Image description
 

পুলিশ হেফাজতে মিডিয়ায় আসামির ভিকটিম ব্লেমিং বক্তব্য অপসারণ, দোষী পুলিশের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় তদন্ত ও আদালতের বিচারকদের নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়ের হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বেল্লাল হোসাইন ওরফে মুন্সী বেল্লাল বাদী হয়ে সোমবার হাইকোর্ট বিভাগের  বিচারপতি ফয়েজ আহমেদ এবং বিচারপতি মো. মনজুর আলমের দ্বৈত বেঞ্চে রিটটি দাখিল করেন।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ নভেম্বর বিকালে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের ডাবতলার বাসায় ঢুকে তার স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে হত্যা ও স্ত্রীকে গুরুতর জখম করার মামলার আসামি লিমন মিয়ার পুলিশ কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় কয়েকটি মিডিয়ায় দেওয়া ভিকটিম ব্লেমিং ভাইরাল হয়। এই ব্লেমিং বক্তব্য অপসারণ, ঘটনায় দায়ী সংশ্লিষ্ট পুলিশদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন ও বিচারকদের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা বিষয়ক পরিপত্র আশু বাস্তবায়নের জন্য রিটটি দাখিল করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট বেল্লাল হোসাইন (মুন্সী বেল্লাল)। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান আলোচিত রিটে পিটিশনারের পক্ষে আইনজীবী নিযুক্ত হয়েছেন। 

রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, তথ্য সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালকসহ রাজপাড়া থানা, রাজশাহী, সিলেটের জালালাবাদ থানা, সিলেট এবং বোয়ালিয়া থানা, রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিবাদী করা হয়েছে।

রিটে ভুক্তভোগী বিচারক পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ব্যর্থতার জন্য কেন বিবাদীদের দায়ী করা হবে না- মর্মে রুল চাওয়া হয়। এছাড়াও, বিচারক এবং বিচারক পরিবারের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত নীতিমালা প্রস্তুত করা, পুলিশ হেফাজতে মিডিয়ায় আসামির ভিকটিম ব্লেমিং বক্তব্য অপসারণ চেয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন ও ইতোপূর্বে জারিকৃত বিচারকদের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা বিষয়ক পরিপত্র  জরুরিভাবে বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়।  আগামী সপ্তাহে এই রিটের শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রিট দাখিলকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।

গত ১৩ নভেম্বর বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর ডাবতলা এলাকায় মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের বাসায় ঢুকে তার স্কুল পড়–য়া ছেলে তওসিফ রহমান তৌসিফকে ছুরিকাঘাতে হত্যা ও স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসিকে হত্যার চেষ্টা চালায় আসামি লিমন। এ সময় লিমনও কিছুটা আহত হয়। নিহত ও আহতদের সঙ্গে লিমন মিয়াকেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন আসামি লিমন মিয়ার ভিডিও রেকর্ড করে সামাজিক ও বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বিচার বিভাগ ও পুলিশের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। পুলিশ হেফাজতে থাকাবস্থায় আসামির ভিডিও বয়ান ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে গত ১৫ নভেম্বর রাজশাহী মেট্টোপলিটন আদালতের বিচারক আরএমপির কমিশনারকে তলব করেন। 

এ ঘটনার দিনই দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে রাজপাড়া থানার চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে ১৫ নভেম্বর আদালত আসামি লিমন মিয়াকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে। 

গত ১৪ নভেম্বর মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বাদী হয়ে ছেলে হত্যা ও স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে লিমন মিয়াকে আসামি করে রাজপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।