Image description

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনায় বাড়ছে উদ্বেগ। গত ৯ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ গেছে ৮৪ জনের। এছাড়া লুট হওয়া সব অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারাও ভাবাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত রাজনৈতিক ও অপরাধ বিশ্লেষকরা। যদিও পুলিশ বলছে, নির্বাচন অনুষ্ঠান চ্যালেঞ্জিং হলেও নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেই।

 

চট্টগ্রাম নগরীর খন্দকার পাড়ায় চট্টগ্রাম–৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে বুধবার (৫ নভেম্বর) হঠাৎ গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। এসময় নিহত হন সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা।

 
জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার ২ দিনের মাথায় এমন খুনের ঘটনায় দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। এছাড়া মনোনয়ন ঘোষণার পরই বিক্ষোভ ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে মাদারীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ কয়েকটি জেলায়।
 
তফসিল ঘোষণার আগেই রাজনৈতিক উত্তেজনার পাশাপাশি ঘটছে খুনের ঘটনা। প্রথম ৯ মাসে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ গেছে ৮৪ জনের। একাধিকবার পুরস্কার ঘোষণা করেও এখনো উদ্ধার করা যায়নি লুট হওয়া এক হাজার ৩৫০ অস্ত্র। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ঝটিকা মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা তো আছেই।
 
এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, চট্টগ্রামের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করতে না পারলে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, 

 

মাথায় রাখতে হবে, এ ঘটনাগুলো এবারের নির্বাচনে ঘটার আশঙ্কা বেশি থাকবে। এটা শুধু বিএনপির দিক থেকেই ঘটছে, তা না। অন্যান্য দলের ক্ষেত্রেও এটা হতে পারে। তাই এ নিয়ে আগাম প্রস্তুতি থাকতে হবে।

 

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, চট্টগ্রামের ঘটনায় অন্য প্রার্থী, কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যেও ভয় ধরাতে পারে, যা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে বাধা হতে পারে।
 
এ বিষয়ে সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘যেসব আসনে অতীতের নির্বাচনগুলোতে সহিংসতা হয়েছে, কিংবা ৫ আগস্টের পর যেসব এলাকায় অপরাধ বেশি সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আলাদা করে ব্যবস্থা নিতে পারে। অর্থাৎ তাদের সতর্ক অবস্থানে থাকতেহবে। অন্যথায় আক্রমণ বাড়তে থাকলে এটা অন্য প্রার্থীদের মধ্যেও আতঙ্ক তৈরি হবে। কোনো প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় বের হলে তিনি আক্রমণের মুখোমুখি হতে পারেন। আহত-নিহতের ঘটনা তাদের প্রভাবিত করলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার যে বৈশিষ্ট্য, সেটা তো পিছিয়ে পড়বে।’    
 
তবে নির্বাচনে ঘিরে নিরাপত্তা শঙ্কা দেখছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। পুলিশ বলছে, চল্লিশ হাজার সদস্যকে এরইমধ্যে নির্বাচনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে দেয়া হয়েছে পুরস্কারের ঘোষণা। যে কোনো প্রস্তুতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছেন তারা।
 
 
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, 

 

তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই আমাদের প্রস্তুতি চলমান। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাকি যে কাজগুলো রয়েছে, সেগুলো গুছিয়ে উঠতে পারব। সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে যেটা করণীয়, সেটা পেশাদারিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করতে পারব। আমরা নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা করছি না। আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেগুলো মোকাবিলা করার সক্ষমতাও আমাদের রয়েছে।

 

সেনা পুলিশ ও আনসারসহ ৮ লাখের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করবে।