গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ রিকশাচালককে রাজধানীর রামপুরার ডেলটা হেলথ কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির এক চিকিৎসকসহ পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গ্রেপ্তারকৃতদের সবাই হাসপাতালের কর্মরত ছিলেন।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রিকশাচালককে সহযোগিতা করতেই তাদের চিকিৎসক ও স্টাফরা এগিয়ে গিয়েছিলেন। সেই দিনের ঘটনাস্থলের বেশ কয়েকটি ভিডিও দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে রয়েছে, যেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার চিত্র ধরা পড়েছে।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তি আহত রিকসাচালক ইসমাইলকে হাসপাতালের গেটের সামনে ধরে রেখেছেন, এ সময় একজন দারোয়ান গেট খুলে সহযোগিতা করছেন। নীল পাঞ্জাবি পরিহিত সেই ব্যাক্তির নাম ডা. সাদি বিন শামস, এসময় তিনি গুলিবিদ্ধ রিকশাচালকের শারীরিক অবস্থা জানার চেষ্টা করেন। ঠিক সেই সময়ে হাসপাতালের বাইরে থেকে গুলির আওয়াজ শোনা যায়। আতঙ্কে সবাই হাসপাতালে ভেতরে চলে যেতে দেখা যায়। ভিডিওতে আরও শোনা যায়, কেউ একজন উচ্চস্বরে সবাইকে ভেতরে প্রবেশ করতে বলছেন। পরে আহত সেই রিকশাচালক মারা যায়।
এই ঘটনার ৬ মাস পর গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে ওই হাসপাতালের পাঁচজনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তারা হলেন, ডেলটা হেলথ কেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সাদি বিন শামস, মার্কেটিং অফিসার হাসান মিয়া, মেইনটেন্যান্স বোরহান উদ্দিন, সিকিউরিটি গার্ড ইসমাইল ও নাজিম উদ্দিন।
পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই রামপুরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হন রিকশাচালক ইসমাইল। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসা দেওয়া হয়নি বলে পুলিশের অভিযোগ।
পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে বলা হয়েছে, সেদিন বেলা সাড়ে তিনটার সময় রিকশাচালক ইসমাইল গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়েছিলেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রিকশা চালককে সহযোগিতা করতেই হাসপাতালের স্টাফ ও চিকিৎসক সাদি এগিয়ে যান।
এ বিষয়ে ডেলটা হেলথ কেয়ার হাসপাতালের ম্যানেজার মামুনুর রশিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সব ভিডিও আমাদের নয়। তবে জুলাই বিপ্লবী জোটের ফেসবুক পোস্টে দেয়া ভিডিওটি আমাদের অফিস স্টাফের করা ভিডিও।
তিনি আরও বলেন, রিকশা চালককে সহযোগিতা করতেই আমাদের স্টাফ ও চিকিৎসক এগিয়ে যান। ভিডিওতেও ডা. সাদি যে সহযোগিতা করছেন তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও জুলাই আন্দোলনের সময় আমরা অনেককে চিকিৎসা দিয়েছি। আমাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি সঠিক নয়। আদালতের প্রতি সম্মান রেখেই আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো।
হাসপাতালের আইটি ও কাস্টমার অফিসার নূরনবী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রিকশা চালককে গুলি করার ভিডিওটি আমার অন্য একটি আইডি থেকে পোস্ট করা হয়। পরে জুুলাই বিপ্লবী জোটের ফেসবুক পোস্টে আমার করা ভিডিও তাদের ফেসবুকে পোস্ট করে।
হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়ে তিনি বলেন, গত ১৮ আগস্ট সাদা পোষাকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সিসিটিভি ফুটেজটি ডিলেট করতে বলেন এবং কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক তারা খুলে নিয়ে যায়।
হাসপাতালের এডমিন অফিসার তৌহিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আমাদের হাসপাতালের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়ে পড়ে থাকেন রিকশা চালক মো. ইসমাইল (৬৩)। পরে আমাদের স্টাফ, চিকিৎসক ও বাহিরের কয়েকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ আবার গুলি করলে তাকে হাসপাতালের সিঁড়ির উপর রেখেই সবাই সরে পড়েন। এমনকি ডা. সাদির পড়নে থাকা পাঞ্জাবী গুলিবিদ্ধ হয়ে তা হাসপাতালে প্রবেশ পথের দেয়ালে বুলেটটি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের স্টাফরা তখন হাসপাতালের গেটের ভিতরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।। হঠাৎ একটা গুলি এসে রিকশা চালকের মাথায় এসে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আমাদের দুইজন স্টাফ নূর নবী ও বোরহান পাঠান তাকে উপরে নেওয়ার জন্য উঠাতে যান এবং মেডিকেল অফিসার ডা. সাদি বিন শামস রোগীর অবস্থা জানার জন্য দৌড়ে যান। এরপরই দুইটা গুলির শব্দে আমাদের হাসপাতালের গেট কেঁপে উঠে। একটা গুলি মেডিকেল অফিসারের পাঞ্জাবি ভেদ করে গেটের দক্ষিণ পাশে আঘাত করে। তখন আমরা গেটের ভেতরে অবস্থান করি। আর লাশ গেটের সিঁড়িতে পড়ে থাকে। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ এসে লাশের ছবি উঠায় এবং নির্দেশ দেয় এই লাশ যেনো কেউ না ধরে। তখন আমাদের কি করার ছিলো। আমরা অনেক চেষ্টা করেও লাশ ভিতরে নিতে পারেনি।
ডা. সাদি বিন শামসের পিতা মো. শামস উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের একটি সংগঠন আমার ছেলের বিষয়ে মামলা বিষয়টি দেখছেন। আমার ছেলের কোন অপরাধ নেই। ভিডিওতেও দেখা যাচ্ছে সে রোগীকে সহযোগিতা করতেই এগিয়ে এসেছে। ’