Image description

শিশুসহ জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের প্রতি ‘আমরা’ বেখেয়াল বলেই তারা সন্ত্রাসে ঝুঁকছে বলে মন্তব্য করেছেন মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুবায়ের জুয়েল রানা। দেশে থাকা বিহারী জনগোষ্ঠীকে নিয়ে অতীতে শুধু রাজনীতি করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সম্প্রতি মোহাম্মদুপরে জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান পরিচালনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন কথা বলেন এডিসি জুয়েল রানা।

এ বক্তব্যের ১.৪২ মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ব্যক্তিগত আইডিতে নিজেই শেয়ার করেছেন তিনি। পোস্টের ক্যাপশনে এডিসি জুয়েল রানা লিখেছেন, ‘যুগের পর যুগ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া জেনেভা ক্যাম্পের সাধারণ মানুষদের সমস্যা না ভেবে তাদের সম্পদে রূপান্তর করতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’

ভিডিওতে এডিসি জুয়েল রানাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো কৃষকের সন্তান। আমার বাবা-মা যদি আমাকে কৃষিকাজ করাত, তাইলে আজকে এ জায়গায় আসতে পারতাম না। (তারা) সুযোগ দিয়েছে, আল্লাহ কবুল করেছে, এডিসি হয়েছি। হয়তো ভবিষ্যতে আল্লাহ রিজিক রাখলে আরও বড় কিছু হব।’

জেনেভা ক্যাম্পের শিশুদের দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘চলনবিলের মাঝখান থেকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছি। আমার তো সুযোগ ছিল। এই বাচ্চাটার কথা খেয়াল করেন, এদের কোনো ভবিষ্যত আছে? ওরা বড় হয়ে কী হবে? এই জেনেভা ক্যাম্প থেকে এখন পর্যন্ত কোনো এসপি হয়নি, ম্যাজিস্ট্রেট হয়নি, জাজ হয়নি, বড় ডাক্তার হয়নি, রাজনীতিবিদ হয়নি, কেউ হয়নি। অথচ এরা তো আমাদের দেশের সম্পদ। দেশের মানুষ না? এদের প্রতি আমরা কেন বেখেয়াল? বেখেয়ালের জন্যই তো আজকে এরা মাদক বিক্রি করে, মারামারি করে, ফাটাফাটি করে। এই গণ্ডির বাইরে বের হতে পারে না।’

বিহারী জনগোষ্ঠীকে নিয়ে অতীতে শুধু রাজনীতি করা হয়েছে উল্লেখ করে এডিসি জুয়েল রানা বলেন, ‘এর আগে আমরা শুনেছি, এদের নিয়ে খালি রাজনীতি আর রাজনীতি। দেখেন, এই বাচ্চাগুলো কী সুন্দর, এরা যদি পুলিশে আসত, নায়কের মতো পুলিশ হত। আমার মত কালো পুলিশ হত না।’

এডিসি জুয়েল রানা প্রথমবার আলোচনায় আসেন ২০২১ সালে কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার থাকাকালে। ওই সময় জেলার দাউদকান্দি ও চান্দিনা সার্কেলের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে কালিকাপুর, উজিরপুর ও কাশিনগর ইউনিয়নের আইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো তাকে। ওই সময়ে কালিকাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ভোটারদের নিয়ে অনুষ্ঠিত একটি সভায় যোগ দিয়ে জুয়েল রানা উপস্থিত প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেছিলেন- ‘নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বলে চেয়ারম্যান হবেন সেটা ভুলে যান, ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলেই ডাইরেক্ট গুলি চলবে!’

 

ওই দিন তিনি বলেন, ‘ব্যালটে হাত দেবেন তো গুলি করব। আমাদের প্রশিক্ষণ আছে, অর্ডার আছে এরপর কেউ কেন্দ্র দখল করতে আসলে আমরা কী ফিডার খাব? গুলি করব, এতে যদি কারো হাত-পা পড়ে যায় আমাদের কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। অস্ত্র চালানোর একটা নিয়ম আছে, আগে অনুরোধ করব না শুনলে গুলি করব। নির্বাচনের দিন আমি কালিকাপুর, উজিরপুর ও কাশিনগর এই ৩টি ইউনিয়েনের সরাসরি দায়িত্বে থাকব। আমি কথা দিচ্ছি এই ৩টি ইউনিয়নে দায়িত্ব পালনকালে কুমিল্লা থেকে কোনো মন্ত্রীও যদি আমাকে ফোন করে আমি কারো কথা শুনব না বরং কথা রেকর্ড করে আমি ছেড়ে দেব। সুতরাং এমপি, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী কারো দোহাই দিয়ে আপনারা নির্বাচিত হতে পারবেন না। আমরা মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মানুষ যদি একজন রিকশাচালককেও নির্বাচিত করে সেই হবে ওই ইউনিয়েনের আগামী ৫ বছরের অভিভাবক। ইনশাল্লাহ জনগণের ভোটের অধিকার আমরা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই। এটা শুধু আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব না, এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্বও।

এ ঘটনার পর স্ট্যান্ড রিলিজ করে বদলি করা হয় জুয়েল রানাকে। একই সাথে দেওয়া হয় বিভাগীয় মামলা। একের পর এক নিজ দপ্তর থেকেই নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে থাকেন তিনি।