Image description

উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সড়কপথের ভোগান্তি কমাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের গোয়ালবাথান এলাকায় ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় কালিয়াকৈর হাইটেক সিটি রেলওয়ে স্টেশন। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় স্টেশনটি। সাত বছর হয়ে গেলেও যাত্রী নিতে এখানে থামে না কোনো আন্তনগর ট্রেন। ঝকঝকে তকতকে নয়নাভিরাম স্টেশনটা যেন জনশূন্য ‘মহাশ্মশান’। ট্রেন আসে, ট্রেন যায়, স্টেশন তাকিয়ে রয়। একইভাবে পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের ২০টি স্টেশনের মধ্যে আটটিতে কোনো ট্রেন থামে না। ফলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেল চালুর প্রায় তিন বছর পার হতে চললেও ট্রেন থামার অপেক্ষায় এসব স্টেশন। ট্রেন না থামায় এই রেলপথের সুবিধা নিতে পারছে না এলাকার মানুষ।

অন্যদিকে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আধুনিক এসব স্টেশন নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম স্টেশন হচ্ছে, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলার নিমতলা রেলওয়ে স্টেশন। আধুনিক সুযোগসুবিধাসম্পন্ন এ রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে সারা দিন থাকে নীরবতা। ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া এখানে কোনো যাত্রীর আনাগোনা নেই। নেই কোনো টিকিট বিক্রিও। অথচ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বতেন-ভাতা, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মাসে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয় স্টেশনটির পেছনে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নির্মাণ শৈলী, নান্দনিকতায় আর আধুনিকতায় অনন্য গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরের কালিয়াকৈর হাইটেক সিটি রেলস্টেশন। ঢাকার কমলাপুরের আদলে বিপুল ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন এই স্টেশনে ট্রেন না থামায় পুরোপুরি বন্ধ যাত্রীসেবা। আর সুনসান নীরব স্টেশনে এখন শুধুই মাদকসহ নানা অপরাধের আখড়া। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

এলাকাবাসী, যাত্রী ও রেলস্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী সূত্রে জানা গেছে, হাইটেক সিটি রেলওয়ে স্টেশনটি পড়েছে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে মাকিশবাথান এলাকায়। গাজীপুরের মৌচাক ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর রেলস্টেশনের মাঝে এর অবস্থান। স্টেশনের পূর্ব দিকে অল্প কিছু দূরেই হাইটেক সিটি। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলওয়ে স্টেশনে ডুয়েলগেজ তিনটি রেললাইন আছে। এর একটি লুপ লাইন।

কমলাপুর রেলস্টেশনের আদলে নির্মিত স্টেশন ভবন যে কারও নজর কাড়বে। আছে আধুনিক ইন্টারলকিং সিগন্যালিং সিস্টেম, প্রশস্ত প্ল্যাটফর্ম, উন্মুক্ত বসার জায়গা, বিলাসবহুল বিশ্রামাগার, আধুনিক টিকিট কাউন্টার, শৌচাগারসহ সব। শুধু নেই যাত্রী, নেই স্টেশনের চিরচেনা কোলাহল। এ স্টেশনে ট্রেন থামানোর দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিলাসবহুল দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশনে থামানো হতো টাঙ্গাইল কমিউটার ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস। 

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় সংস্কার করা তিন স্টেশনের মধ্যে রয়েছে কমলাপুর, কাশিয়ানী ও ভাঙ্গা। গেন্ডারিয়ায় আগে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে ছোট স্টেশন ছিল। সেখানে আধুনিক স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এই স্টেশনে এখনো শুধু ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ট্রেনই থামে। কিন্তু পদ্মা সেতু হয়ে চলাচলকারী ট্রেনগুলো থামে ১১টি স্টেশনে। এগুলো হলো ভাঙ্গা জংশন, কাশিয়ানী, লোহাগড়া, নড়াইল, সিঙ্গিয়া, শ্রীনগর, মাওয়া, পদ্মা, শিবচর, ভাঙ্গা স্টেশন ও কমলাপুর রেলস্টেশন। ট্রেন থামায় এসব স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা করতে পারে। পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করা ট্রেন যে ৯টি স্টেশনে থামছে না, সেগুলো হলো গেন্ডারিয়া, কেরানীগঞ্জ, নিমতলা, নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, জামদিয়া, পদ্মবিলা ও রূপদিয়া। এসব স্টেশনে বর্তমানে কয়েকজন ওয়েম্যান ও প্রহরী আছেন, কার্যক্রম একপ্রকার বন্ধ।