Image description
► ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ডিসি এডিসি ইউএনও পদে আসছে ব্যাপক রদবদল ► পূরণ হবে খালি থাকা সচিবের পদ ► ৩০ জেলার ডিসি শতাধিক ইউএনও পরিবর্তন হতে পারে

নির্বাচনের আগে ঢেলে সাজানো হচ্ছে প্রশাসন। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে মাঠ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করা হবে। সে লক্ষ্যে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ডিসি, এডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ডসহ সংশ্লিষ্টদের রদবদল নিয়ে কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পুলিশের রদবদলেরও প্রস্তুতি চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এরপরও তফসিল ঘোষণার পর যদি রদবদলের দরকার হয় সেটি করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ১৫ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ২৯ অক্টোবর নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এ নিয়ে আগেই কাজ করে আসছিল মন্ত্রণালয়গুলো। ছুটির দিন শুক্র-শনিবার জনপ্রশাসন নিয়েছে ডিসি ফিটলিস্টের ভাইভা।

সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের এবার নির্বাচনের দায়িত্বে রাখবে না। এখন যাঁরা ডিসি রয়েছেন, তাঁদের অনেককে মাঠ থেকে তুলে নির্বাচনের আগে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই জনপ্রশাসন থেকে কর্মকর্তাদের তালিকা করে পাঠানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কাছে। নির্বাচনে কোন ব্যাচের কজন ডিসি থাকবে, কোন ব্যাচ ইউএনও হিসেবে নেতৃত্ব দেবে, কোন ব্যাচের কর্মকর্তাদের তুলে আনা হবে এসব বিস্তারিত তথ্য পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানায়, মাঠে তিনটি ব্যাচের কর্মকর্তারা ডিসির দায়িত্বে আছেন। তারা থাকলে কী হবে আর উঠিয়ে আনলে কী সুবিধা-অসুবিধা হবে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শুধু তাই নয়, মাঠে থাকা ইউএনও এডিসিদের বিষয়েও তথ্য পাঠানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ও পৃথকভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অন্তত ৩০ জন ডিসি মাঠে পাঠানো হবে। পুরাতন ডিসিদের অনেকের জেলা বদল হবে। শতাধিক ইউএনও পরিবর্তন আনবে সরকার, অনেক ইউএনও উপজেলা পরিবর্তন করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও জনপ্রশাসন সূত্রগুলো জানায়, ২৯ ব্যাচকে ডিসি করতে ফিটলিস্ট করা হচ্ছে। ২৮ ব্যাচের ফিটলিস্ট করা আছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা মোতাবেক নতুন কর্মকর্তাদের মাঠে ডিসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এখন যাঁরা ডিসি হওয়ার যোগ্য, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ কর্মকর্তা ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার (এআরও) দায়িত্বে ছিলেন। আবার অনেকের মাঠ প্রশাসনে দুই বছর দায়িত্ব পালন করার শর্ত পূরণ হয়নি। যারা ২০১৮ সালে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন তারা নানা মাধ্যমে তদবির করতেও ব্যস্ত। তবে বিগত সময়ে নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারীদের মাঠে না পাঠাতে সরকার অনড়। ডিসি করতে যারা বিগত নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন তাদের বাদ দিয়ে কর্মকর্তা বাছাই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মাঠ প্রশাসনে যুগ্মসচিব হয়েও ডিসির দায়িত্বে আছেন তাদের তুলে আনা হবে। একই সঙ্গে ২৫ এবং ২৭ ব্যাচের যারা ভালো করতে পারেনি এমন কিছু কর্মকর্তাকে আর ডিসি পদে রাখতে চায় না সরকার। নতুন ফ্রেশ ব্যাচ হিসেবে ২৮ সঙ্গে ২৯ কে নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিতে পাঠানো হবে। নতুন কর্মকর্তা মাঠে পাঠালে কোনো বিশেষ পক্ষ না নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবেন বলে মনে করছেন জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্টরা। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, সরকার চাইলে পুরো একটি ব্যাচই পরিবর্তন করতে পারবে সে পরিমাণ কর্মকর্তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মাঠ প্রশাসনে ইউএনও হিসেবে এখনো অনেক কর্মকর্তা আছেন যারা ২০২৪ সালের সহকারী রিটার্নিং নির্বাচন করেছেন তারা ইউএনও দায়িত্ব পালন করছেন। এসব ইউএনওকে মাঠ থেকে তুলে আনা হবে। পাশাপাশি ৩৪, ৩৫ ব্যাচ থেকেও অর্ধশতাধিকের বেশি ইউএনও তুলে আনা হবে। ৩৭তম ব্যাচকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে মাঠে ইউএনও হিসেবে পদায়ন করার জন্য। ৩৮ এবং ৪০ ব্যাচের কর্মকর্তারা এসিল্যান্ড হিসেবে কাজ করছেন। তাদেরও উপজেলা রদবদল করা হবে। ইউএনও ও এসিল্যান্ড হিসেবে যাদের ১ বছরের বেশি হয়েছে তাদের অনেকের উপজেলা পরিবর্তন হবে। এদিকে, সরকার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চায়। এরপরও প্রয়োজন অনুসারে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসনে বড় রদবদল করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।