প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। সব ভেঙ্গে বলার দরকার নেই, নানাবিধ প্রতিকূলতা। ধীরে ধীরে স্লো এ্যান্ড স্টিডি এ প্রিন্সিপাল ফলো করে এগিয়ে যাচ্ছি।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের দ্বিতীয় পর্বে স্বাগত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিকালে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নেয় জাকের পার্টি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিশ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি–জাগপা। তিন দিনে প্রতিদিন দুই পর্বের ধারাবাহিক সংলাপের অংশ ছিল এই বৈঠক। সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ ইসির উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন “অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। সব ভেঙ্গে বলার দরকার নেই, নানাবিধ প্রতিকূলতা। ধীরে ধীরে স্লো এ্যান্ড স্টিডি এ প্রিন্সিপাল ফলো করে এগিয়ে যাচ্ছি এবং সাকসেসফুলি আগাতে পেরেছি এ পর্যন্ত। জাতিকে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ভোট প্রস্তুতির অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি জানান, প্রবাসীদের ভোট কাভার করা বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জে। আমরা লাগসই মডেল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের ভেতরে তিন ধরনের ব্যক্তিদের ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে পোস্টাল ব্যালটে।
“আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই, আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। সব ধরনের চ্যালেঞ্জ আন্তরিকতা, ধৈর্য্য ও সাহসের সাথে মোকাবেলা করছি। ভবিষ্যতেও মোকাবেলা করতে প্রস্তুত রয়েছি। এক্ষেত্রে দলগুলোর সহযোগিতা দরকার। ভোটের আগে, ভোটের দিন ও ভোটের পরেও সহযোগিতা নিয়ে এগোতে হবে।”
সিইসি জানান, ভোটারদের উপর দলের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। ইসির পক্ষ থেকে সভা, সেমিনারসহ নানা উদ্যোগ থাকবে। পাশাপাশি দলের সহযোগিতা তৃনমূলেও প্রয়োজন।
সংলাপে দল গুলো যা বলেছে
জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার বলেন, “এত সুন্দর আচরণবিধির উপর আস্থা রাখতে চাই আমরা। তফসিল ঘোষণার পর কালো টাকার প্রভাব ও পেশীশক্তির দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। সত্যিকার অর্থে বিতর্কমূক্ত নিশ্চিত করতে হলে যে কোনো মূল্যে কালো টাকার প্রভাব বন্ধ করতে হবে; তা না পারলে তামাশার নির্বাচন হবে।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব আব্দুস সামাদ বলেন, “ অর্থবহ নির্বাচন না হলে , এটা যদি যে লাই সে কদুর নির্বাচন হলে নির্বাচনী সংস্কৃতি উঠে যাবে। ইসির স্বাধীনতা, কৌলশ যত মজবুত হবে প্রায়োগিক দিক থেবে ভালো হবে। এখনও ইসির স্বাধীনতা প্রমাণের সময় রয়েছে।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবালয়ের টেবিল থেকে ইসি নিয়ন্ত্রিত হয়, সে নির্বাচন কমিশন কখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। সে নির্বাচন কমিশন দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।
ইসির স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন,“ইতোমধ্যে দেখেছি আজ একটা সিদ্ধান্ত নেন, বিশেষ করে একটি দলের প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে; কিন্তু দেখলাম উনারা উনাদের অবস্থান ঠিক রাখতে পারে নি। এতে ইসির স্বাধীনতা, দৃঢ়তা প্রশ্নবদ্ধ হয়েছে। ইসি স্বাধীন নয় বুঝতে পেরেছি, ইসি স্বাধীন না হলে জাতির কাছে সে নির্বাচন জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না” বলেন মহাসচিব।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহ সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, “জোটব্ধ নির্বাচন করলেও নিজ প্রতীকে ভোট করার বিধান সাহসী সিদ্ধান্ত হয়েছে ইসির।”
