আলোচনায় পুলিশের নতুন পোশাক। শুধু পুলিশ নয়, র্যাব এবং আনসার বাহিনীর নতুন ইউনিফর্ম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিন বাহিনীর নতুন পোশাক নিয়ে অনেকে হাস্যরসও করছেন! কেউ নতুন ইউনিফর্মের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন, আবার কেউ তির্যক মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছেন, ‘পোশাকের রং বদলানোর আগে পুলিশের মনের রং বদলানো উচিত।’ বাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের মধ্যেও কেউ কেউ নতুন পোশাক নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গত সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পুলিশের পোশাক ও লোগো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, পোশাক পরিবর্তনের পেছনে মনোবল বৃদ্ধি, দুর্নীতিরোধসহ নানা বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১৮ ধরনের পোশাক উপস্থাপন করা হয়েছিল বৈঠকে। সেখান থেকে পুলিশ, র্যাব ও আনসারের জন্য তিনটি নতুন ডিজাইনের পোশাক বাছাই করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ কাইয়ূম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খুনির গায়ে নতুন পোশাক পরিয়ে দিলেই কি সে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে! সরকারের উচিত ছিল বাহিনীর সদস্যদের পরিশুদ্ধ করা। ক্রমাগত মোটিভেশন দিয়ে জনগণের বাহিনীর হিসেবে হারানো ইমেজ ফিরিয়ে আনা। সংস্কার করে, জঞ্জাল সাফ করে হাইলি মোটিভেটেড বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা।
সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর তিন বাহিনীর জন্য বাছাই করা তিন রঙের নমুনা পোশাকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেককে হাস্যকর ভিডিও বানিয়ে পোস্ট করতে দেখা গেছে।ইউনিফর্ম পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত ১৫ বছরে বাহিনীগুলোর সদস্যদের ভিন্ন চেহারায় দেখা গেছে। বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তাদের বীভৎস রূপ দেখেছে দেশবাসী। এ জন্য পোশাক পরিবর্তন করে ভিজ্যুয়াল ইমেজ পরিবর্তনের চেষ্টা ইতিবাচক। তবে কেবল ইউনিফর্মের রং বদলালেই হবে না। সদস্যদের মনের রংও বদলাতে হবে। এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি দরকার। তাদের পজিটিভ সুপারভিশন খুব জরুরি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রল : নতুন পোশাক দেখে মো. মহসীন মোল্লা নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘র্যাব হইলো পুলিশ, পুলিশ হলো গার্ড, আর আনসার হইলো চৌকিদার।’ জুলফিকার আলী নামের একজন লিখেছেন, ‘পুলিশের পোশাকটা র্যাবকে একটু পরিবর্তন করে দেওয়া হলো। পুলিশের আচরণ র্যাবে স্থানান্তরিত হচ্ছে না তো? অবশ্যই বাঘের চামড়া গরুর গায়ে লাগালে সে তো আর বাঘ হবে না। পরিবর্তন করতে হবে সবাইকে মনোভাব।’ শরিফুল মওলা রিগান নামে একজন ফেসবুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নতুন পোশাকের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘র্যাব পুলিশের চেয়েও আনসারকে অনেক স্মার্ট দেখাচ্ছে।’
অসন্তোষ : আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে কর্মরত সদস্যরাও নতুন ইউনিফর্ম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোনালি রঙের শার্ট-প্যান্ট নির্ধারণ করা হয়েছে আনসারের জন্য। রংপুরে কর্মরত আনসারের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ কালো প্যান্ট পেয়েছে। আনসারকে খাকি প্যান্ট দিয়ে বৈষম্য করা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশের পোশাকের রং হচ্ছে ‘আয়রন।’ ঢাকায় কর্মরত পুলিশের একজন পরিদর্শক বলেছেন, ‘এ ধরনের পোশাক মূলত মালয়েশিয়ায় ব্যবহার হয়ে থাকে। আগের পোশাকের চেয়ে এটি আরও খারাপ হয়েছে।’ পুলিশে কর্মরত কয়েকজন বলেন, নতুন এই পোশাকের রং নির্ধারণের আগে তাদের সবার মতামত নেওয়া হয়নি। ঢাকার রাজারবাগে কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি নিয়ে পাবলিক ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে আমাদের মতামত নেওয়া হয়নি। তেমন কোনো সার্ভে করা হয়নি।’ র্যাবে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আগে কালো পোশাক দেখে মানুষ র্যাবকে ভয় পেত। নতুন পোশাক পরে রাস্তায় বের হলে এখন মানুষ দেখে হাসবে।’ ডিএমপির গুলশান বিভাগের এক থানায় কর্মরত পুলিশের এক পরিদর্শকের ভাষ্য, ‘পোশাক পরিবর্তন করে মানসিকতায় পরিবর্তন আনা সম্ভব না।’ তার প্রশ্ন, ‘এখনো ডিসি-ওসি রাজনৈতিক দলের গোলামি বন্ধ করেনি, চেয়ারের লোভে তারা আগের সরকারের সঙ্গে যা করত, এখনো তাই করছে চেয়ার ধরে রাখার জন্য।’ আপনি কেবল পোশাক বদলে সবকিছুর পরিবর্তন আনবেন কীভাবে?’