বগুড়ার গাবতলীর নশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইটালী গ্রামে বিস্ফোরক তৈরির কারখানা থেকে আরও ৩৯টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। বারুদের গন্ধ পেয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যরা মঙ্গলবার সকালে ওই এলাকার মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেন ও নাসিমা আকতার দম্পতির ঘরে ট্রাঙ্ক থেকে ককটেলগুলো উদ্ধার করেন।
পরে সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা সেগুলো স্থানীয় একটি নদীর তীরে নিষ্ক্রিয় করেন।
দুই দিন আগে ওই ঘরে তৈরির সময় ককটেল বিস্ফোরণে আতাউর রহমান সেলিম (৩৫) নামে বোমা তৈরির কারিগর আহত হন। পরে সেনা বিশেষজ্ঞরা ঘরে পাওয়া পাঁচটি ককটেল নিষ্ক্রিয় করেন।
তবে গাবতলী থানা পুলিশ এ বাড়িকে ককটেল তৈরির কারখানা বলতে নারাজ। ওসি বলছেন, ডাকাতির কাজে ব্যবহারের জন্য ককটেলগুলো তৈরি করা হচ্ছিল।
পুলিশ ও এজাহার সূত্র জানায়, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইটালী গ্রামের মুক্তার হোসেন ও তার স্ত্রী নাসিমা আকতার মাদক ব্যবসায়ী। নাসিমা বর্তমানে এক বছরের সাজায় বগুড়া জেলা কারাগারে রয়েছেন। মুক্তার হোসেনের ভায়রা ভাই গাবতলীর মাঝগ্রামের নইমুদ্দিনের ছেলে বাদশা মিয়া আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। বাদশা ও মুক্তারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
বাদশা মিয়া ডাকাতির কাজে ব্যবহারে ককটেল তৈরির জন্য কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চরের মজিবর রহমানের ছেলে আতাউর রহমান সেলিমসহ ২-৩ জনকে ভাড়া করে আনেন। গত ৩১ অক্টোবর থেকে তারা গত কয়েক দিন ধরে মুক্তার হোসেনের বাড়িতে অবস্থান করেন। তারা একটি ঘরে বসে ককটেল তৈরি করছিলেন।
২ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হলে কারিগর আতাউর রহমান সেলিম আহত হন। এ সময় অন্য আসামিরা পালিয়ে যান। খবর পেয়ে গাবতলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত সেলিমকে উদ্ধার করে গ্রেফতারের পর তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ককটেল তৈরির কিছু আলামত সংগ্রহ ও ঘরটি সিলগালা করা হয়। ঘটনার পর ওই গ্রামে জনগণের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। পরে থানা পুলিশ ছাড়াও ডিবি ও সিআইডি পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
এদিকে ২ নভেম্বর সন্ধ্যার পর সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে ওই বাড়ির ঘর থেকে পাঁচটি তাজা ককটেল উদ্ধার করেন। পরে গ্রামের একটি মাঠে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ককটেলগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়।
এ ব্যাপারে গাবতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আবুদুল্লাহ আল সাদিক থানায় বিস্ফোরণে আহত কারিগর আতাউর রহমান সেলিমসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এছাড়া ওই বাড়িটি সিলগালা করা হয়।
গাবতলী থানার ওসি সেরাজুল হক জানান, মঙ্গলবার সকালে ওই বাড়িতে তল্লাশিকালে ঘরে স্টিলের ট্রাঙ্ক থেকে বারুদের গন্ধ পাওয়া যায়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের খবর দিলে তারা এসে ট্রাঙ্কের ভিতরে থাকা কয়েকটি ব্যাগে ৩৯টি ককটেল পাওয়া যায়। পরে গ্রামের একটি নদীর তীরে গর্ত করে সেখানে ককটেলগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়।
ওসি আরও জানান, ওই বাড়িটি বোমা বা বিস্ফোরক তৈরির কারখানা বলা ঠিক হবে না। মুক্তারের ভায়রা ভাই বাদশা মিয়া আন্ত:জেলা ডাকাত দলের সদস্য। ডাকাতির কাজে ব্যবহারের জন্য তারা সেলিমকে কুমিল্লা থেকে ভাড়া করে এনে ককটেল তৈরি করছিল। একটি ককটেল বিস্ফোরণে সেলিম আহত হয়। এরপর দুই দফায় ওই ঘর থেকে ৪৪টি ককটেল উদ্ধার হয়। সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ককটেলগুলো নিষ্ক্রিয় করেছেন।
ওসি আরও জানান, সেলিম সুস্থ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ককটেল তৈরির প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হবে।
নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসী জানান, একই বাড়ি থেকে দুই দফায় ৪৪টি ককটেল উদ্ধার ও তৈরির সময় একটি বিস্ফোরণ ঘটে। আসলে অপরাধীরা ওই বাড়ি বোমা তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহার করছিল। এ ঘটনায় গ্রামবাসীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তারা গ্রেফতার সেলিমকে ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে ককটেল তৈরির রহস্য উন্মোচনের দাবি করেছেন।