Image description

একটি জাতীয় দৈনিকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ভারত সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট থেকে চোরাই চ্যানেলে দেশে প্রবেশ করে ককটেল তৈরির প্রধান উপাদানগুলো — পটাশিয়াম ক্লোরেট ও সালফার। এসব কাঁচামাল পুরান ঢাকার রাসায়নিক বাজার হয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে পৌঁছে যাচ্ছে এবং সেখানে ককটেল তৈরি করে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সন্দেহ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সনেশনাল ক্রাইম ইউনিটের বোম ডিসপোজাল বিভাগ জানিয়েছে, কয়েকদিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সেই অনুসন্ধানে প্রকাশ হয়েছে, সীমান্তে ছোট চালানে এসব রাসায়নিক আনা হয়; এরপর পুরান ঢাকার মিডফোর্ড ও চাংখারফুলের রাসায়নিক বাজারের মাধ্যমে মালামাল জড়ো করে মোহাম্মদপুরের কিছু ক্যান্টনমেন্ট-ঘেঁষা এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জেনেভা ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকায় অন্তত ২২ জন ককটেল কারিগর সক্রিয় আছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্বে দুই ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে — সেলিম (চুয়া সেলিম) ও সোহেল (বুনিয়া সোহেল)। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগে ককটেল এক থেকে দুই হাজার টাকায় পাওয়া যেত; বর্তমানে দাম বাড়ে ৩ হাজার টাকারও বেশি, চলমান সহিংসতায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কারিগরদের কদর বেড়েছে।

 

বোম নিষ্পত্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচলিত সালফার-ভিত্তিক ব্ল্যাক পাউডার ব্যবহার করে তৈরি এসব ককটেলগুলোতে এখন কাচের টুকরো বা লোহার স্প্লিন্টার মেশানো হচ্ছে — ফলে বিস্ফোরণে পরিস্থিতি মারাত্মক আঘাতের দিকে যায়।

 

অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, জেনেভা ক্যাম্প বহু বছর ধরেই এলাকাগত আধিপত্য বিস্তার, মাদক কারবার ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত। এখন সেই ক্যাম্পের কারিগররাই রাজধানীর রাজনীতি ও যেকোনো জনসম্মেলনের সময় সঙ্কটে পড়লে ককটেল সরবরাহের চেইন হিসেবে কাজ করছে বলে পুলিশের তদন্ত সন্দেহভাজন করেছেন।

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, সাম্প্রতিক বিস্ফোরণগুলোর পেছনে এই গ্রুপের কর্মীরা সরাসরি জড়িত থাকতে পারে; ধানমন্ডি ও তেজগাঁওয়ের ককটেল হামলার সঙ্গে তাদের কিছু নাম জড়িত থাকার প্রাথমিক সন্দেহ আছে। ইতোমধ্যে রাজধানীতে বিস্ফোরক সংক্রান্ত অন্তত ১৭টি মামলা দায়ের হয়েছে; গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মী ও নগদ টাকার বিনিময়ে ককটেল বহনে ব্যবহার করা কিছু কিশোরও।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, বিষয়টি টেরোরিজম-প্রবণ ও অরাজনৈতিক অপরাধের সীমা ছাড়িয়ে দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলছে — তাই সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার, রাসায়নিক আমদানি-বিক্রি নজরদারি ও ক্যাম্প-নির্ভর গেরিলা কিটচেন ভেঙে দেওয়াই এখনান্ত জরুরি।