Image description
আগের গণভোট সহজ হলেও চার প্রশ্ন কিছুটা জটিল: আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী * একেবারেই বুঝতে পারবে না এটি ঠিক নয়: ড. মাহবুব উল্লাহ * চার প্রশ্ন বুঝতে আমাদেরই অসুবিধা হচ্ছে: দিলারা চৌধুরী * শতকরা ২০ ভাগ ভোটার এটি বুঝতে পারবে: শাহদীন মালিক

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সম্মতি আদায়ে অনুষ্ঠেয় গণভোটের জন্য সরকার চারটি প্রশ্ন নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এই চারটি প্রশ্ন পড়ে এবং বুঝে দেশের শতকরা কতজন মানুষ সম্মতি দিতে পারবে। তাছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই বিরোধ রয়েছে, সেখানে সমর্থক ভোটারদের ভোট দিতে তারা উৎসাহিত করবেন কি না সে প্রশ্নও রয়েছে।

এদিকে সচেতন জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি সুধী সমাজের মধ্যেও এ প্রশ্নে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। তাদের কারও মতে, বাংলাদেশের মতো অনগ্রসর একটি দেশে গণভোটের জন্য চারটি প্রশ্ন নির্ধারণ করে দেওয়া অত্যন্ত জটিল একটি প্রক্রিয়া, যার সুফল পাওয়া খুব সহজ হবে না। আবার কেউ বলছেন, চার প্রশ্ন সবাই বুঝতে না পারলেও কেউ কেউ পারবে। তবে যারা বুঝতে পারবেন তারা সবাই চার প্রশ্নের সঙ্গে একমত না হলে কী করবেন সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় কেউ কেউ এর সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে করা এবং উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের কথা বলে জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপি উভয় দলকে খুশি করা হয়েছে। কিন্তু এটি করতে গিয়ে জুলাই সনদকে কঠিন করে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এবং ভোটারদের মনস্তত্ত্ব বুঝে চার প্রশ্ন তৈরি করা হয়নি। সাধারণ মানুষ জুলাই সনদের বিষয়ে খুব বেশি অবহিত নয় বলে তারা মনে করেন।

দার্শনিক সক্রেটিসের মতে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো সত্যের সন্ধান করা। আমেরিকার স্বাধীনতার জনক ও তৃতীয় প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনের মতে, মানুষ যখনই ভালোভাবে অবহিত (ওয়েল-ইনফর্মড) হয়, তখনই তাদের নিজেদের সরকারের ওপর আস্থা রাখা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, চার প্রশ্ন সম্পর্কে জনগণকে বোঝাতে পারলে তারা হয়তো বুঝতে পারবে। একেবারেই পারবে না এটি যেমন ঠিক নয়, তেমনি ষোলো আনা পারবে সেটিও ঠিক নয়। তবে একটু কঠিন হবে। যুগান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ বুদ্ধিমান আছে। তারা মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন অ্যাপস তো ভালোই চালায়। আবার এটিও ঠিক, চারটি প্রশ্নের জন্য ব্যাপকভাবে প্রচারণা না চালাতে পারলে সাড়া পাওয়া কঠিন হবে। তবে রেডিও-টেলিভিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবাই প্রচার চালালে জনগণ বুঝে উঠতে পারবে। তারপরও কিছু মানুষ বুঝবে না। এটিও সবাইকে বুঝতে হবে যে, সরকারের এই পথে হাঁটা ছাড়া আর কোনো সমাধান ছিল না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর মতে, আগের গণভোটের প্রশ্নটা বোঝা সহজ হলেও চার প্রশ্নের বিষয়টি বোঝা কিছুটা জটিল। এই প্রশ্ন বুঝতে হলে মানুষকে আর একটু ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে তাদের বোঝাতে হবে। সবার বোধগম্য হয় এমন ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি আছে। জনগণকে বোঝাতে সক্ষম না হলে গণভোট করা কঠিন হবে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, যাতে তারা গণভোট প্রশ্নে জনসচেতনতা তৈরি করে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘চারটি প্রশ্ন দিয়ে সরকার পরিস্থিতি জটিল করেছে। কাদের পরামর্শে এটা করা হলো সেটি একদিন ইতিহাস থেকে জানা যাবে। এই গণভোটের কোনো মানে নেই। এটি আমাদেরই বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। তাহলে সাধারণ মানুষ কী করে বুঝবে। বাংলাদেশের মানুষ এটি পড়ে বুঝে তারপর ভোট দেবে-যা অসম্ভব ব্যাপার বলে মনে হয়।’

সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, বিসিএসের মাল্টিপল চয়েস পরীক্ষায় এসব প্রশ্ন দেওয়া হলে ভালো হতো। এটি বুঝতে হলে শুধু অক্ষরজ্ঞান থাকলে হবে না। তাকে পড়ে বিষয়গুলো বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওনাদের শখ হয়েছে ওনারা করেছেন আর কী!

তিনি বলেন, ‘একদিনেই এখন গণভোট ও সংসদ নির্বাচন থাকায় দুটি ব্যালট পেপার থাকবে। আমার ধারণা, গণভোটের ব্যালট পেপারে কেউ সিল মারবে না। এটি পড়ে-বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। দেশে এই মুহূর্তে যে অবস্থা তাতে শতকরা ১০ ভাগের বেশি লোক এটি বুঝতে সক্ষম বলে মনে হয় না। সরকারের পক্ষ থেকে তিন মাস প্রচার-প্রচারণা এবং রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে উদ্যোগী হলে বড়জোর শতকরা ২০ ভাগ লোক এটি বুঝতে বা গ্রহণ করতে পারে। এর বেশি কোনোমতেই সম্ভব নয়।’

‘আর শতকরা ৫০ ভাগ ভোট কাস্ট হলে সেখানে পাঁচ-সাত ভাগের বেশি ভোটার গণভোটের ব্যাপারে কিছু বলবে না। না বুঝে কেউ হ্যাঁ বা না বলে দেবে বলে মনে হয় না। তারা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিলেও গণভোটের জায়গাটা ফাঁকা রাখবে’-যোগ করেন সিনিয়র এই আইনজীবী।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে বলে বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের জন্য চারটি বিষয় উপস্থাপন করে একটিমাত্র প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে জনগণের মতামত জানতে চাওয়া হবে।

ভোটারদের জন্য চার প্রশ্ন হলো : প্রথমত, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।

দ্বিতীয়ত, আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।

তৃতীয়ত, সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।

চতুর্থত, জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে বলে উল্লেখ থাকবে।

গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠিত হবে বলে ঘোষিত জুলাই আদেশে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, এই প্রতিনিধিরা একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ হতে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত।

ইংরেজি ‘রেফারেন্ডাম’-এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘গণভোট’। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে জনগণ সরাসরি ভোট দেওয়ার মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে তাদের মতামত দিয়ে থাকে। এটি মূলত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনমত যাচাইয়ের জন্য গণভোটকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়। সংবিধান সংশোধন, আইন তৈরি, রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা, এমনকি শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রেও গণভোটের আয়োজন করা হয়। ব্যালটে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোটের মাধ্যমে গণভোট নেওয়া হয়।

শাহদীন মালিকের মতে, যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত একটি দেশেও ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে নাকি বেরিয়ে যাবে এমন প্রশ্নে শুধু পক্ষে-বিপক্ষে ভোট হয়েছিল। অথচ আমাদের মতো দেশে চারটি প্রশ্ন জুড়ে দিয়ে গণভোট জটিল করা হয়েছে।

সাম্প্রতিককালে বিশ্বের আলোচিত গণভোট ‘ব্রেক্সিট’ নামে পরিচিত, যেটি কার্যকর হয় ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এর চার বছর আগে যুক্তরাজ্যের ইইউতে থাকা না থাকা নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুক্তরাজ্যবাসী ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যায় দেশটি।

দিলারা চৌধুরীর মতে, গণভোট সব সময় হ্যাঁ এবং না দিয়ে হয়। এর আগে তিনটি গণভোটই একটি প্রশ্নের ওপর সম্মতির জন্য করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের সময়ে বলা হয়েছে, তার সময়ে যেসব কর্মসূচি বা কার্যক্রম করা হয়েছিল জনগণ সেগুলো অনুমোদন করে কি-না।

