Image description
 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণার পর উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায়। দিনভর সংঘর্ষ, ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া, সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ এবং দফায় দফায় টিয়ারশেল নিক্ষেপে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এদিন পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। সংঘর্ষে পুলিশ–সেনা সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালের দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের দিকে বিক্ষোভকারীদের ঢল নামতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির ধ্বংসাবশেষ ভেঙে ফেলতে দুটি এক্সকাভেটর (বুলডোজার) নিয়ে সামনে পৌঁছায়। পুলিশ বাধা দিলে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং দুপুর থেকে শুরু হয় সংঘর্ষ। বিকালের দিকে সংঘর্ষ তীব্রতর হলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বুলডোজার দুটির ব্যাটারির সংযোগ খুলে দিয়ে প্রয়োজনীয় পাটস খুলে ফেলেন এবং চাবি বাজেয়াপ্ত করেন। ফলে দুটি বুলডোজার সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে পড়ে। 

ঘটনাটি স্বীকার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।

এদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়—ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক ও মিরপুর রোডের মেট্রো শপিংমল থেকে রাসেল স্কয়ার মোড় পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা ব্যারিকেড বসিয়ে রেখেছে। নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় অংশ দিয়ে সীমিত আকারে যান চলাচল চলছে। তবে মেট্রো শপিংমলের মোড়, রাসেল স্কয়ার ও কলাবাগান সড়কজুড়ে এখনও কয়েক শতাধিক বিক্ষোভকারী অবস্থান করছেন। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন এবং সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে দুপুরে রায় ঘোষণার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ধানমন্ডি, কলাবাগান, পান্থপথ, স্কয়ার হাসপাতালের আশপাশসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় টানা সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। অনেক জায়গায় ঘণ্টাব্যাপী বিস্ফোরণের মতো শব্দে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যারিকেড বসিয়ে অধিকাংশ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশেষ করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের পশ্চিম পাশের আবাসিক গলিতে শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, “শেখ মুজিবের বাড়ি ভাঙা না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে।” তারা অভিযোগ করেন, শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা দেশের ওপর ‘স্বৈরাচার’ চাপিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাদের “চিহ্ন মুছে ফেলতেই” আন্দোলন চলছে বলে জানান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরও এলাকায় তীব্র উত্তেজনা, থেমে-থেমে বিস্ফোরণের শব্দ এবং সংঘর্ষ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে চলছিল। আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা।