গতকাল সকালে আমি ধানমন্ডিতেই বন্ধুদের সাথে গ্রুপ স্টাডি করছিলাম। আমাদের দুইটা মুট একইসাথে চলমান, এই নিয়ে প্রায়ই আমাদের একসাথে বসতে হয়। পথিমধ্যে দেখলাম ৩২ এ ছাত্রজনতার অবস্থান, পুলিশের পাহারা। I didn’t think much of it, গতকালকের দিনে এমন হওয়াটা স্বাভাবিক বলেই আমার মনে হয়েছে।
স্টাডি সেশনের মাঝখানে দেখলাম পুলিশ একের পর এক জুলাইয়ে আহত ভাইদের উপর কি নৃশংস হামলা করছে, উপস্থিত ছাত্রদের মেরে একদম রক্তারক্তি করে ফেলতেসে। আমার কাছে মনে হইসে আর যাই হোক ফ্যাসিস্টের দরগা পাহারা দিতে গিয়ে জুলাইয়ে রাস্তায় দাঁড়ানো লোকের উপর হামলা মেনে নেওয়ার মতো না।
হাসিনার রায়ের দিন, আমি ক্যাম্পাসেও যাব। ৩২ আমার যাওয়ার পথেই পড়ে। পথিমধ্যে ওখানে গেলাম বার্গেন করতে। আর যাই হোক, মানুষকে তো এভাবে মারতে পারে না। পুলিশকে অনেক বুঝাইসি প্রথমে, না ঢুকতে দিলেও যাতে এটাক না করে এই কথাটা বারবার বলসি। উনারাও বারবার বলতেসিল যে উনারা নাকি মারে নাই আর মারবেও না। আশ্বস্ত করার এক পর্যায়ে লাঠি উদ্যত করে পুলিশ বাহিনীর একাংশ দৌড়ে জনতার দিকে মারতে গেলে আমি পিছনে পিছনে যাই এবং বলি যে "একটাও লাঠি উঠবে না খবরদার, যাদের ট্যাক্সের পয়সায় এই লাঠি কেনা হইসে, তাদের উপরে এইটার চড়াও হওয়া মানায় না।" ওরা মারতে থাকলে আমি বারবার প্রেসকে অনুরোধ করতে থাকি যে ভাই একটু আপনারা এই দৃশ্যটা দেখান যে কীভাবে ওরা পিটাচ্ছে, আমার চেহারা না দেখায় পুলিশের এই নগ্নতাটা মানুষের সম্মুখে আনেন। অনেকেই আমার মুখের সামনে থেকে তখনও ক্যামেরা সরাতে রাজি হননি, ফ্রাস্ট্রেশনে আমি কিছুটা কাঁদো কাঁদো হয়ে তখন ব্যক্তিগতভাবে একজন সাংবাদিক ভাইকে বলি যে ভাই আমি ক্ষমতাশূন্য লোক, আপনাদের ক্যামেরা হলো আপনাদের ক্ষমতা। আমাকে দেখায় কোনো লাভ হবে না, আপনি আপনার ক্যামেরাটা দিয়ে আহতদের দেখান, এটাতে লাভ হবে।
পুলিশ আবার দূরে সরে যায়, আহতদের অনেককেই তখন হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আমি কিছুক্ষণ অসহায়ের মতো বসে থেকে ক্যাম্পাসে চলে আসি।
আগেই বলেছি, আমার বাসায় যেতে আসতে ৩২ পড়ে। তাই ফেরার পথে রিকশাওয়ালা মামা আমাকে আর আমার বন্ধুকে (যে রাস্তায় সমস্যা হচ্ছে দেখে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে এসেছিল) অনেক দূরে নামিয়ে দেয়। যেতে যেতে দেখি একই রকম অবস্থা প্রায়। এর মাঝে আমি আর আমার বন্ধু ৩২ থেকে ৪০০ মিটার দূরে (গুগল ম্যাপ মতে) পার্কের সামনে রাস্তায় একটু বসলে দূর থেকে পুলিশ দৌড়ে আমার বন্ধুর উপর লাঠিচার্জ করতে আসে। আমি তখন একজন পুলিশ সদস্যের পেছন দিক থেকে টেনে ধরার চেষ্টা করি যাতে সে মারতে না পারে। তিনি তখন আমাকে ফ্রেইমিঙের জন্য মিথ্যামিথ্যি "আপনি আমার অস্ত্র ছিনতাই করতেসেন কেন? অস্ত্র কেড়ে নিচ্ছেন কেন?" বলা শুরু করলে আমি তার অফিসারের কাছে দৌড়ে গিয়ে বলি যে কোনো উস্কানি ছাড়া এত দূর থেকে শান্তভাবে বসে থাকা লোকজনের উপর হামলা করতে আসার কারণ কী।
