Image description

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে রাজধানীতে ১৯৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ—ডিএমপি। তবে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, এই ১০ মাসে রাজধানীতে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৩৭১টি। শুধু ঢাকা নয়, গোটা দেশেই হত্যাকাণ্ড বেড়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যে হিসাব দিয়েছে, তাতে এ বছরের প্রথম ১০ মাসের প্রতি মাসে প্রায় ২০টি করে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। আর পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে দেখা যাচ্ছে প্রতি মাসে গড়ে ৩১টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, পুলিশ বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে। সর্বশেষ সোমবার রাতে পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া হত্যার ঘটনায় পুলিশ ‘বিস্তারিত অনুসন্ধান করছে’। এখন পর্যন্ত এক জনকে আটক করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন তিনি।

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সারা দেশে হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। একইভাবে ঢাকায়ও বেড়েছে হত্যাকাণ্ড। তুলনামূলক বিচারে রাজধানীতে হত্যাকাণ্ড বেড়েছে উদ্বেজনকভাবে বেশি। বিশেষ করে গত কয়েক দিনে কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডের ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অপরাধীরা অনেক বেশি তৎপর হয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতারাও হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন। এলাকার দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজির কারণেও অনেক জায়গায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে।  

পুলিশ সদর দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা অপরাধ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে সারা দেশে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১ হাজার ৯৩১টি। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে ছিল ১ হাজার ৫৩৩টি। আর ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে ছিল ১ হাজার ৫১৮টি। গত বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় এ বছরের প্রথম ছয় মাসে হত্যাকাণ্ড বেড়েছে ৩৯৮টি। আর ২০২৩ সালের তুলনায় ৪১৬টি।

একইভাবে রাজধানীর ঢাকার ক্ষেত্রে এ বছরের প্রথম ছয় মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ২১৭টি। আর প্রথম ১০ মাসে খুন হয়েছে ৩৭১। আর ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে হত্যাকাণ্ড ছিল ৮৬টি। আর ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ৯৮টি। অর্থাৎ গত বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৩১টি হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটেছে। আর ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে ১১৯টি।

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যা বলছে, এ বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীতে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ৩৬টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩৮, মার্চে ৩৩, এপ্রিলে ২৯, মে মাসে ৩২ ও জুনে ৪৯টি। সব মিলিয়ে ২১৭টি। একইভাবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ১১, ফেব্রুয়ারিতে ৪, মার্চে ২৮, এপ্রিলে ১৪, মে মাসে ১৬ এবং জুনে ১৩টি। সব মিলিয়ে ৮৬টি। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ২৩, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১২, এপ্রিলে ১২, মে মাসে ৯ এবং জুনে ২৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। অর্থাৎ ঐ বছর রাজধানীতে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে ৯৮টি।

একইভাবে সারা দেশের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছরের জানুয়ারিতে সারা দেশে ২৯৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ৩০০, মার্চে ৩১৬, এপ্রিলে ৩৩৬, মে মাসে ৩৪১ ও জুনে ৩৪৪ জন। সব মিলিয়ে হত্যাকাণ্ড ১ হাজার ৯৩১টি। গত বছরের জানুয়ারিতে সারা দেশে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে ২৩১টি। ফেব্রুয়ারিতে ২৪০, মার্চে ২৩৯, এপ্রিলে ২৯৬, মে মাসে ২৫৯ ও জুনে ২৬৮ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ১ হাজার ৫৩৩ জন। আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ২১৪টি।      

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, অপরাধীর পার পেয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে অপরাধ বাড়ে এবং এর জন্য আইনের দ্রুত প্রয়োগ ও আইনের শাসনের অভাব দায়ী। অপরাধের কারণ মাথায় রেখে প্রতিকার খুঁজতে হবে এবং অপরাধীর সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিচয় দেখা উচিত নয়। এছাড়া কিছু এলাকায় ভাসমান জনগোষ্ঠীর ঘনত্ব বেশি হলে এবং স্থানীয়দের দায়িত্বহীনতার কারণে অপরাধের মাত্রা বাড়ে। পাশাপাশি পুলিশ এখনো পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। পুলিশকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আরও বেশি কার্যকর করে গড়ে তুলতে হবে।