Image description
ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ কমনওয়েলথ টিম প্রি-ইলেকশন মনিটরিং সম্পন্ন করেছে

ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা চরমে। প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত ফেব্রুয়ারিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে- এমনটা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। কারণ সাধারণ নির্বাচনের আগে, না ভোটগ্রহণের দিনে জুলাই সনদ ইস্যুতে ‘গণভোট’ হবে তা নিয়ে স্টেকহোল্ডাররা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি এখনো। বরং পরস্পরের মধ্যে ক্রমেই বিভক্তি বাড়ছে। তবুও আগামী বছরের শুরুতে ত্রয়োদশ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আশাবাদী বিদেশি বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগীরা। তারা ভোটের মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি, অবস্থা এবং অবস্থান বুঝতে চেষ্টা করছেন। বহুল প্রত্যাশিত সেই নির্বাচনের ফল কি হবে, দল না জোটবদ্ধ নির্বাচন হবে, কে কতো আসন পাবে? সরকারে গেলে কোন দল বা জোটের মন্ত্রিপরিষদের রং কি হবে? এসব হিসাবনিকাশে ব্যস্ত বিদেশিরা। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কমনওয়েলথের টিম ঢাকায় তার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করেছে। 

ভোটে চোখ রাখা একাধিক বিদেশি কূটনীতিকের সঙ্গে আলাপে মানবজমিন এসব তথ্য পেয়েছে। জানা গেছে, প্রাক প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং ভোটের মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেছেন। তা প্রকাশ্যেই হয়েছে। তবে ভোটের বাইরে থাকা আওয়ামী লীগের একাধিক প্রতিনিধি এবং এখনো ভোট প্রস্তুতি শুরু না করা আওয়ামী লীগের এক সময়ের মিত্র জাতীয় পার্টির সঙ্গেও তারা বৈঠক করেছেন। তবে তা ঘটা করে নয়। পর্যবেক্ষকদের একজন বলেন- ভোট গ্রহণের দিনক্ষণ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও নির্বাচন যে হবে- তাতে কোনো সংশয় নেই। যদিও ভোট প্রশ্নে গুজব আর গুঞ্জনে সয়লাব সোশ্যাল মিডিয়া। এদিকে আসন্ন নির্বাচন যখনই হোক না কেন তাতে অংশগ্রহণের সুযোগ না পেলে তা বর্জনের আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বিদেশি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন। ফলে রাজনীতি বিশ্লেষক এবং বিদেশি কূটনীতিকরা কনভিন্স যে, বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন না এলে আগামীর ভোটের মাঠ একতরফাভাবে এন্টি-আওয়ামী লীগ ফোর্সের দখলেই থাকছে।

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে ফেব্রুয়ারিতেই ভোট হবে, পর্যবেক্ষক আসছে: গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করেছে মার্কিন পর্যবেক্ষক সংস্থা আইআরআই-এর প্রতিনিধিদল। তারা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)-এর প্রতিনিধিদল সরকার প্রধানের সঙ্গে আলোচনায় জানায়  সরকার এবং নির্বাচন কমিশন ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে ঘোষণা দিয়েছে তাতে তারা আশ্বস্ত। ওই নির্বাচনের জন্য আইআরআই কমপক্ষে ১০ জন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক পাঠাবে বলে ঘোষণা দেয়। ঢাকা সফরকারী সেই টিমের নেতৃত্বে ছিলেন  আইআরআই বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সদস্য ক্রিস্টোফার জে. ফুসনার। তিনি বলেন আমরা ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে একটি শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করবো। নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের উপস্থিতি সহিংসতার আশঙ্কা হ্রাসে সহায়তা করবে। 

প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন- সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির (সিএনএএস) ইন্দো-প্যাসিফিক সিকিউরিটি প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো ও পরিচালক লিসা কার্টিস, যিনি প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আগের আমলে তার অন্যতম নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। ওই টিমে আরও ছিলেন আইআরআই-এর গণতান্ত্রিক নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বিষয়ক টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ জেসিকা কিগান, আইআরআই-এর রেসিডেন্ট প্রোগ্রাম ডিরেক্টর স্টিভ সিমা এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) প্রোগ্রাম ডিরেক্টর জেমি স্পাইকারম্যান। ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনেও যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক আসবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কৃচ্ছ্রসাধন রীতি অনুসারে তহবিল কাটছাঁটের কারণে আগামী বছরের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের কলেবরটি ছোট হতে পারে। মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন- আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণকে সামনে রেখে প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠাবে আইআরআই। তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)। আগামী মাস দেড়েকের মধ্যে প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের আসার কথা রয়েছে। স্মরণ করা যায়, মার্কিন প্রশাসন, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ লিসা কার্টিসের আইআরআইয়ের সঙ্গে যুক্ততা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। 

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে তিনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে, তহবিলের সংকটের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। তাই বাংলাদেশের নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ দল পাঠাচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে সামনের দিনগুলোতে এমন আরও একাধিক মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জানতে গত আগস্টে বাংলাদেশ সফর করে আইআরআই-এর একটি প্রতিনিধিদল। ওই সময় প্রতিনিধিদলটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে আলোচনা করে। এর পাশাপাশি আইআরআই প্রতিনিধিদল ওই সময় বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় করে। ২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আট সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে এসেছিল আইআরআই ও এনডিআইয়ের একটি নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। ওই দল সংসদ নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচনের পরে সীমিত পরিসরে নির্বাচনী সহিংস পরিস্থিতির কারিগরি মূল্যায়ন করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির থিংক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত আইআরআই আর এনডিআই। 

কমনওয়েলথ এবং অন্যদের অবস্থান: এদিকে কমনওয়েলথ ইলেকট্রোরাল সাপোর্ট সেকশন এর প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে। দুই সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন কমনওয়েলথ (ইএসএস) এর লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ন্যান্সি কানিয়াগো। সঙ্গে ছিলেন কমনওয়েলথ (ইএসএস) এর এক্সিকিউটিভ অফিসার ম্যাডোনা লিঞ্চ। কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদল সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে। তারা নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করে।  কমনওয়েলথ-এর সঙ্গে বাংলাদেশের বিশেষ সুসম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে কমনওয়েলথ প্রতিনিধি ন্যান্সি কানিয়াগো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরপরই কমনওয়েলথ-এর সদস্যপদ লাভ করে। তিনি বলেন, কমনওয়েলথ-এর নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রুপ রয়েছে। বাংলাদেশ আমন্ত্রণ জানালে কমনওয়েলথ নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রপ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।