খেলাফত মজলিশের যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসীর আলী জানান, তফসিল ঘোষণার দিন থেকে যৌথ বাহিনীকে মাঠে রাখতে হবে। নির্বাচনের তিন আগে সেনা মোতায়েন ও ইউনিয়নে একটি করে ক্যাম্প রাখলে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে।
আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ আচরণবিধিতে সাংঘর্ষিক বিষয় রয়েছে উল্লেখ করে জানান, আইন ও আচরণবিধি ইসির কর্মপরিকল্পনা আরও স্পষ্ট করতে হবে। নির্বাচন কমিশন প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় বহন না করলেও অনুদান নেওয়া বন্ধ রাখায় সমালোচনা করেন তিনি।
গুরুত্বপূরর্ণ সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা থাকতে পারবেন না- এ বিধানের সমালোচনা করে এবি পার্টির এ নেতা বলেন, “যেমন ধরেন, এলাকায় হাজার কোটি টাকার ব্রিজ হবে; অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে দেনদরবার করে একনেকে পাস করাইছি। …এলাকার ব্রিজের জন্য আমি যে পার্স্যু করেছি, যেদিন উদ্বোধন করবে সেদিন আমি থাকতে পারবো কিনা। আমি চেষ্টা করেছি এলাকাবাসীকে জানাতে পারবো না, এটা কি খুব অন্যায় কাজ? আপনি আমার হাত পা বেঁধে দিচ্ছেন।”
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাড. এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম চান জানান, সংসদ ও গণভোট একসাথে হচ্ছে। গণভোটের ব্যালট আগে ইস্যু করে পরে সংসদ নির্বাচনের ব্যালট ইস্যু করা গেলে ভালো। একসাথে দিলে হ্যাঁ/না ভোট খালি আসবে বলে ধারণা করেন তিনি।
‘সহযোগিতা করলে আলহামদুলিল্লাহ, অসহযোগিতা করলে ইন্নলিল্লাহ’
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ জানান, “হোটা নির্বাচন প্রসেসের অক্ষমতার কথা বলি। অক্ষমতাটা কোথায় আপনাদের অসহযোগিতা। আপনার সহযোগিতা করলে আলহামদুল্লিাহ! আর অসসহযোগিতা করেন ইন্নালিল্লাহ।
তিনি বলেন, গোটা জাতি একাট্টা থাকলে, গোটা জাতি চাচ্ছে নির্বাচন সুন্দর হোক। আশা করি, সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, আমরা পারবো ইনশাহআল্লাহ। আপনারা সহযোগিতা করবেন।”
নির্বাচন কমিশনার মো. আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ৫ অগাস্ট ও আগে হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারের কাজ চলমান উদ্ধার চলমান রয়েছে। তফসিলের পর থেকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী নিয়োজিত থাকবে মাঠে। ১৮ নভেম্বর পোস্টাল ভোট বিডি নিবন্ধণ অ্যাপ উদ্বোধনের কথা তুলে ধরে তিনি জানান,
সোশাল মিডিয়ায় অপপ্রচার, মিতথ্য তথ্যের বিষয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “ভালো তথ্য দিয়ে খারাপ তথ্যকে হ্যান্ডেল করতে হবে। যেসব চিহ্নিত করতে পারবো তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। মিথ্যা তথ্য শেয়ার করবেন না, সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের দিক থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
নির্বাচনী আইন-বিধির নতুন নতুন দিকগুলো তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “আমরা যে পারি-সেটার জন্য আমরা দলের সঙ্গে বসেছি। আপনাদের আচরণবিধি অনুসরণে সহযোগিতা করতে হবে। আচরণবিধি প্রতিপালনে আমরা কঠোর ভূমিকা যাবো, কাউকে ছাড় দেবো না। তফসিল ঘোষণার পরে কঠোর হবো, অন্যায়ের ক্ষেত্রে আমরা চিনবো না।”
বেশি সমালোচনা করবেন না: সমাপনী বক্তব্যে সিইসি
দলের নানা ধরনের প্রশ্নের প্রসঙ্গ টেনে জবাবে সমাপনী ভাষণের সিইসি বলেন, “তফসিল ঘোষণার পর অনেকগুলো পরিপত্র জারি হবে, সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।…সব কিছু মিলিয়ে আমাদের প্রস্তুতি, সীমাবদ্ধতার মধ্যে চেষ্টার ত্রুটি নেই। মুখে যা বলছি তা-ই নিয়ত। সবাইকে নিয়ে নিয়ত ফুলফিল করতে পারবো। আল্লাহ তালাহ সাহায্য করবেন যেহেতু আমাদের নিয়ত সাফ। সবার সহযোগিতা চাই।”
ইসির সমালোচনা কম করার অনুরোধ জানিয়ে
সিইসি বলেন, “আমাদের বেশি সমালোচনা করবেন না। যে টুকু ভালো কাজ এটুকু প্রশংসা করবেন।
আগামী বুধবার (১৯ নভেম্বর) জামায়াত, বিএনপি ও এনসিপিসহ ১২ দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ রয়েছে।