Image description

ভারতের বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি পাওয়ার কোম্পানি বর্তমানে একাধিক সমস্যার মধ্যে পড়েছে; বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বিতর্ক, বিপুল বকেয়া পাওনা এবং অতিরিক্ত বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কঠিন অবস্থায় রয়েছে।

বাংলাদেশে আদানির সংকটকে বিনা মেঘে বজ্রপাতের সঙ্গে তুলনা করেছে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু। পত্রিকাটির অর্থনীতিবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘বিজনেস লাইন’ এই বিষয়ে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।

নিবন্ধে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে আদানি পাওয়ার ভারতের ঝাড়খন্ডে অবস্থিত তাদের গোড্ডা প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে। যদিও চুক্তি অনুযায়ী, মোট বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট।

বর্তমানে বাংলাদেশের কাছে আদানির পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে ডিসেম্বর থেকে প্রতি মাসে ৭০-৮০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ।

গোড্ডা প্রকল্পটি একটি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ‘আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্র। মূলত আমদানি করা কয়লা দিয়ে এটি পরিচালিত হয়। ভারতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন একটি বিশেষ ট্রান্সমিশন করিডরের মাধ্যমে এখান থেকেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

এদিকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে আদানি পাওয়ারসহ বিগত সরকারের ১১টি মেগা চুক্তি উচ্চ আদালতের নির্দেশে পর্যালোচনার আওতায় এসেছে। আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, একটি আন্তর্জাতিক আইন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে যেন এসব চুক্তির যথার্থতা পরীক্ষা করা হয়।

এ ছাড়া আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা এই প্রকল্পের জন্য ভারতের সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কর-সুবিধার কথা প্রকাশ করেনি। আদানির কয়লার মূল্য অন্যান্য উৎসের তুলনায় বেশি হওয়ায় চুক্তির আর্থিক বিষয়গুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বিশ্লেষকদের মতামতের ভিত্তিতে বিজনেস লাইনের ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, সীমান্ত পারাপারের ব্যবসায় ঝুঁকি থাকে সব সময়; বিশেষ করে সরকারসংশ্লিষ্ট প্রকল্পে। এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায় যখন প্রকল্পটি এমন কোনো দেশের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যেখানে চুক্তি বাস্তবায়নের সক্ষমতা দুর্বল।

নিবন্ধটিতে একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, ‘বাজে পরিস্থিতিতে কোনো কন্ট্রাক্টর চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি না হয়েও সে তা পারে। তবে বাংলাদেশ ও আদানি, উভয়ের দিক থেকেই এটি একটি ভালো চুক্তি ছিল। বাংলাদেশ পেয়ে আসছিল তুলনামূলক সস্তা ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ, আর আদানি ভারতীয় বাজারের তুলনায় বেশি লাভ করছিল।’

জানা গেছে, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের সমস্যার পর আদানি পাওয়ার বিদ্যুৎ রপ্তানির বিকল্প পথ অনুসন্ধান করছে। ভারত সরকার সম্প্রতি এমন কিছু নীতিমালা শিথিল করেছে, যা বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য তৈরি প্রকল্পগুলোকে দেশের ভেতরেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করার অনুমতি দিয়েছে।

গোড্ডা প্রকল্প থেকে শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুৎ রপ্তানির সম্ভাবনাও বিবেচনায় আছে। তবে এখনো জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেনি আদানি পাওয়ার।

বিভিন্ন প্ল্যান্টে আদানি পাওয়ারের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ১৭ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট, যা ভারতের মোট উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় ৭ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৩০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে সংস্থাটির।

এ ছাড়া আমদানি করা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে আদানি গ্রুপ তাদের আন্তর্জাতিক কয়লা খনির উপস্থিতিও কাজে লাগাচ্ছে। এর ফলে তাদের কাঁচামাল পাওয়ার ঝুঁকি কমছে।

কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি, বকেয়া পাওনা এবং রাজনৈতিক জটিলতার ফলে আদানি পাওয়ার বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি চুক্তির শর্ত এবং দীর্ঘ মেয়াদে এই প্রকল্প টেকসই হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।