 
              গত ২২ অক্টোবর গাজীপুরের টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মোহাম্মাদ মোহেব্বুল্লাহ-কে (এনআইডি অনুযায়ী নাম) যিনি ‘মুফতি মুহিবুল্লাহ মিয়াজী’ হিসেবেও পরিচিত- অপহরণ করা হয়েছে বলে দাবি করে তার পরিবার। পরদিন ২৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ছয়টায় মোহেব্বুল্লাহকে উত্তরের জেলা পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের সিতারাম হেলিপ্যাড এলাকায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের পাশ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় জনতা তাকে অর্ধবিবস্ত্র ও পায়ে শিকল জড়ানো অবস্থায় দেখতে পুলিশকে জানালে তারা এসে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। ওইদিন রাতেই পরিবারের সদস্যরা টঙ্গী থেকে পঞ্চগড় গিয়ে মোহেব্বুল্লাহকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
উদ্ধারের পর মোহেব্বুল্লাহ দাবি করেন, সকালে হাঁটতে বের হলে টঙ্গীর মাজু খান ব্রিজ এলাকা থেকে একদল ব্যক্তি জোরপূর্বক তাকে একটি এ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে অপহরণ করে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, অপহরণকারীরা দিনভর তাকে নিয়ে এ্যাম্বুলেন্স-যোগে ঘুরতে থাকে এবং তারা তাকে দফায় দফায় শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে তাকে অপহরণকারীরা পঞ্চগড়ে ফেলে যায়। তিনি দাবি করেন, ঘটনার একদিন আগে (২১ অক্টোবর) বিতর্তিক হিন্দু সংগঠন ‘ইসকন’ এর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে তাকে সতর্ক ও হুমকি দেয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, “অখণ্ড ভারত ও ইসকনের পক্ষে কথা বলার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল, এবং তা অমান্য করায় আমাকে গুম করে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।”
২৪ অক্টোবর নিজে বাদী হয়ে টঙ্গী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মুফতি মোহেব্বুল্লাহ। পরবর্তীতে গত ২৭ অক্টোবর রাতে পুলিশ মোহেব্বুল্লাহকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। এসময় পুলিশ তাকে অপহরণ করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি জানালে এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন যে, তাকে কেউ অপহরণ করেনি। তিনি স্বেচ্ছায় বাসে উঠে পঞ্চগড় চলে যান।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ দাবি করে মোহেব্বুল্লাহ গাবতলী থেকে শ্যামলী বাসের টিকেট কেটে পঞ্চগড় রওনা হন এবং পথিমধ্যে বগুড়ার শেরপুরে পেন্টাগন হোটেলে যাত্রাবিরতির সময় তাকে বাস থেকে নামতে এবং উঠতে স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে।
এরপরই বিভিন্ন মিডিয়া ও সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়, মোহেব্বুল্লাহর নামে ওইদিন ইস্যু করা শ্যামলী বাসের অনলাইন টিকেট এবং পেন্টাগন হোটেলের সামনের সিসিটিভি ফুটেজ যেখানে তাকে বাস থেকে নামতে দেখা যায়।
তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে অনলাইনে সংঘবদ্ধ প্রচারণা এবং অনলাইনে আসা সিসিটিভি ফুটেজের যথাযথ ব্যাখ্যা না থাকা, মামলার এজহার ও মোহেব্বুল্লাহর মৌখিক বর্ণনায় (যা সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও আকারে প্রকাশিত হয়েছে) কিছু গরমিল থাকা ইত্যাদি নানা কারণে কিছু বিষয়ে এখনও ধোঁয়াশা বিদ্যমান।
দ্য ডিসেন্ট চেষ্টা করেছে এই ঘটনার আদ্যেপান্ত জানার; পাশাপাশি ইতোমধ্যে প্রকাশিত নানা তথ্য-প্রমাণ যাচাই করে দেখেছে। এজন্য ঘটনা সংশ্লিষ্ট যাবতীয় ডকুমেন্টের মূল কপি সংগ্রহ এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট নানাপক্ষের ২০ জনের বেশি ব্যক্তির সাথে কথা বলেছে।
"ইসকন গুম করেছে" বলে সংঘবদ্ধ প্রচার:
২২ অক্টোবর মোহেব্বুল্লাহ নিখোঁজ হওয়ার খবর সামাজিক মাধ্যমে আসার পরপরই কয়েকজন অনলাইন এক্টিভিস্ট ‘মোহেব্বুল্লাহকে ইসকন গুম করেছে’ বলে প্রচার করতে থাকেন। মোহেব্বুল্লাহ উদ্ধারের আগে তাদের এই প্রচারণার সূত্র ছিলেন মোহেব্বুল্লাহর ছোট ছেলে মোহাম্মাদুল্লাহ। তার বরাতে ‘ইসকন এর পাঠানো’ কথিত হুমকিমূলক একটি চিঠিও প্রকাশ করেন এসব অনলাইন এক্টিভিস্টরা। এই প্রচারণাটি ছিল বেশ সংঘবদ্ধ যার নেতৃত্বে ছিলেন আতাউর রহমান বিক্রমপুরী নামের একজন ব্যক্তি যিনি অনলাইনে দীর্ঘদিন ধরে উগ্রপন্থী বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন করে আসছেন। বিক্রমপুরীর বিরুদ্ধে নিকত অতীতে দেশের মূলধারার আলেমদেরকে গালাগালি, ‘নাস্তিক’ ও ‘শাতিম’ হত্যার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে ক্যাম্পেইন করার প্রমাণ রয়েছে। ২০২১ সালে তাকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানার ব্যবহার করে থানা ঘেরাও, সংবাদমাধ্যমের অফিস ঘেরাওসহ নানা ঘটনায় ‘মব’ সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মোহেব্বুল্লাহ নিখোঁজের ঘটনায় আতাউর রহমান বিক্রমপুরীর সাথে তাল মিলিয়ে যারা ঘটনাটিকে ‘ইসকন কর্তৃক গুমের ঘটনা’ বলে প্রচার করেছেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই বিগত বছরগুলোতে উগ্রপন্থার সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মামলা হয়েছিল এবং ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন ইস্যুতে তারা সংঘবদ্ধভাবে অনলাইন এক্টিভিজম করেছেন।
মোহেব্বুল্লাহকে উদ্ধারের পর পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজসহ নানান তথ্যপ্রমাণ দিয়ে নিখোঁজের ঘটনাটি গুম বা অপহরণ নয় বরং স্বেচ্ছায় ঘটিয়েছেন তিনি– এমন বক্তব্য হাজির করলে এই অনলাইন এক্টিভিস্টরা পুলিশের বক্তব্যকে ‘নাটক’ এবং ফুটেজগুলোকে ‘এডিটেড’ বলে নতুনভাবে প্রচার শুরু করেন।
টিএমডি: হিন্দু গণহত্যার আহ্বানে ক্যাম্পেইন
গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে TMD হ্যাশট্যাগে একটি ক্যাম্পেইন চলছে যার পূর্ণরূপ হলো, Total Malaun Death; অর্থাৎ ‘হিন্দুদের সম্পূর্ণরূপে হত্যা’ বা ‘সব হিন্দুকে হত্যা/গণহত্যা’। দ্য ডিসেন্ট এই ক্যাম্পেইন চালানো কয়েক ডজন বেনামী ফেসবুক প্রোফাই ও পেইজ চিহ্নিত করেছে। মুফতি মোহেব্বুল্লাহ এর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে তার ছোটছেলে মোহাম্মাদুল্লাহর বরাতে আতাউর রহমান বিক্রমপুরীসহ অন্যরা ‘ইসকন কর্তৃক গুমের ঘটনা’ হিসেবে প্রচারণা শুরু করার পর ওইসব প্রোফাইল থেকে ব্যাপকভাবে TMD হ্যাশট্যাগে বিভিন্ন কন্টেন্ট প্রচার করা শুরু হয়। এসব কন্টেন্টের মধ্যে টেক্সট, ছবি, ভিডিও, গান এবং বিভিন্ন ব্যক্তির বক্তব্য রয়েছে। কিছু আইডি ও পেইজ থেকে আতাউর রহমান বিক্রমপুরীর একটি বক্তব্যের ক্লিপ পোস্ট করে #BanISCKON এবং #TMD হ্যাশট্যাগ দেয়া হয়েছে। আরও কিছু পোস্টে মোহেব্বুল্লাহর নিখোঁজের ঘটনায় ইসকনকে দায়ীকে তার ছোট ছেলে ও বিক্রমপুরীর বক্তব্যের ভিডিও পোস্ট করে ‘Total Malaun Death’ লিখে TMD হ্যাশট্যাগ দেয়া হয়েছে।

টিএমডি ক্যাম্পেইন | ফেসবুক
মোহেব্বুল্লাহ ইস্যুতে বিক্রমপুরীর রহস্যজনক ভূমিকা
মোহেব্বুল্লাহ নিখোঁজের পর শুরুরদিকেই অনলাইনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন আতাউর রহমান বিক্রমপুরী। ঘটনাটিকে ‘ইসকন কর্তৃক গুমের ঘটনা’ বলে প্রচার শুরু করেন। এরপর তার সহযোগী ও অনুসারীরাও একই প্রচারণায় নেমে পড়েন।
নিখোঁজের পরদিন মোহেব্বুল্লাহকে পঞ্চগড়ে উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়লে মোহেব্বুল্লাহর ছোটছেলে মোহাম্মাদুল্লাহকে নিয়ে পঞ্চগড়ে যান আতাউর রহমান বিক্রমপুরী। ২৪ অক্টোবর মোহেব্বুল্লাহর চিকিৎসা শেষে তাকে নিয়ে তার ছোট ছেলে ও বিক্রমপুরী টঙ্গীতে ফেরেন। এরপর প্রায় সর্বক্ষণ বিক্রমপুরী মোহেব্বুল্লাহ ও তার ছোট ছেলের সাথে ছিলেন এবং পারিবারিকভাবে সম্পর্কিত না হলেও ঘটনাপ্রবাহে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন।
বিক্রমপুরীর ফেসবুক প্রোফাইলে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, টঙ্গী থানায় পুলিশ যখন মোহেব্বুল্লাহর বড় ছেলে আব্দুল্লাহকে বাদীপক্ষ করে এজাহার লেখার কথা বলে তখন তাতে বাধা দেন বিক্রমপুরী। বিক্রমপুরী তখন দাবি করেন, বড় ছেলে আব্দুল্লাহ মানসিক ভারসাম্যহীন ও তাকে জাদু করা হয়েছে। এসময় এই ইস্যুতে পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বাদানুবাদে জড়াতে দেখা যায় তাকে। বিক্রমপুরী পুলিশকে বলেন, তারা পরবর্তীতে আইনজীবীসহ এসে এজাহার দাখিল করবেন।
এসময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা মোহেব্বুল্লাহকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনার পরিবারের দায়িত্ব কি উনি (বিক্রমপুরী) নিয়া নিছে? বিক্রমপুরী মহিব্বুল্লাহকে ‘হ্যা’ বলতে বলেন। তখন মোহেব্বুল্লাহ বলেন তার মামলা পরিচালনার দায়িত্ব তিনি বিক্রমপুরীকে দিয়েছেন। এসময় বিক্রমপুরী বলেন, “তার গোটা পরিবার এখানে আছে, ভিক্টিম আছেন, উনার ভাতিজা, ভাগিনারা আছেন, সবাই দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করেছে। আমি তার পরিবারের, স্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও কেন্দ্রীয় ওলামায়ে কেরাম সবার সাথে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত আমি নেব। কারণ কেন্দ্র থেকে যেটা বলে দেয়া হয় আমাদেরকে যে ফিল্ডে স্থানীয় কতৃপক্ষের সিদ্ধান্তই ছূড়ান্ত। কারণ আমরা তো হালত দেখতেছিনা। তোমরা আমাদেরকে জানাবা, আমরা পরামর্শ দিব। সিদ্ধান্ত কার নিতে হবে? যে ফিল্ডে আছে।”
