ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদক কারবারি, ভবঘুরে ও অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ অভিযানের সময় মঙ্গলবার ডাকসু সদস্য সর্ব মিত্র চাকমার লাঠি হাতে এক বৃদ্ধকে তাড়ানোর একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তারপর থেকে বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিষয়টির নিয়ে সামাজিক মাধ্যমের সমালোচনার জবাব দিয়েছেন সর্ব মিত্র চাকমা। বুধবার (৫ অক্টোবর) রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি তাকে নিয়ে তোলা ৬ প্রশ্নের উত্তর দেন।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য তার দেওয়া পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘গতকালের বিতর্কিত ভিডিও নিয়ে যত ধরণের ঘোলাটে বিষয় , শেষবারের মতো ক্লিয়ার করা জরুরি বলে মনে করি -
১. বৃদ্ধ লোকের সাথে এমন আচরণ কেন?
- বৃদ্ধ লোকটিকে এ পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছয় বার তুলে দেয়া হয়েছিল। ইনজেকশন সিরিঞ্জ দিয়ে মাদক গ্রহণ, গাঁ জা ইত্যাদি মাদক সেবনের অভিযোগ থাকার পরও ক্যাম্পাস ছাড়ার সুযোগ দিয়েছি গত ছয় দিন। তাও, ক্যাম্পাস না ছাড়াই কঠোরতার আশ্রয় নিতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, মাদকসহ তার ভিডিও আছে প্রমাণ সহ। আমার তাকে প্রতিদিন সরাতে হচ্ছে, এজন্য আমার অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছিল ভিডিওতে আমার কথায়, লোকটা প্রতিদিন বলে ‘আজকেই যাচ্ছি’।
২. জায়গাটা কি ক্যাম্পাসের বাইরে?
-যিনি পোস্ট করেছেন তিনি উল্লেখ করেছেন বার্ন ইন্সটিটিউটের কথা, বোধ হয় ইচ্ছাকৃতভাবেই যাতে মানুষ মনে করে ক্যাম্পাসের বাইরে। কিন্তু, ফুটপাতটা মূলত অমর একুশে হলের শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত ফুটপাত এবং ক্যাম্পাসের অংশেই পড়ে। এ ফুটপাতে ভবঘুরে ও মাদকসেবী দিয়ে ভরে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
৩. বৃদ্ধ লোকটিকে কি প্রহার করা হয়েছে?
-বৃদ্ধ লোকটির ব্যাগে মূলত মাদক এবং বিভিন্ন উপাদান ছিল এবং স্ট্র্যাচার তার হাতে ছিল যেটা তার লাগেই না। কিন্তু , ভিক্ষাবৃত্তির জন্য প্রতারণার উদ্দেশ্যে লোকটা স্ট্র্যাচার ব্যবহার করে। এর আগেও তাকে সতর্ক করা হয়েছিল, যাতে স্ট্র্যাচার ব্যবহার না করে।
লোকটিকে কোনোভাবেই প্রহার করা হয়নি। প্রক্টরিয়াল বডির এক সদস্য মূলত ব্যাগটা তার হাত থেকে ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে ব্যাগে বারি দেয় লাঠি দিয়ে।
এবং ক্যাম্পাসের আইন শৃঙখলা রক্ষার্থে এটা প্রক্টরিয়াল বডির দায়িত্বের আওতায় পড়ে। কারণ, প্রক্টরিয়াল বডি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত।
৪. সর্ব মিত্রের কতটুকু এখতিয়ার আছে?
-ডাকসু বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ অধ্যাদেশ দ্বারা স্বীকৃত একটি প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি আনুষ্ঠানিক অংশ। ডাকসু বডির একজন সদস্য হিসেবে আমার অবশ্যই এখতিয়ার আছে প্রক্টরিয়াল বডি কীভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেটা পর্যবেক্ষণ করা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে এবং তাদের অপারেশন পরিচালনায় সহায়তা করা।
৫. পুলিশের হাতে কেন দিইনি?
-তথাকথিত ‘প্রহারের’ কারণে যে মানবিকতার কথা বলছেন , সেই একই মানবিকতার কারণে গত ছয়দিন ধরে লোকটাকে উঠাচ্ছি আইনের হাতে তুলে না দিয়ে। বৃদ্ধ লোকটির অসহায়ত্ব আমার কাছে গত ছ'দিন মূল বিষয় ছিল , যা দূর্ভাগ্যবশত আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৬. ভিডিও কারা ধারণ করেছিল?
-মূলত কোনো পথচারী এ ভিডিও করেনি। যারা সেদিন এ ভিডিও করেছে তারা খুব সূক্ষ্মভাবে লুকিয়ে করেছে এবং তারা পুরো অভিযান জুড়ে বাইকে দূর থেকে ভিডিও ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে এবং তারা প্রত্যেকে রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।’