Image description
♦ বাসে আগুন দিলে ৫-১০ হাজার টাকা ♦ ককটেল নিক্ষেপে ৩-৫ হাজার ♦ মাদকাসক্ত-ভাসমান অপরাধীরা টার্গেট

পাবনার বাস ডিপোতে একটি বাসে সম্প্রতি আগুন দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, হেলমেট পরা একজনসহ পাঁচ যুবক ডিপোর একটি বাসে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিচ্ছেন এবং মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছেন। বাসটির বিভিন্ন জায়গায় আগুন দেওয়ার ভিডিও ধারণ করে সটকে পড়েন তারা। গত ১৩ নভেম্বর সকালে পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার মোড়ে বাসে আগুন দেওয়ায় এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা। পুলিশ বলছে, বাসে আগুন দেওয়ার প্রমাণ পাঠানো হয় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সূত্রাপুর থানার সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ বিল্লালের হোয়াটসঅ্যাপে। মেসেজ মুছে ফেলায় মোবাইলটি ফরেনসিক করতে পাঠানো হয়েছে।

একই দিন মিরপুরের শাহআলী বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি বাসে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন দিয়ে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করার সময় স্থানীয় জনতা তিন যুবককে ধাওয়া দেয়। সেখান থেকে পালানোর চেষ্টাকালে আবদুল্লাহ আল সাইফ (১৮) নামে এক তরুণ তুরাগ নদে ঝাঁপ দিয়ে ডুবে মারা যান। গ্রেপ্তার হন রুদ্র মোহাম্মদ আমির সানি নামে মৃতের বন্ধু। পালিয়ে যান অপরজন। তাদের ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ঢাকা-১৪ নির্বাচনি এলাকায় যে কোনো একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার জন্য ভাড়া করেছিলেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এক নেতা। ওই টাকা হাতে পেতেই ভিডিও করছিলেন ওই তিন কলেজছাত্র।

শুধু এ ঘটনাগুলোই নয়, প্রতিটি বাসে আগুন দেওয়ার সময় এসব ভিডিও নেপথ্যে একটিই কারণ চুক্তির টাকা পাওয়া। শুধু বাসে আগুন নয়- পেট্রোলবোমা, ককটেল বিস্ফোরণ ও ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ শুরু করেছে ক্ষমতাচ্যুত কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। আর এসব কাজে ভাড়া করা হচ্ছে ভাসমান মানুষ, মাদকাসক্ত, বেকার ও পথশিশুদের। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদে অর্থায়নের বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আগুন সন্ত্রাসের নামে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে সারা দেশে। এসব টাকা বণ্টন করা হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। বিদেশ থেকেও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠানোর সুযোগ থাকায়, পলাতক আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বাংলাদেশে তৎপর তাদের বিশ্বস্ত অনুসারীদের মাধ্যমে টাকা বণ্টন করছেন। যারা আগুন সন্ত্রাসে অংশ নিচ্ছেন- তাদের কাজের প্রমাণ দেখার ভিত্তিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকান থেকে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সূত্র বলছে, আগুন সন্ত্রাসের জন্য কয়েক হাতবদলের মাধ্যমে লেনদেন করা হচ্ছে। প্রতিটি বাসে আগুন দেওয়ার বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে ৫-১০ হাজার টাকা। আর ককটেল নিক্ষেপের জন্য দেওয়া হচ্ছে ৩-৫ হাজার টাকা। ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য ৫০০-২০০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে। যারা অন্য জেলা থেকে ঢাকায় এসে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন- তাদের টাকা দেওয়া হয় সবচেয়ে বেশি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, স্থান ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারীদের ওপর নির্ভর করে কাকে কত টাকা দেওয়া হবে। বাসে আগুন দেওয়া, ককটেল মারার মতো ঘটনা ঘটাতে সুনির্দিষ্ট রেট নেই। বেশি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে আগুন দিতে পারলে টাকার অঙ্ক দ্বিগুণও দেওয়া হচ্ছে। আর কারিগরদের কাছে চাহিদামতো ককটেল বানানোর অর্ডার দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কারিগরকে গানপাউডার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। খুচরা একটি বা দুটি করে ককটেল বিক্রি হয় না। কোনো এলাকার নাশকতার সমন্বয়কারী একসঙ্গে বেশ কয়েকটি ককটেল অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নেন। এতে খুব বেশি খরচ হয় না। ককটেল প্রতি ১ হাজার টাকার মতো খরচ করতে হয়। তবে যেসব ককটেলে গানপাউডারের পরিমাণ বেশি দিতে হয়- সেটির জন্য বেশি টাকা নিচ্ছেন কারিগররা।

এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট পুলিশ সদর দপ্তরে অগ্নিসংযোগকারীর তালিকাসহ একটি গোপন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে গত সপ্তাহের শেষের দিকে। ওই প্রতিবেদনে তালিকাভুক্ত আগুন সন্ত্রাসীদের মধ্যে ভাসমান অপরাধী ও বস্তিবাসীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডেডিকেশন বুঝে টাকা দেওয়া হচ্ছে। বাসে আগুন, ককটেল নিক্ষেপ ও ঝটিকা মিছিলের নামে দেশে থাকা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনেকেই লাভবানও হচ্ছে। সম্প্রতি আমরা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তারের পর জানতে পারি ৪টি ঝটিকা মিছিলের জন্য তাকে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। এভাবে আগুন সন্ত্রাসের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দেওয়া হচ্ছে। আর এসব টাকা আসছে যেসব দেশে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা পলাতক রয়েছেন- সেসব দেশ থেকে। আমরা চেষ্টা করছি গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে সব ধরনের অপচেষ্টা রুখে দিতে।