আসিফ আহমেদ, সদ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। তিনি দেশের বাইরে মাস্টার্সে ভর্তি হবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি যুবকদের জন্য আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করেছেন। আসিফ আহমেদ বলেন, আমি বিদেশে যাওয়ার জন্য এক বছরের একটা লক্ষ্য ঠিক করেছি। আত্মরক্ষার এই প্রশিক্ষণটি নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা দেখছি। তাই আগ্রহবশত এই ট্রেনিংয়ের জন্য আবেদন করেছি। তিনি বলেন, এই প্রশিক্ষণ ভবিষ্যতে আমার কাজে লাগবে আশা করি। আত্মরক্ষার কৌশল তো খারাপ কিছু না। এ ছাড়াও এটাকে নতুন বাংলাদেশের একটা নতুন সূচনাও বলা যেতে পারে।
দেশের ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিকেএসপি কেন্দ্রে ৮২৫০ জন তরুণ ও ৬শ’ তরুণীকে পনেরো দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণের সুযোগ দিচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ১৮-৩৫ বছর বয়সী বাংলাদেশের নাগরিকরা এই প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আত্মরক্ষামূলক নানা কলাকৌশল ও শুটিং শেখানো হবে এই প্রশিক্ষণে।
যুব মন্ত্রণালয়ের এই পরিকল্পনা প্রকাশের পর এ নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে কেন এই প্রশিক্ষণ? তবে প্রশিক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এগুলো মৌলিক বিষয়। এই শুটিং মূলত এয়ারগান দিয়ে হবে। যা বৈধ।
আসছে ৮ই নভেম্বর থেকে শুরু হবে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। ১১৪টি ব্যাচে পর্যায়ক্রমে মোট ৮ হাজার ২৫০ জন যুব ও ৬০০ জন যুব নারী এই প্রশিক্ষণ নেবেন। বিকেএসপি’র সাতটি কেন্দ্রে ১৪৪টি ব্যাচে প্রশিক্ষণ নেবেন ৮ হাজার ৮৫০ জন। ঢাকায় ১২টি ব্যাচে ৫০ করে ৬০০ নারী প্রশিক্ষণ নেবেন। যা শুরু হবে ৮ই নভেম্বর। এ ছাড়াও ছেলেরা প্রশিক্ষণ নেবেন বিকেএসপি’র কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও দিনাজপুর আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। কক্সবাজারের প্রশিক্ষণ শুরু হবে ১৫ই নভেম্বর বাকিগুলো ২৮শে নভেম্বরে। এই প্রশিক্ষণের আওতায় থাকবে জুডো, কারাতে, তায়কোনডো ও শুটিং। এই প্রশিক্ষণের জন্য ১৭ই অক্টোবর থেকে আবেদন শুরু হয়। বিকেএসপি নিবন্ধন বিভাগ জানায়, রোববার পর্যন্ত আবেদন করেছেন ৬ হাজার ৮৬৪ জন। প্রশিক্ষণ নেয়া যুব ও যুব নারীরা বিনামূল্যে আবাসন, খাবার, ট্র্যাকসুট, টি-শার্ট ও কেডস পাবেন। সেইসঙ্গে প্রশিক্ষণ ভাতা ৪২শ’ টাকা ও সার্টিফিকেট পাবেন। প্রার্থীদের নামে কোনো ফৌজদারি বিধিতে মামলা থাকা যাবে না।
এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম মূলত যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুুদ সজীব ভুঁইয়ার পরিকল্পনা। জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। এরপর প্রায় আট মাস আগে পরিকল্পনা পাস হয়। প্রকল্পের বাজেট ধরা হয়েছে ২৮ কোটি টাকা। তবে প্রকল্প শুরুতেই সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ‘আগ্নেয়াস্ত্র’ শব্দ ব্যবহারের কারণে। এরপর এই শব্দটি সংশোধন করে ‘শুটিং’ ব্যবহার করা হয়।
