Image description

গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত না দিলে সেটি প্রত্যর্পণ চুক্তির লঙ্ঘন হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ আইনসহ সমসাময়িক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রত্যর্পণের জন্য চিঠি লিখেছি। এরপর ভারত যদি শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করে তবে সেটি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে প্রত্যর্পণ চুক্তি তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে। এ ব্যাপারে আমরা বিশ্বসমাজে কী পদক্ষেপ নেবো সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঠিক করা হবে। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। আমাদের যা যা করণীয় আমরা করে যাচ্ছি। আরও কিছু করণীয় থাকলে ক্ষেত্র বিশেষে চিন্তা করে আমরা করবো। এদিকে ডিজিটাল মাধ্যমে মতামত প্রকাশ করায় ‘স্পিচ অফেন্স’ হিসেবে আওয়ামী লীগের আমলে সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা ৩৩২টি মামলার ১১৩টি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা। বাকি সব মামলা (২১৯টি) আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। তিনি বলেন, আপনারা জানেন সাইবার সিকিউরিটি আইন নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। এই আইন প্রত্যাহার বা সংশোধনের কাজটি করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তারা যখন আমাদের পরামর্শ চান তখন পরামর্শ দেই। সাইবার সিকিউরিটি আইনের ব্যাপারে বিভিন্ন রকম পরামর্শ এসেছে। যতবারই খসড়া করা হয় দেখা যায় কারও না কারও আপত্তি আছে। সেজন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় হয়তো চিন্তা করেছে আরও বিস্তারিত আলোচনা করবে।

উপদেষ্টা বলেন, এজন্য তো বসে থাকা যায় না। সাইবার সিকিউরিটি আইনে যে মামলাগুলো হয়েছে, এই মামলাগুলো প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি। এটাই তো মূল বিষয়। আস্তে ধীরে আলোচনা করে আইনটি সংশোধন বা বাতিলের বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের অধীনে যে স্পিচ অফেন্স (মত প্রকাশ করার অপরাধ) আছে সেই মামলাগুলো প্রত্যাহারের উদ্যোগ এরইমধ্যে গ্রহণ করেছি। আসিফ নজরুল বলেন, আমরা তালিকা করে দেখেছি বিগত সরকারের সময় করা ৩৩২টি স্পিচ অফেন্সের মামলা চলমান। এরমধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। যে ৩৩২টি মামলা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা আছে। ৩৩২টি মামলার মধ্যে পাবলিক প্রসিকিউটরের মাধ্যমে এরইমধ্যে ১১৩টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত যতগুলো মামলা আছে সব প্রত্যাহার করা হবে। এরইমধ্যে আমরা প্রায় অর্ধেক মামলা প্রত্যাহার করেছি। আর আইনের বিষয়ে কী করা হচ্ছে সেটি আপনারা অচিরেই তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে জানতে পারবেন।

এর আগে গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হয়। এরইমধ্যে তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে তৎপরতা চালাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ২৩শে ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে দিল্লিকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা। ওইদিনই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ঢাকার পাঠানো কূটনৈতিক চিঠি পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে তাকে ফেরত দেয়ার বিষয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।