রায়পুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের অফিসগুলো এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বুধবার সন্ধ্যায় এক তহশিলদারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে তদন্ত চলছে বলে জানান সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিগার সুলতানা।
নামজারি (জমাখারিজ), খাজনা আদায় কিংবা নাম সংশোধনের মতো সাধারণ সরকারি সেবার জন্য ঘুস না দিলে কাজ হয় না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ভূমি অফিসের কিছু কর্মচারী ও দালালের সমন্বয়ে গঠিত একটি সিন্ডিকেট নিয়মিতভাবে সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে।
অভিযোগ রয়েছে, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নামে অফিস সহায়ক, অফিস সহকারী, হিসাবরক্ষক, নাজির ও দালালের মাধ্যমে ঘুসের টাকা নেওয়া হচ্ছে। দালালের মাধ্যমে টাকা না দিলে ফাইল মাসের পর মাস ঝুলে থাকছে। অনলাইনে আবেদন করার পর ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে খসড়া খতিয়ানের প্রস্তাব নিতে ঘুস, প্রত্যয়নে ঘুস, নাজিরের টেবিলে ঘুস-সব ধাপেই বাড়তি টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ। সরকার নির্ধারিত খরচ মাত্র এক হাজার ১৭০ টাকা হলেও আদায় করা হচ্ছে ৬-৮ হাজার টাকা। কিছু ক্ষেত্রে লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে।
এক ইউনিয়নের তহশিল অফিসে ঘুস লেনদেনের সময় একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের এক বাসিন্দার কাছে নামজারির জন্য অফিস সহায়ক মনির হোসেন তিন হাজার ৬০০ টাকা দাবি করেন। পরে সরকারি খরচসহ চার হাজার ৭০০ টাকা দিতে হয়েছে তাকে।
বামনী ইউনিয়নের বাসিন্দা আউয়াল মিয়া জানান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের হিসাবরক্ষক জাহাঙ্গীর আলম তিন হাজার ৭০০ টাকা নিয়েও কাজ করে দেননি এবং টাকা ফেরতও দেননি। দক্ষিণ চর আবাবিল, উত্তর চরবংশী ও বামনী ইউনিয়নের কয়েকজন ভুক্তভোগী ঘুস লেনদেনের একই অভিযোগ করেন। উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট ভূমি অফিসের তহশিলদার আব্দুস সত্তারসহ কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঘুস বাণিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে। নামজারি, খাজনা ও নালিশি ভূমি মামলার সরেজমিন তদন্তে মোটা অংকের ঘুস দাবি করেন তহশিলদার। তার নেতৃত্বে দালাল জুয়েল, রশিদ, রাকিব, মনির মৃধা প্রকাশ্যে ভূমি অফিস নিয়ন্ত্রণ করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, তহশিলদার আব্দুস সত্তার দালালদের মাধ্যমে প্রতি ফাইল থেকে আট হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুস নেন। নালিশি ভূমি মামলার তদন্ত রিপোর্টের জন্যও ৫০০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়।
চরমোহনা গ্রামের বাসিন্দা মন্তাজ মিয়া বলেন, ‘১১৮৬নং খতিয়ানের আমার জমির নামজারি চলমান অবস্থায় সানজিদা আক্তার আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে চরবংশী ভূমি অফিস তদন্তের দায়িত্ব পায়। কিন্তু তহশিলদার আমাকে না জানিয়ে ফাতেমা বেগমকে আমার প্রতিনিধি দেখিয়ে নোটিশ রিসিভ করান। পরে সরেজমিন তদন্তের অনুরোধ করলে তিনি আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুস চান। টাকা না দিলে আমার বিপক্ষে তিনি প্রতিবেদন দেবেন বলে হুমকি দেন। আমি ঘুস না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন এবং এখনো নানা উপায়ে হয়রানি করছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
অভিযুক্ত তহশিলদার আব্দুস সত্তার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। অফিসে দালাল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারি খাস জমির তথ্য দেওয়ার আইনগত সুযোগ নেই।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিগার সুলতানা বলেন, ‘আমার অফিসে সরকারি ফি ছাড়া অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না। কেউ আমার নাম ব্যবহার করে টাকা নিলে আমাকে জানাবেন। চরবংশী ইউপির তহশিলদার এবং আমার অফিসের কর্মচারী মনিরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্ত করছেন জেলা প্রশাসক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান কাউছার বলেন, ‘ভূমি অফিসে ঘুস নেওয়ার অভিযোগ জানা নেই। ঘুস লেনদেন ও মানুষকে হয়রানি করা হলে আমাকে জানালে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’