জানতে চাইলে বিকেএসপি’র পরিচালক (প্রশিক্ষণ) কর্নেল মো. গোলাম মাবুদ হাসান বলেন, প্রধান উদ্দেশ্য যুব সমাজের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য আত্মরক্ষার বিভিন্ন কৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান। এই আত্মরক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত মার্শাল আর্ট। এর চারটা ইভেন্ট (জুডো, কারাতে, তায়কোনডো ও উশু) হয় আমরা সহজ তিনটা বেছে নিয়েছি। পাশাপাশি আমরা শুটিংটা রেখেছি। তবে অনেকেই এটাকে আগ্নেয়াস্ত্র বলছেন। কিন্তু আমরা আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো প্রশিক্ষণ দিচ্ছি না। এটা এয়ারগানের মাধ্যমে ট্রেনিং দেয়া হবে। এটাও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে। সোস্যাল মিডিয়ায় দেখছি আগ্নেয়াস্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। এটাও এটা স্পোর্টস ইভেন্ট শুটিং। নির্বাচনের আগে কেন এই প্রশিক্ষণ? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়টি আমি জানি না। আমাকে শুধু বলা হয়েছে, যুবদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য কী কী করা যেতে পারে, আমরা সেটা জানিয়েছি। আমরা চারটি ইভেন্টের কথা বলেছিলাম। জুডো, কারাতে, তাইকোন্দো ও উশু। আর শুটিংয়ের বিষয়টি আগে থেকেই বলা ছিল। আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমরা জাস্ট পালন করছি।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার প্রেক্ষিতে গতকাল ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক স্ট্যাটাসে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া লেখেন, কখনো আরও বড় পরিসরে কাজ করার সময়, সুযোগ পেলে সকল নাগরিককে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ। আমাদের ভৌগোলিক বাস্তবতায় সত্যিকার অর্থেই সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে হলে গণপ্রতিরক্ষার ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিকলল্প নেই।
বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক সংবাদে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নাগরিকরা দেশের রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে। দেশের ক্রান্তিকালে প্রয়োজনে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারবে। জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করতে তরুণদের প্রশিক্ষিত করার জন্য এটি পাইলট প্রকল্প। আইডিয়াটা হচ্ছে গণপ্রতিরক্ষা বাস্তবায়ন করা বাংলাদেশে। আমাদের সামরিক এবং ভৌগোলিক বাস্তবতায় এটা আমাদের জন্য অপরিহার্য। সবসময় যে যুদ্ধ করতে হবে এমন নয়; কিন্তু তারপরও একটা মোর্যাল থাকা যে রিজার্ভ ফোর্সের সংখ্যাটা বাড়ছে। যে ভৌগোলিক সামরিক অবস্থান বাংলাদেশের আছে, সেখানে গণপ্রতিরক্ষা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো উপায় নাই। কারও যদি মৌলিক প্রশিক্ষণ থাকে, যে এটলিস্ট জানবে যে কীভাবে একটা অস্ত্র চালাতে হয়। তার হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারলে দেশকে সার্ভ করতে পারবে।
তিনি জানান এই প্রশিক্ষণে সরাসরি বুলেট ফায়ারিং শেখানোর ইচ্ছা থাকলেও গুলির অনুমোদন, বাজেট ও অবকাঠামো জটিলতার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। বলেন, গুলি ছোড়া বাদে অস্ত্র চালানোর সবকিছুই শেখানো হবে। ফায়ারিংয়ের থিওরিটিকাল দিকটা শেখানো হবে একইসঙ্গে প্রাকটিক্যাল দিকটাও শেখানো হবে।
এই প্রশিক্ষণ কেন প্রয়োজন এ প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, গণপ্রতিরক্ষার আইডিয়া থেকেই তার মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণকে প্রতিরক্ষার দিক থেকে সচেতন করা এবং ন্যূনতম প্রশিক্ষণ দেয়াটাই উদ্দেশ্য। যদি কখনো সেরকম পরিস্থিতি আসে বাংলাদেশে সংকটময় মুহূর্ত আসে মানুষ যাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমার মনে হয়েছে যে দেশে যদি কখনো সিকিউরিটি ক্রাইসিস হয় এবং আমাদের যে ভৌগোলিক বাস্তবতা সেটা হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। পৃথিবীতে আমরা ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় যুদ্ধ দেখেছি। কথায় কথায় যুদ্ধ বেঁধে যাচ্ছে। প্রস্তুতি থাকতে তো সমস্যা নাই।