ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগেভাগেই শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যের নতুন বই ছাপা শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। মাধ্যমিকের তিনটি শ্রেণিতে পুনরায় দরপত্র করার কারণে এসব শ্রেণিতে এখনো বই ছাপা শুরুই করতে পারেনি সরকার। এসব বই ছাপা শেষ করতে প্রায় তিন মাস সময় লেগে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনি ডামাডোল শুরু হলে ছাপাকাজ আরও পিছিয়ে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও প্রাথমিকের মোট ৯ কোটি বইয়ের মধ্যে ৮০ শতাংশ বইয়ের ছাপাকাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের ৬০ শতাংশ বই ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে।
তথ্যমতে, আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য ৩০ কোটি বই ছাপানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে প্রাথমিকের ৯ কোটি ও মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণিতে ছাপা হবে ২১ কোটি বই।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপানোর জন্য ইতোমধ্যে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কার্যাদেশ পাওয়ার পর এনসিটিবির সঙ্গে চুক্তি করার জন্য ২৮ দিন সময় পাবে ছাপাখানাগুলো। এই চুক্তির পর ৬০ দিনের মধ্যে বই সরবরাহ করতে হবে উপজেলা পর্যায়ে। এখনো চুক্তি না হওয়ায় ডিসেম্বরের মধ্যে মাধ্যমিকের বই ছাপা শেষ করা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের পক্ষে। জানা গেছে, নবম শ্রেণির বই ছাপানোর কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। ছাপাকাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে বই সরবরাহের জন্য ৬০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে নবমের বই ডিসেম্বরের মধ্যে পৌঁছাতেও বেগ পেতে হবে সরকারকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব মিলিয়ে বই ছাপা শেষ করতে আগামী বছরের অন্তত এক মাস লেগে যাবে। আর চলতি নভেম্বরেই নির্বাচনি ডামাডোল শুরু হচ্ছে। বই ছাপার বিষয়টি কর্মীনির্ভর। কর্মীরা বেশি মজুরি নিয়ে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ও প্রচারপত্র ছাপাকাজে চলে যেতে পারে। তাদের চেষ্টা করলেও আটকানো যাবে না। এ কাজ আটকে গেলে জাতীয় নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাপাকাজ শেষ করাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতে পারে। বই ছাপানোর দায়িত্ব পাওয়া ও মুদ্রণ শিল্প সমিতির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, মাধ্যমিকের কোনো শ্রেণিতে বই ছাপাকাজ এখনো শুরু হয়নি। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২১ কোটি বই স্বাভাবিকভাবে ছাপাতেও তিন মাস সময় লাগে। সে হিসেবেও ফেব্রুয়ারির আগে শিক্ষার্থীদের সব বই পাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, মাধ্যমিকের নবম শ্রেণির বই ছাপার চুক্তি হলেও পুরোদমে ছাপা শুরু হতে চলতি মাসের ১৫-২০ তারিখ পেরিয়ে যাবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, চুক্তির পর ছাপাখানাগুলো ব্যাংক লোন নেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। এ প্রক্রিয়াতেও বড় একটি সময় পেরিয়ে যায়।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিব প্রফেসর মো. সাহতাব উদ্দিন বলেন, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই রি-টেন্ডার হওয়ার কারণে প্রায় আড়াই মাস পিছিয়ে গেছি আমরা। তাই ছাপাকাজে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে প্রাথমিকের ও নবম শ্রেণির সব বই ডিসেম্বরের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির সব বই ডিসেম্বরের মধ্যে না-ও পৌঁছাতে পারে। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যেন বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে সব নতুন বই তুলে দেওয়া যায়। এ নিয়ে আমাদের সদিচ্ছার কমতি নেই।