দীর্ঘদিন উচ্চ মূল্য থাকার পর রাজধানীর বাজারে সব ধরনের সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। এতে ক্রেতাদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। তবে অস্বস্তি তৈরি করেছে পিয়াজের দাম। এ পণ্যটির দাম হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিয়াজের কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৪০ টাকা। গত সপ্তাহে যারা ৮০ টাকা কেজিতে পিয়াজ কিনেছেন, তারা এখন কিনছেন ১২০ টাকা দরে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্যে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে পিয়াজের দাম ৫৮.৫২ শতাংশ বেড়ে এখন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ক্রেতারা পিয়াজের দামে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তির কথা বলছেন। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে পিয়াজ বিক্রি হয় ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে। পিয়াজের দাম হু হু করে বাড়ছে। অতি প্রয়োজনীয় এ নিত্যপণ্যের কেজি দেড়শ’ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন।
পিয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে গত সোমবার থেকে। তবে কিছু পাইকারি বিক্রেতা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে পিয়াজের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। কারণ এ মাসেই নতুন পিয়াজ বাজারে আসছে। হুট করে দাম বাড়ায় বাজারে মনিটরিং বাড়িয়েছে সরকার।
বাজারে কয়েকদিন আগেও যে বেগুন (গোল) বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকায়, তা এখন পাওয়া যাচ্ছে ১২০ টাকায়। লম্বা বেগুনের দাম কমে এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে সপ্তাহ দুয়েক আগেও যে কাঁচামরিচ ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, তা এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ১৬০ টাকার শিম গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। একই হারে কমেছে পটোল, আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, কাঁচা কলাসহ অন্যান্য সবজির দামও। অনেকদিন ধরেই ৮০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে থাকা সবজিগুলো এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে অন্যান্য বাজারের তুলনায় রাজধানীর কাওরান বাজারে সবজির দাম তুলনামূলক কিছুটা কম লক্ষ্য করা গেছে।
কাওরান বাজারে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হতে দেখা যায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, ঝিঙে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এ ছাড়া পটোল ৫০ টাকা, শিম ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, কাঁচা কলা ৩০ টাকা (হালি), লাউ ৩০ থেকে ৪০ টাকা (প্রতিটি), ফুলকপি (ছোট) ৩০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি (ছোট) ৩০ থেকে ৫০ টাকা এবং মুলা ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচু ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা এবং আলু মানভেদে ১৬ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে দাম বেড়ে গাজর ১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। রাজধানীর অন্যান্য কাঁচাবাজারে মানভেদে সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সবজির দাম দ্রুত কমছে, আগামী সপ্তাহে আরও কমতে পারে। সবমিলিয়ে সবজির বাজারে এক ধরনের স্বস্তি ফিরেছে।
রাজধানীর তেজতুরী বাজারের বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, কয়েক মাস ধরে সবজি অতিরিক্ত দামে বেচাকেনার পর বেশির ভাগ সবজি এখন ৫০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে।
ডিম ও মুরগির বাজার স্থিতিশীল থাকলেও মসুর ডাল (চিকন) ও পোলাওয়ের চাল বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম পাঁচ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৯২৫ টাকায়।
এদিকে আটার দামে অস্বস্তি বেড়েছে। সপ্তাহ দুয়েক আগেও খুচরা বাজারে দুই কেজির মোড়কজাত আটা বিক্রি হয়েছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। কেজিপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে সেই একই প্যাকেট এখন কিনতে হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। খোলা আটার দাম সামান্য বাড়লেও মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ ক্রেতাদের পাশাপাশি বিপাকে বেকারি ও রেস্তরাঁ মালিকরাও। হঠাৎ দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে গত তিন বছর ধরেই গমের দাম নিম্নমুখী। গম আমদানিতে কোনো ট্যাক্সও নেই। প্রশ্ন উঠেছে- গম থেকে তৈরি আটার দাম কেন বাড়ছে? ব্যবসায়ীরা বলছেন, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম এখন ১২২ টাকা ছাড়িয়েছে।
কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমতির দিকে থাকলেও দেশের বাজারে বেড়ে যাওয়া খুবই রহস্যজনক। অথচ সরকার নীরব ভূমিকা পালন করে চলেছে।
সরু ও মোটা জাতের চালের দাম এক মাস ধরে স্থিতিশীল থাকলেও মাঝারি জাতের চালের দাম কিছুটা কমে বর্তমানে মানভেদে পাইজাম ও আটাশ ৫৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরু জাতের মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল ৭২ থেকে ৮৫ টাকা এবং মোটা জাতের স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৫৪ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের দামও কিছুটা কমেছে। কাওরান বাজারে রুই, কাতলা, মৃগেল ৩২০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০-২৩০ টাকা, কোরাল ৮০০ টাকা এবং চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দামও গত সপ্তাহের তুলনায় ডজনে পাঁচ টাকার মতো কমে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।