নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক জয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের। বাংলাদেশি ‘আংকেল-আন্টিদের’। যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার সব মিডিয়ায় এ নির্বাচনে বাংলাদেশিদের ভূমিকাকে গৌরবোজ্জ্বল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শতকরা ৯৮ ভাগ বাংলাদেশি মুসলিম এবার ভোট দিয়েছেন। এর অধিকাংশই পেয়েছেন মামদানি। নির্বাচনের দিন বাংলাদেশি নারী-পুরুষ (যারা মামদানির আংকেল-আন্টির মতো) ঘর থেকে বেরিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন সূর্য উঠার আগেই। নির্বাচনের আগেও তারা ‘ডোর টু ডোর’ প্রচার করেছেন।
এদিকে মামদানির বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর প্রবাসী বাংলাদেশিরা বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠেন। সিটির ব্যস্ততম জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রংকস ও ব্রুকলিনে আনন্দ সমাবেশ করেন তারা। রাতেই মামদানির প্রধান ক্যাম্পেইন অফিস ম্যানহাটনে ছুটে যান বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি। মিষ্টির দোকানগুলো আধা ঘণ্টার মধ্যে মিষ্টিশূন্য হয়ে যায়।
মামদানির বিজয়ে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি ফকরুল ইসলাম দেলোয়ার, জ্যাকসন হাইটস বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন ভূঁইয়া, ব্রংকস বাংলাদেশি কমিউনিটি লিডার এমএন মজুমদার, আব্দুস শহীদ, মামুন ইসলাম, জাকারিয়া, কমিউনিটি বোর্ড সদস্য আহসান হাবিব, নুরুল আজিম ও ড্রামের কাজি ফৌজিয়াসহ বাংলাদেশি নেতারা পৃথক বিবৃতিতে বিজয়ী মামদানিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বিশ্বের ক্ষমতাধর মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ করে জয়ী হয়েছেন মামদানি। নিউইয়র্কের প্রগতিশীল মানুষ বিদ্বেষ, অপপ্রচার আর প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন। মামদানি পরাজিত করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া এবং সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে। কুমো ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে পরাজয়ের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেন। ভোটের আগের রাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কুমোকে সমর্থন দেন এবং মামদানি জয়ী হলে নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল তহবিল বন্ধের হুমকি দেন।
মামদানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ‘নিউইয়র্ক সিটিকে ধারাবাহিক উন্নতির যুগে’ নিয়ে যাওয়ার। বিজয় ভাষণে তিনি বলেন, যে স্বপ্ন আমরা একসঙ্গে দেখেছি, যেকথা আমরা একসঙ্গে বলেছি, এখন সেটাই হবে আমাদের কর্মসূচি। নিউইয়র্ক, এই ক্ষমতা তোমাদের-এই শহর তোমাদেরই।
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া মামদানি সাত বছর বয়সে পরিবারসহ নিউইয়র্কে আসেন। ব্রংকস হাই স্কুল অব সায়েন্স থেকে পড়াশোনা শেষে বোডয়েন কলেজে যান। ২০১৮ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন।
তার বাবা মাহমুদ মামদানি একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অধ্যাপক, মা মীরা নায়ার খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা।
জোহরান মামদানির বিজয় শুধু নিউইয়র্ক সিটির রাজনৈতিক মানচিত্র নয়, সমগ্র আমেরিকার প্রগতিশীল রাজনীতির জন্যও একটি নতুন অধ্যায়। তরুণ প্রজন্ম, অভিবাসী সম্প্রদায় ও শ্রমজীবী শ্রেণির ঐক্য এই নির্বাচনে নতুন বার্তা দিয়েছে।