স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দেশে মোট তিনবার গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রশাসনিক গণভোট এবং আরেকটি সাংবিধানিক গণভোট। প্রথম গণভোট হয়েছিল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৭ সালের ৩০ নভেম্বর। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বৈধতা দিতে অনুষ্ঠিত ওই গণভোটে ৮৮ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছিল ৯৮ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে ‘না’ ভোট পড়েছিল ১ দশমিক ১ শতাংশ।

১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ দেশে দ্বিতীয় গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়ে। তার নীতি ও কর্মসূচি এবং স্থগিত সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার দায়িত্ব পালনের বিষয়ে জনগণের আস্থা আছে কি-না, তা যাচাইয়ের জন্য ওই গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এই গণভোটে ভোট পড়েছিল ৭২ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে ‘হ্যাঁ’ ভোট ছিল ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ‘না’ ভোট ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তৃতীয় গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। ‘তিন জোটের রূপরেখা’ অনুযায়ী জাতীয় সংসদে গৃহীত সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠার পর সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকা প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ সম্মতি দেবেন কি-না, সে প্রশ্নে দেশব্যাপী গণভোট আয়োজনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ওই গণভোট পড়ে ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে এক কোটি ৮৩ লাখ আট হাজার ৩৭৭ জন ভোটার সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে, অর্থাৎ ‘হ্যাঁ’ ভোট দেন। এই হার ৮৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অন্যদিকে ৩৩ লাখ ৯০ হাজার ৬২ জন ভোটার ‘না’ ভোট দেন। অর্থাৎ তারা রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। ‘না’ ভোটের হার ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।

চতুর্থ গণভোট আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ভোটারদের উৎসাহিত করতে রাজনৈতিক দলগুলো কতটা উদ্যোগ নেবে এ বিষয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে। তাদের মতে, বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের ভোটারদের বড় অংশ নির্বাচনি প্রতীক দেখে এতকাল ভোট দিতে অভ্যস্ত ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে চার প্রশ্ন পড়ে কীভাবে তারা ভোট দেবেন সে আলোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছে ২৪৮ বছর আগে। ইউরোপ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছিল আরো আগে। তাদের মতে, আগে কমপক্ষে ভারতের গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের মডেল হিসেবে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মডেলকে অনুসরণ করা উচিত। তারপর না হয় পশ্চিমা গণতন্ত্রের চর্চা হোক। তারা বলছেন, উন্নত গণতান্ত্রিক চর্চার মতো সামাজিক অবস্থা বাংলাদেশে এখনো তৈরি হয়নি।

দিলারা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষিতের যে হার তাতে কতজন মানুষ এটি বুঝতে পারবে সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমার ধারণা, বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ এই প্রশ্ন বুঝতে পারবে না। তিনি বলেন, জুলাই সনদ তৈরির আগে-পরে ব্যাপক প্রচারণার প্রয়োজন ছিল। বিভিন্ন মানুষ আমাকে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চাইছে। আমি তাদের বলছি, এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। তাছাড়া এই ভোট গণনা করতে একমাস সময় লাগবে। সরকার এটি ইচ্ছা করে নাকি না বুঝে করছে বুঝতে পারছি না।

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সাত বছর ও তার ওপর জনগোষ্ঠীর নিরক্ষরতার হার প্রায় ২২.১ শতাংশ। এর মানে দেশে সাক্ষরতার হার ৭৭.৯ শতাংশ।

পর্যবেক্ষকদের মতে, রাষ্ট্রব্যবস্থা বা শাসকের পরিবর্তন সহজ। স্বাধীনতার জাদুকরি মন্ত্রে জনপ্রিয় গণজোয়ার ঘটিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে বহু প্রাণ বলি দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনও সম্ভব। কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এর চেয়ে অনেক কঠিন। এর জন্য সমাজকে পরিবর্তন ও উন্নয়ন করতে হয়, যা একটি ধারাবাহিক ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া।