Image description

আমরা রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু আমাকে কেউ স্মরণ করে না। এভাবে আক্ষেপ করে আমার দেশ’র প্রতিনিধিকে বলছিলেন হবিগঞ্জের বাহুবলের তানভীর। কোনো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বা উপজেলা প্রশাসনের কেউ খোঁজ নেয়নি। সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তানভীরের মা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই ঢাকার রাজপথে সক্রিয় ছিলেন হবিগঞ্জের বাহুবলের বাসিন্দা তানভীর আহমেদ। সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র তানভীর। তিনি ১৮ জুলাই বিকেলে ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হন।

দুই পায়ে গুলি এবং কপালে রাবার বুলেটের আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান পিচঢালা রাজপথে। সহপাঠীরা উদ্ধার করে নিয়ে ভর্তি করেন মিরপুর ২ জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে। তিনঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরলে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করেন। মিছিলে অংশগ্রহণ, পায়ে গুলি, মাথায় রাবার বুলেট লাগার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারানোর কারণে দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কী হয়েছে মনে নেই তার।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ গ্রেপ্তার অভিযান চালায়। এ সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতাল থেকে পালাতে বাধ্য হন। ১৩ দিন পর বাড়ি এসে গোপনে চিকিৎসা নেন। এখনো তার শারীরিক সুস্থতা ফিরেনি।

তানভীরের গ্রামের বাড়ি উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের পূর্ব ভাদেশ্বর গ্রামে। কথা হয় তানভীর আহমদের মা রুজিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, তানভীরের বাবা মারা যান ২০১৪ সালে। এরপর থেকে একমাত্র ছেলে তানভীরসহ এতিম তিন সন্তানকে নিয়ে শুরু হয় এক অজানা জীবনযুদ্ধ। তবুও হাল ছাড়েননি রুজিনা। বড় মেয়ে আনিকা আক্তারকে বিয়ে দেন।

ছেলে তানভীর ও ছোট মেয়ে অনামিকা আক্তারকে পড়ালেখায় মনোযোগী করে তুলেন। অভাবের সংসারে স্বামী আজগর আলী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে ভুল করেননি রুজিনা। স্থানীয় হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর তানভীরকে ভর্তি করান বাহুবলের আলিফ সোবহান চৌধুরী সরকারি ডিগ্রি কলেজে। বিএ অনার্সে পড়ছে তানভীরের ছোট বোন অনামিকা আক্তার।

এদিকে তানভীর এ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে আইন বিভাগে ভর্তি হন। আর সেখানে অবস্থানকালেই জুলাই বিপ্লবের একজন অগ্রসৈনিক হিসেবে অংশ নেন মিছিল-সমাবেশে। ১৮ জুলাই পুলিশের গুলিতে আহত হন মিছিলে ।