মোহেব্বুল্লাহর সাথে বিক্রমপুরী পারিবারিকভাবে সম্পর্কিত না হলেও তার ছোটছেলে মোহাম্মাদুল্লাহর সাথে বিক্রমপুরীর আগে থেকে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে ছোটছেলে একাধিক ভিডিওতে এবং দ্য ডিসেন্ট এর কাছে স্বীকার করেছেন।
বিক্রমপুরী এবং মোহাম্মাদুল্লাহর কিছু আচরণ ও বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়, নিখোঁজের ঘটনার বয়ান নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা উভয়ে মোহেব্বুল্লাহর বড় ছেলে আব্দুল্লাহকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন। যার অংশ হিসেবে মামলার বাদী হওয়া এবং এজাহার লিখতে বড় ছেলেকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলে বাঁধা দেন বিক্রমপুরী। অন্য আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট ছেলে মোহাম্মাদুল্লাহ বড়ছেলে আব্দুল্লাহকে মাইকে কথা বলতে বাঁধা দিচ্ছেন এবং বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হচ্ছেন।
বিক্রমপুরীর পেইজ থেকে লাইভ সম্প্রচারিত আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্রমপুরীকে তার পূর্বপরিচিত জানিয়ে মোহেব্বুল্লাহর ছোট ছেলে মোহাম্মাদুল্লাহ বলছেন, “বিক্রমপুরী সাহেব যেহেতু এই বিষয় নিয়া ঘাঁটাঘাটি করেন এবং এই বিষয় নিয়া কেস লড়েন উনি, আমি উনাকে স্বচক্ষে দেখছি, রমজানে রোজা রাইখাও আমি উনার সাথে ছিলাম। তো যেহেতু এই বিষয়টাতে চুপ করে বইসা থাকলে হবেনা, আমি উনাকে সরাসরি ফোন দেই। উনাকে নিয়ে আসার পর উনার সাথে আমরা লাইভে যাই। লাইভে যাইয়া জিনিসটা ভাইরাল করি। পরে আব্বুকে তেতুলিয়া নিয়ে গেছে। ভারত নিয়ে যাবেনা এই গ্যারান্টি কে দিবে? ঠিক আছে ওরা ভারত নিবে না তেতুলিয়া কেন নিয়ে গেছে?”

আতাউর রহমান বিক্রমপুরীর দুটি ফেসবুক পোস্ট | ফেসবুক
লাইভে প্রচারিত এসব কথা বলার সময় মোহেব্বুল্লাহর বড় ছেলে আব্দুল্লাহও সেখানে ছিলেন। তিনি চুপচাপ শুনছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি কিছু একটা বলতে চাইলে মোহাম্মাদুল্লাহ উত্তেজিতভাবে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, “যেভাবে উনাকে নির্যাতন করা হয়েছে, যেভাবে তাকে গালিগালাজ করা হয়েছে, তেতুলিয়া নিয়ে যাওয়া হয়েছে, গুম, খুন, ধর্ষণ, ইস্কনের দর্শন, অবশ্যই তারা আব্বুকে পাচার করে দিত। আমাদের লাইভের কারণে তারা পাচার করতে পারেনি। এখন যদি আপনারা সবাই বলেন যে, আপনারা ইয়া করতে পারবেন তাহলে আমাকে এই স্টেটমেন্ট দিতে হবে যে, নেক্সট টাইম কোন চিঠি আসবে না। আব্বু জিহাদ, গাজওয়াতুল হিন্দ সমস্ত বিষয়ে মুখ খুলে কথা বলবে।”
বড় ছেলে আব্দুল্লাহ এ পর্যায়ে তার ছোট ভাইকে বলেন, “তোর কথা শেষ হইসে? তাইলে আমি একটু বলি।”
মোহাম্মাদুল্লাহ সুযোগ দিলে তিনি বলেন, “এক নাম্বার কথা হইসে তেতুলিয়া নেয় নাই। পঞ্চগড় সদরেও সম্পূর্ণ নেয় নাই।”
মোহাম্মাদুল্লাহ বাধা দিয়ে বলেন, “পঞ্চগড় কেন নিবে?”
