ঘুরতে কিংবা কাজের জন্য বিদেশ যেতে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের মানতে হচ্ছে হাজারটা শর্ত। আর একই সাথে দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে বৈদেশিক শ্রমবাজার। গত এক বছরে যেন এভাবেই বাংলাদেশি পাসপোর্টের মান তলানিতে এসে ঠেকেছে। কেউ কেউ মনে করছেন দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতে বাংলাদেশিদের ওপর আস্থা হারাচ্ছে বিদেশিরা।
থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুর কিংবা শ্রীলঙ্কা-মালদ্বীপ-ইন্দোনেশিয়া। বিদেশ ভ্রমণে বাংলাদেশিদের পছন্দের তালিকায় থাকলেও কঠিন হচ্ছে এ যাত্রা। পর্যটকদের সিংহভাগ ভিসা প্রক্রিয়ার কাজটি ট্রাভেল এজেন্সি করলেও দিনকে দিন বাড়ছে শর্তের বেড়াজাল।
সব শর্ত মেনে ভিসার আবেদন করার পরও মেলে না ট্রাভেল পাস। কিছু দিন আগেও যেখানে ১০ দিনের মধ্যে ভিসা পাওয়া যেতো সেখানে এখন সময় লাগছে দেড় দুই মাস।
পর্যটকদের কেন এমন জটিলতায় পড়তে হয়? জবাবে ভিসা প্রক্রিয়াকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা জানান, কঠিন শর্তের কথা। এ অবস্থার প্রভাব পড়েছে ট্যুরিজমখাতে।
আগে ভালো প্রোফাইল যদি হতো তাহলে সহজেই ভিসা পেয়ে যেত, জটিলতা হতো না। কিন্তু এখন ভালো প্রোফাইল হলেও ভিসা রিজেক্ট হচ্ছে বা পেন্ডিংয়ে রাখছে।
এয়ার বী হলিডেজের প্রধান নির্বাহী শামস উদ্দিন সোহাগ বলেন, ভিসাটাই যদি না হচ্ছে তাহলে তো আপনি পরবর্তী ধাপে যাবেন না। তাই আমাদের পুরো ব্যবসাটাই একদম স্লো হয়ে গেছে। এই ভিসার রেসিওটা কমে যাওয়ার কারণে।
এদিকে কাজের খোঁজে যারা বিদেশ যাচ্ছেন তাদের একমাত্র গন্তব্য এখন সৌদি আরব। গেলো এক বছরে চালু হয়নি নতুন শ্রমবাজার। এতে সরকারি উদ্যোগের ঘাটতি দেখছেন শ্রমশক্তি রপ্তানিকারকরা।
রাবিড সভাপতি আরিফুর রহমান বলেন, অ্যাম্বেসিগুলো সব দিল্লি নির্ভর। ভারত নির্ভর থেকে বেরিয়ে এখানে সকল অ্যাম্বেসি চালু করা এবং তাদের লেবার কন্সুল্যাট চাল করা, বিএসএস চালু করা। এটাকে মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা। এটা করলেই ইউরোপে যাওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলছেন, অবৈধভাবে অবস্থান ও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশিদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে বিদেশিরা।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, মালয়েশিয়া থেকে যাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে, আমাদের কর্তৃপক্ষ কি সেরকম অবস্থানে আছে যে, তারা প্রতিবাদ করতে পারবে, যে কেন তারা ফেরত পাঠাচ্ছেন? সেটা পারছেন না। কারণ তারা কিন্তু বৈধ আইনের ভিত্তিতেই তাদের ফেরত পাঠাচ্ছে। আইনের প্রয়োগটা যদি বিদেশের মাটিতে হতে পারে, আমাদের এখানে কেন হবে না।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের গ্লোবাল পাসপোর্ট সূচকে ১০৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১শ' তম। যা এখন বিশ্বের সপ্তম দুর্বলতম পাসপোর্ট হিসেবে বিবেচিত।