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। পারটেক্স পেট্রো লিমিটেডের ডিজিএম (ফিন্যান্স) মো. হোসেন বলেন, ‘প্রাইসিং নিয়ে বিজ্ঞপ্তি বিলম্বিত করার মাধ্যমে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে- এমন একটি অভিযোগ আমাদের দিকে আসছে, যেটি সঠিক নয়। মূলত ২০২৩ সালে প্রাইসিং ঘোষণার তারিখের ধারাবাহিকতা না থাকায় আমরা বিপিসিকে এ বিষয়ে চিঠি দিই। আমরাই বলেছি নির্ধারিত সময়ে প্রাইসিং ঘোষণা করার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সরকারি পরিপত্রের মাধ্যমে প্রাইসিং পরবর্তী মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি আকারে বিপিসির জারি করার কথা। কিন্তু এটির ধারাবাহিকতা না থাকায় ২০২৩ সালে আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিপিসির ওই সময়ের চেয়ারম্যান মহোদয় বিষয়টিতে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এরপর কয়েকমাস নির্ধারিত সময়ে প্রাইসিং ঘোষণা করা হলেও পরে অনিয়মিত হয়ে যায়। বিষয়টি বিপিসির খামখেয়ালিপনা। এখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বণ্টন ও বিপণন) শাহরিয়ার মো. রাশেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এখন প্রাইসিং কমিটির দায়িত্বে নেই। আর কমিটিতে আমি সবচেয়ে কনিষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলাম। আমি শুধু লিখেছি মাত্র। কমিটির সবার পর্যালোচনার মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। সব কর্মকর্তাকে এক জায়গায় পাওয়া যায় না। মিটিং করে কার্যবিবরণী স্বাক্ষর করার পর ফাইলে নোট দিতে সময় ব্যয় হয়। আবার অনুমোদন হতেও সময় ব্যয় হয়।’

এ বিষয়ে মূল্য নির্ধারণ কমিটির আহ্বায়ক ও বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) ড. এ কে এম আজাদুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে কথা হয় কমিটির সদস্য বিপিসির পরিচালক (অর্থ) ও সরকারের যুগ্ম সচিব নাজনীন পারভীনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিপিসি অনেক ইতিবাচক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদগুলো আসে। প্রাইসিংয়ের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। এখন নিয়মমাফিক সব হচ্ছে।’

 

 

এ নিয়ে কথা বলতে গত কয়েকদিন ধরে যোগাযোগ করেও ফোন রিসিভ না করায় বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে বিপিসির সচিব শাহিনা সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাইসিং নিয়ে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তিন মাস পর লিখিতভাবে জানিয়েছে, তারা তদন্ত করতে অপারগ। আমি সাচিবিক দায়িত্ব পালন করি। এখন অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট বিভাগ তদারকি করবে।’