আব্দুল্লাহ বলেন, “তোর কথা বলার সময় আমি কথা বলি নাই।” তবে মোহাম্মাদুল্লাহ’র বাকবিতন্ডায় আব্দুল্লাহ তার কথা শেষ করতে পারেননি।
মোহেব্বুল্লাহর উদ্ধার, মামলা দায়ের ও পরবর্তীতে নিজের দোষ স্বীকার করা- এই ঘটনাগুলো যখন চলছিল তখন দ্য ডিসেন্ট থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয় তার পরিবারের সাথে। বড় ছেলে আব্দুল্লাহকে কল দিলে তিনি তার ছোট ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলেন। ছোটছেলে মোহাম্মাদুল্লাহকে কল দিলে তিনি বিক্রমপুরীর সাথে কথা বলতে বলেন। বিক্রমপুরীকে ৩ দিন ধরে বেশ কয়েকবার কল করেন দ্য ডিসেন্ট প্রতিবেদক। তবে তিনি একবারও কল রিসিভ করেননি।
মোহাম্মাদুল্লাহর কাছে দ্য ডিসেন্ট-এর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় তিনি নিজে কথা না বলে বিক্রমপুরীকে কথা বলার দায়িত্ব দিলেন কেন? জবাবে তিনি বলেন, “উনি আমাদেরকে কারো সাথে এ বিষয়ে কথা না বলার জন্য বলেছেন। বিক্রমপুরী হুজুর শুরু থেকে বিষয়টা নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি সবকিছুর দায়িত্ব নিতে চেয়েছেন। এখন আমি যদি না করি তাহলে যদি উনি আবার ক্ষেপে যান তাই আমি কিছু বলিনাই।”
মোহেব্বুল্লাহর বড় ছেলে কি ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’?
আতাউর রহমান বিক্রমপুরীর দাবি অনুযায়ী, মোহেব্বুল্লাহ মিয়াজীর বড় ছেলে আব্দুল্লাহ ভারসাম্যহীন ও জাদুগ্রস্থ। আব্দুল্লাহর ব্যাপারে তার এ দাবি সত্য কিনা তা মিয়াজীর পরিবারকে ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন এমন কয়েকজন প্রতিবেশীর কাছে জানতে চায় দ্য ডিসেন্ট। 
টিএন্ডটিতে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতিবেশী জানান, “আব্দুল্লাহকে খারাপ বা ভারসাম্যহীন বলবে এমন কোন মানুষ নাই। সে খুবই মার্জিত, ভদ্র এবং শিক্ষিত একটা ছেলে।”
মিয়াজী যে মসজিদে ইমামতি করেন তার ঠিক সামনেই চায়ের দোকান চালান খায়রুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আব্দুল্লাহ মানসিকভাবে সুস্থ না এরকম কথা কোনদিন হুনিনাই। ওর মত ভালো পোলাই অয় না।”
আব্দুল্লাহ টিএন্ডটি বাজারে বর্তমানে ‘রস’ ব্রান্ডের মিষ্টির দোকানে চাকরি করেন। কথা হয় দোকানটির মালিক সাইফুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, “এই ধরণের দাবি সম্পূর্ণ বানোয়াট। তার নামে একটা খারাপ কথা কেউ বলতে পারবে না। ও তো উচ্চশিক্ষিত একটা ছেলে। এই চাকরি তো ওর জন্য না। আগের চাকরিটা চলে যাওয়ায় আমার এখানে আপাতত সময় দেয়।”
আব্দুল্লাহর আচরণে কখনো কোন অসংলগ্নতা দেখেননি বলে দাবি করেছেন দোকানের অন্যান্য স্টাফরাও।
