Image description
 

কষ্ট আর ভয়ের স্মৃতি যদি মুছে ফেলা যায়, অনেক ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসা করা সহজ হয়ে যায়। ঠিক সেই উপায়টিই খুঁজে পাওয়ার কথা বলছেন একদল বিজ্ঞানী।

গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’ বা পিএনএএস-এ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মধুর স্মৃতিগুলো পুনরায় সক্রিয় করার মাধ্যমে বেদনার স্মৃতিগুলোকে যে দমিয়ে রাখা সম্ভব, এ গবেষণায় তারা সেটাই দেখতে পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক গবেষক দলটি কীভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন, তা তুলে ধরা হয়েছে সায়েন্স অ্যালার্টের এক প্রতিবেদনে।

বেশ কয়েকদিন ধরে চলা এ গবেষণায় ৩৭ জন স্বেচ্ছাসেবী অংশ নেন। তাদের কিছু ছবি দেখানো হয়, যেগুলো সাধারণভাবে ভালো বা মন্দ অনুভূতি জাগায়। তার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন কিছু শব্দ দিয়ে তাদের ছবি আর শব্দে মেলাতে বলা হয়। দ্বিতীয় ধাপে অর্ধেক শব্দকে খারাপ ছবির বদলে মেলানো হয় ভালো অনুভূতি জাগানো ছবির সঙ্গে। গবেষণাপত্রে বলা হয়, “গবেষণায় আমরা দেখতে পেয়েছি, এই পদ্ধতি বাজে স্মৃতি মনে পড়ার প্রবণতা কমিয়ে আনে। পাশাপাশি অবচেতনভাবে ভালো স্মৃতির মনে করার প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে।”

এ গবেষণার জন্য এমন সব ছবির একটি সেট ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলো দেখলেই খারাপ বা ভালো ছবি হিসেবে চিহ্নিত করে মানুষ। যেমন নির্মল প্রাকৃতি দৃশ্য বা হাসিখুশি শিশুর ছবি হল ভালো ছবি। আর মানব শরীরের ক্ষতস্থান কিংবা বিপজ্জনক কোনো প্রাণীর ছবি হল খারাপ ছবি। পাশাপাশি এলোমেলো একসেট শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলো বিশেষভাবে বাছাই করা হয়েছে এ গবেষণার জন্য।

গবেষণার প্রথম রাতকে বিজ্ঞানীরা বলছেন ‘মেমোরি ট্রেনিং’ পর্ব। এ পর্বে ওই সেটের বাজে অনুভূতি জাগানো ছবিগুলোর জন্য শব্দের সেট থেকে একটি করে শব্দ বেছে নিতে বলা হয়। অর্থাৎ, ওই শব্দটি শুনলে তাদের ওই বাজে ছবিটি মনে হবে। এরপর তাদের ঘুমাতে দেওয়া হয়, যাতে ঘুমের মধ্যে নতুন শব্দ আর ছবিগুলো তাদের স্মৃতিতে থিতু হতে পারে।

পরদিন গবেষকরা অর্ধেক শব্দের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবীদের বেছে নেওয়া বাজে ছবিটি বদলে দিয়ে তার জায়গায় ঠিক করে দেন একটি ভালো ছবি। অর্থাৎ, যে শব্দটি শুনলে তাদের বাজে স্মৃতি জেগে উঠত, সেই শব্দটিই এখন স্মৃতিতে ভালো কোনো ছবি দেখাবে। গবেষণার দ্বিতীয় রাতে ঘুমানোর সময় স্বেচ্ছাসেবীদের ওইসব শব্দের রেকর্ডিং শোনানো হয়, যেগুলোর বাজে ছবি বদলে তাদের ভালো ছবির স্মৃতি দেওয়া হয়েছে। ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি ব্যবহার করে তাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপও পর্যবেক্ষণ করেন গবেষকরা। দেখা যায়, ওইসব শব্দ শোনানোর সময় অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের ‘থিটা-ব্যান্ড অ্যাকটিভিটি’ বাড়ছে। ভালো ছবির শব্দ শোনার সময় গ্রাফে দেখা যাচ্ছে লাফ।

পরদিন এবং বেশ কয়েক দিন পর গবেষণায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়, যাতে তাদের অভিজ্ঞতার পরিবর্তনগুলো বোঝা যায়। গবেষকরা দেখতে পান, অংশগ্রহণকারীরা ভালো স্মৃতির সঙ্গে মিশে থাকা খারাপ স্মৃতি কম মনে করতে পারছেন। যেসব শব্দ তাদের দ্বিতীয় রাতে শোনানো হয়েছিল, সেসব শব্দ মনে করিয়ে দিলে খারাপের চেয়ে ভালো স্মৃতিই তাদের মনে বেশি ভেসে উঠছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো অস্ত্রপাচার ছাড়াই যে ঘুমের মধ্যে কারো চিন্তা পরিবর্তন করার মাধ্যমে বাজে স্মৃতি বা অনুভূতি বদলে দেওয়া যেতে পারে, এ গবেষণায় সেটাই দেখা গেছে।

গবেষকরা বলছে, গবেষণাটি এখনও প্রথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এটি ছিল কেবল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত একটি ল্যাব পরীক্ষা। ফলে বাস্তব জগতের চিন্তাভাবনা ও ভালো-মন্দ স্মৃতি গঠনের প্রতিফলন নয় এটি। ঘুমের মধ্যে অল্প সময়ের জন্য মস্তিষ্ক মানুষের অভিজ্ঞতাকে ফিরিয়ে এনে তা স্মৃতি হিসেবে সঞ্চয় করে। কীভাবে এ প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করে খারাপ স্মৃতি মুছে ফেলে ভালো স্মৃতি জাগিয়ে তোলা যায়, তা নিয়ে আরো অনেক গবেষণা এর আগে হয়েছে।

তথ্য সূত্র-  ইয়াহু ডট কম।