Image description
 

ভারতের রাজস্থানের জয়পুরের নীরজা মোদী স্কুল প্রাঙ্গণে ঘটে গেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। গত ১ নভেম্বর স্কুলের চার তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আমাইরা মীনা (৯)। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আমাইরার বাবা-মায়ের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাদের কন্যা স্কুলে সহপাঠীদের দ্বারা বুলিং, টিজিং এবং ‘যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ’ মৌখিক হেনস্তার শিকার হচ্ছিল। এ বিষয়ে বারবার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। 

 

আমাইরার মা শিবানী মীনা জানিয়েছেন, এক বছর আগে তিনি তার মেয়ের কান্নার একটি হোয়াটসঅ্যাপ অডিও রেকর্ড করেছিলেন। সেই ক্লিপে চতুর্থ শ্রেণির এই খুদে ছাত্রীকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শোনা যায়, আমি স্কুলে যেতে চাই না...আমাকে স্কুলে পাঠিও না।

মা শিবানী মীনার অভিযোগ, তিনি এই অডিওটি মেয়ের ক্লাস শিক্ষিকাকে পাঠিয়েছিলেন। এরপরেও গত এক বছরে তিনি একবার নয়, বহুবার ক্লাস শিক্ষিকা এবং ক্লাস কোঅর্ডিনেটরের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কিন্তু তার অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ হয় সেই কথা উড়িয়ে দিত, নয়তো সম্পূর্ণ উপেক্ষা করত।

আমাইরার বাবা বিজয় মীনা বলেন, একটি অভিভাবক-শিক্ষক বৈঠকের একদল ছেলে আমাইরা ও অন্য এক ছেলেকে লক্ষ্য করে ইশারা করছিল। বিজয় মীনার পেছনে তখন লজ্জায় লুকিয়ে পড়ে আমাইরা। তিনি বিষয়টি শিক্ষিকাকে জানান।

বিজয় মীনা বলেন, শিক্ষিকা আমাকে বলেছিলেন, এটি একটি সহশিক্ষা স্কুল এবং আমাইরার সব বাচ্চার সঙ্গে, এমনকি ছেলেদের সঙ্গেও কথা বলতে শেখা উচিত। আমি তাকে বলেছিলাম, ছেলের সঙ্গে কথা বলবে কি না, সেটা আমার মেয়ের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।

তদন্তকারীরা শ্রেণিকক্ষের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছেন। ফুটেজে দেখা যায়, রেলিং বেয়ে ঝাঁপ দেওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট আগেও আমাইরা দু’বার তার শিক্ষিকার কাছে গিয়েছিল। কিন্তু সে কী বলেছিল, তা জানা যায়নি, কারণ সিসিটিভি ফুটেজে কোনো শব্দ বা অডিও নেই।

আমাইরার কাকা সাহিল এ বিষয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, আমরা জবাব চাই। আমরা জানতে চাই, ৫ হাজার শিশু এবং ছয়তলা একটি ভবনে সুরক্ষার জন্য গ্রিল বা জাল ছাড়া স্কুলটি অতিরিক্ত তলা নির্মাণের অনুমতি পেল কীভাবে? এটা তো প্রাথমিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কেন সিবিএসই নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও সিসিটিভি ফুটেজে অডিও নেই? এটি জয়পুরের একটি স্বনামধন্য স্কুল। তারা মোটা অঙ্কের ফি নেয়, কিন্তু জবাবদিহি কোথায়?

জয়পুরের ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ, রাজর্ষি রাজ ভার্মা এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, তারা অভিভাবকের বয়ান গ্রহণ করেছেন এবং সব তথ্য যাচাই করছেন। তিনি বলেন, অভিভাবকেরা কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না, কিন্তু এখন তাদের উদ্বেগগুলো আমরা নথিভুক্ত করছি এবং তদন্ত করে দেখব।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (প্রাথমিক), রামনিবাস শর্মা জানিয়েছেন, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে তার বিভাগ অভিভাবকদের বয়ান রেকর্ড করবে।

‘খারাপ শব্দ’ ব্যবহারের অভিযোগ প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি সরাসরি তার নজরে আসেনি, তবে কিছু শিশু উল্লেখ করেছে যে আমাইরা সেদিন স্কুলে যেতে চায়নি এবং অন্য কয়েকজন শিক্ষার্থী খারাপ শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ করেছিল।

স্কুল কর্তৃপক্ষ এই মর্মান্তিক ঘটনা এবং অভিযোগ প্রসঙ্গে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।