এর আগে আব্দুল্লাহ একটি রিয়েল স্টেট কোম্পানিতে এসিস্ট্যান্ট একাউন্টেন্ট পদে চাকরি করতেন। তিন মাস আগে চাকরিটি থেকে ছাটাইয়ের শিকার হন। তিনি তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা থেকে কামিল ও টঙ্গী সরকারি কলেজ থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।
বিক্রমপুরী তাকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন বলে যে মন্তব্য করেছেন তার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ হেসে বলেন, “আমাকে যে ভারসাম্যহীন বললো উনার কাছে কি ডাক্তারি সার্টিফিকেট আছে? উনি কেন এটা বলেছে সেটা উনাকেই জিজ্ঞেস করুন।”
এমন মন্তব্য শোনে আপনার অনুভূতি কী– প্রশ্ন করলে তিনি আবারও হাসি দিয়ে বলেন, “আমার কোন অনুভূতি নাই। আমার অনুভূতি ভোঁতা হয়ে গেছে।”
এই ঘটনায় আতাউর রহমান বিক্রমপুরীর ভূমিকার সমালোচনা করে ২৯ অক্টোবর ফেস দ্য পিপল নামক একটি অনলাইন মিডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের আব্দুল্লাহ বলেন, "আইনজীবী বিকেলে আসবে তারপর মামলা দায়ের হবে। আমার আব্বু অপহৃত হইছে, আমার আব্বুকে উদ্ধার করা হয়েছে। আইনজীবী আসবে উনার। প্রশ্নটা এখানে। উনি যেটা বলবে সেটাই। এছাড়া আর কোন কিছু না। উনি আমার ফ্যামিলির সবাইকে ইমোশনালি এক প্রকার ব্ল্যাকমেইলের মত করে, উনি মুরব্বি সাজতে গিয়া উনি এমনভাবে ইয়ে করছে। দেখেন উনি আমার রক্তের কেউ না, বংশের কেউ না, এলাকার কেউ না, এমনকি বিভাগেরও কেউ না। কিন্তু উনি আইসা বংশের মুরব্বিদের এভয়েড কইরা, বংশের মুরব্বিদের এক প্রকার প্রলুব্ধ কইরা উনি দায়ভার নিয়া উনি বলেন আমি এটা (মামলা) করবো সন্ধ্যার সময়। উনার আইনজীবী এজাহার লিখসে, আমি জাস্ট দেখছি কী লিখছে। এখন আবার বিক্রমপুরী সাব বলতেছেন এজাহারে ভুল আছে। উনি আমাকে সকালে এজহার দায়ের করতে বাঁধা দিছেন এক প্রকার, পঞ্চগড় থেকে নিষেধ করছেন, এরপর সন্ধ্যায় উনার আইনজীবী এজাহার দায়ের করছে। এখন বলতেছে এজহারে নাকি মিসইনফরমেশন আছে। "
প্রমাণ বলছে, স্বেচ্ছায় বাস ভ্রমণ করেছেন মোহেব্বুল্লাহ
প্রাথমিক তদন্তের পর ইতোমধ্যে গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, মুফতি মোহেব্বুল্লাহর নিখোঁজের ঘটনাটি অপহরণ বা গুমের ছিল না। তিনি স্বেচ্ছায় টঙ্গী থেকে পঞ্চগড়ে গিয়েছিলেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান।
তিনি বলেন, “মোহেববুল্লাহ অপহরণের যে বর্ণনা দিয়েছেন এবং যে সময় ও স্থান থেকে তাঁকে তুলে নেওয়ার কথা বলেছেন, সেই সময়ের ওই সব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ অপহরণের কোনো প্রমাণ পায়নি। তিনি নিজেই নিজের পায়ে শিকল লাগিয়ে শুয়ে ছিলেন। তাঁকে উদ্ধারের পর মামলায় যা বলেছেন, তার পুরোটাই সাজানো গল্প।”
দ্য ডিসেন্ট ঘটনা সংক্রান্ত বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ, ছবি ও ডকুমেন্ট যাচাই করে দেখেছে। এ জন্য ঘটনাস্থলগুলোতে গিয়ে এসব ভিডিও এবং ডকুমেন্টের মূল এবং হাইরেজুলেশন সংস্করণ সংগ্রহ করেছে দ্য ডিসেন্ট এর প্রতিবেদক।