পুলিশকে টেনে ধরা নিয়ে অনেকে অনেককিছু বলছেন, ভাই শোনেন, আপনাদের যে কারো বিরুদ্ধে পুলিশের ফ্যাসিস্ট লাঠি উদ্যত হলে আমি বাধা দিব। অবশ্যই দিব। এখনও দিব। এই ব্যাপারে ডিপস্টেটের তৈরি করা ন্যারেটিভ আপনারা সবাই মস্তিষ্কে স্থান করে দিচ্ছেন জিনিসটা হাস্যকর।
পুলিশের অফিসারকে আমি বুঝিয়ে বলি যে ভাই আপনারা হাত তুলবেন না, জুলাইয়ে আপনারা দেখসেন যে জনতার বিপরীতে দাঁড়ালে আপনারা টিকবেন না। আবার এই ছাত্ররা আপনাদের বিরুদ্ধে এখন টিকবে না, কারণ তাদের কাছে আপনাদের মতো অস্ত্র নাই, বর্ম নাই। উনি তখন আমাকে বলে যে ছাত্ররা ইট ছুঁড়ার চেষ্টা করায় আত্মরক্ষার্থে তারা এমন করেছে। আমি তখন তাদেরকে বলি যে আমি উনাদেরকে বলতেসি ইট না মারতে, আপনারাও আর মারবেন না তাহলে দয়া করে। কথা শেষ করে আমি মাঝখানের গ্যাপটা পার হয়ে ছাত্রদের কাছে পৌঁছে তাদের বোঝানোর চেষ্টার সাথে সাথে পুলিশ ইট ঢিল দেয়া আর সাউন্ড গ্রেনেড ফাটানো শুরু করে। আমি তখন অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে একাই অফিসারের কাছে যাই এবং প্রশ্ন করি "আপনি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা কেন করলেন? ওরা তো মারতেসিল না আর।" উনারা আমাকে তখন বলে যে আমাকে তো কেউ কিছু করেনি, তাহলে আমি কেন কথা বলছি। আমি তখন বলি "আপনারা অন্যদের মারতেসেন দেখার পরেও কি আমি বসে বসে আঙুল চুষব?" এই নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে মিডিয়া আমাকে ঘিরে ফেললে উনারা দূরে সরে যায় এবং দূরে গিয়ে আমাকে গালাগালি করতে শুরু করে। আমার বন্ধু তখন এগিয়ে গিয়ে বলে "you cannot make sexually derogatory remarks like that" তখন পুলিশের কয়েকজন 'ইংরেজি শিখাইতে আইসেন না' ধরণের কথা বলা শুরু করলে আমি এগিয়ে গিয়ে এ ধরণের নোংরামির জবাবদিহিতা চাই। ওই সময় আমি ছিলাম অত্যন্ত ক্রুদ্ধ ও মর্মাহত। অফিসারকে আমি আঙুল নাড়িয়ে এহেন মন্তব্যের জন্য সরি বলতে বললে পাশ থেকে আরেক পুলিশ আমাকে বলে সিনিয়র পুলিশের সামনে আঙুল নাড়াচ্ছি কোন সাহসে। তখন আমি বলি যে "I don't fucking care whether you are a senior officer or not".
এই জায়গায় উক্ত f বর্গীয় শব্দটি আপনাদের চির পরিচিত সেই অর্থে যে ব্যবহৃত হয়নি সেটা বলাই বাহুল্য।
সবশেষে ইতিকথায় আবারও বলি, আপনারা যারা নোংরামি করতেসেন, আপনাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাহিনী যদি লাঠি হাতে দাঁড়ায়, আমি আপনাদের সাথেই থাকব। আমার চোখের সামনে আপনারা রক্তাক্ত হবেন, আমি রিকশায় চেপে আমার দূর গন্তব্যে চলে যাব– এমন হবে না। কথা দিলাম।
উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়া