এসব ভিডিও ও ডকুমেন্ট পর্যবেক্ষণ করলে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এর সাথে মেলালে মোহেব্বুল্লাহর নিখোঁজে কোন জোরজবরদস্তির ন্যুনতম প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং তিনি যে, স্বেচ্চায় ভ্রমণ করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়।
প্রকাশিত সিসিটিভি ফুটেজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর উপজেলাস্থ চান্দিকোনা রোডে অবস্থিত পেন্টাগন হোটেলের দুটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। ফুটেজগুলোতে দৃশ্যমাণ ভবনগুলোকে জিওলোকেট করে দ্য ডিসেন্ট নিশ্চিত হয়েছে এগুলো শেরপুরের পেন্টাগন হোটেল ও আশপাশের ভবন।

সিসিটিভি ফুটেজ ও গুগল ম্যাপে হোটেল পেন্টাগনের অবস্থানের তুলনামূলক স্ক্রিনশট | দ্য ডিসেন্ট
পুলিশের ভাষ্যমতে, শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে করে ঢাকার গাবতলী থেকে পঞ্চগড়ে যান মোহেব্বুল্লাহ। যাওয়ার পথে বগুড়ার পেন্টাগন হোটেলে যাত্রা বিরতি করে বাসটি।
দ্য ডিসেন্ট এর সংগৃহীত হোটেল পাশের একটি ভবনের ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে দেখা যায়, বিকাল ৫টা ৩১ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডে হোটেলের দিকে মুখ করে দাঁড়ানো শ্যামলী পরিবহনের একটি সাদা ও কমলা রংয়ের বাস থেকে যাত্রীরা যে যার মতো নামছেন। এসময় হোটেলটির সামনে আর কোন বাস ছিল না।
৫টা ৩২ মিনিট ৮ সেকেন্ডে মুফতি মোহেব্বুল্লাহকে নামতে দেখা যায় বাস থেকে। বাস থেকে নেমে তিনি হোটেলেটির সামনে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকেন। তারপর ৩২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে পশ্চিম দিকে হাঁটতে থাকেন। বাস থেকে নামার সময়ই মোহেব্বুল্লাহর পরিহিত গায়ের জামাটি (জোব্বা) কোমরের কাছে গুটানো দেখা যায়। ৩২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে দেখা যায় জামার গুটানো অংশটি খুলে সেটির দুই পাশে দুই হাতে ধরে সামনের দিকে এনে গিট্টু দেয়ার চেষ্টা করতে করতে হাঁটছেন। লম্বা জোব্বা/কোর্তা পরেন এমন ব্যক্তিরা অযুখানা বা টয়লেটে যাওয়ার আগে সাধারণত এভাবে জোব্বা/কোর্তার নিচের অংশ উপরের দিকে গুটিয়ে গিট্টু দিয়ে রাখেন।
এসময় তার মুখে একটি কালো মাস্ক, চোখে একটি কালো সানগ্লাস, মাথায় একটি সাদা টুপি এবং পরনে একটি ডিলেডালা পায়জামা ও পায়ে স্যান্ডেল দেখতে পাওয়া যায়। পেন্টাগন হোটেলের পশ্চিমপাশে নামাজ পড়ার একটি ঘর রয়েছে যার পাশে একটি অজুখানাও রয়েছে।
একই ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে ৫টা ৪২ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে মোহেব্বুল্লাহকে আবার পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়। এসময় তিনি সরাসরি বাসে গিয়ে উঠেন। তখন সময় শ্যামলীর বাসটির দু’পাশে আরও দু’টি বাস দেখতে পাওয়া যায়।
হোটেলটির সামনে পশ্চিম দিকে মুখ করে স্থাপন করা আরেকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও তাকে পশ্চিম দিক থেকে হেঁটে আসতে দেখা যায়। দু’টি ক্যামেরার ফুটেজে মোহেব্বুল্লাহর উপস্থিতির টাইম স্ট্যাম্প মিলে যায়।
দুটি ভিডিওতে সর্বদাই মোহেব্বুল্লাহকে স্বতস্ফুর্ত দেখা গেছে। কোন ব্যক্তি দ্বারা পরিবেষ্টিত বা জোরজবরদস্তির শিকার হচ্ছেন এমন কোন নিদর্শন দেখা যায়নি।
টঙ্গীতে এবং পেন্টাগন হোটেলে পোশাকের ভিন্নতার তথ্য সঠিক নয়
সামাজিক মাধ্যমে যে সংঘবদ্ধ প্রচারণা হয়েছে সেখানে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন যে, টঙ্গীতে মোহেব্বুল্লাহর বাসার আশেপাশে এবং শিলমুন ফিলিং স্টেশনের সামনের সিসিটিভি ফুটেজে মোহেব্বুল্লাহকে যে জামা, পায়জামা ও জুতা পরিহিত অবস্থায় দেখা গেছে, পেন্টাগন হোটেলের সামনের ফুটেজে নাকি ভিন্ন জামা-কাপড়ে তাকে দেখা গেছে; যা থেকে ইঙ্গিত করা হয়েছে পুলিশ ভিন্ন দিনের ফুটেজকে একই ঘটনার বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
তবে দ্য ডিসেন্ট এর সংগৃহীত সবগুলো ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, টঙ্গীর ফুটেজ এবং পেন্টাগন হোটেলের ফুটেজে মোহেব্বুল্লাহ একই পোশাক, জুতা, পায়জামা পরে আছেন। পেন্টাগন হোটেলে তার কোমর পর্যন্ত গুটানো জোব্বাকে ‘ফতুয়া’ বলে সামাজিক মাধ্যমে অসত্যভাবে প্রচার করা হয়েছে।

পরণে ফতুয়া নয়, পাঞ্জাবি গুটিয়ে পরেছিলেন মুফতি মিয়াজী | সিসিটিভি
আর বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মোহেব্বুল্লাহর মাথায় একটি কালো পাগড়ি ছিল যেটি পেন্টাগনের সামনের ফুটেজে ছিল না। মোহেব্বুল্লাহ উদ্ধার হওয়ার পরেও পাগড়িটি না পাওয়ায় এনিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
তবে ৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে টঙ্গীর মীরের বাজার সিএনজি স্টেশন থেকে পাগড়িটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় কয়েকজন সিএনজি চালক জানান, পাগড়িটি ৪/৫ দিন ধরে এখানেই পড়ে ছিল। ধর্মীয় পোশাক মনে হওয়ায় অনেকে এটি ওখানে পড়ে থাকতে দেখলেও কেউ সরাননি।
পুলিশের ধারণা, মোহেব্বুল্লাহ মীরের বাজার থেকে যে সিএনজিতে উঠেছিলেন তিনি হয়তো ভুলে সিএনজিতেই পাগড়িটি ফেলে যান। পরে চালক পেয়ে এখানে রেখে যায়। পাগড়িটিতে ধুলার আস্তরণ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে টঙ্গীর মীরের বাজার সিএনজি স্টেশন থেকে পাগড়িটি উদ্ধার করে পুলিশ | টঙ্গী পুলিশ
কী বলছেন সহযাত্রীরা?
মুফতি মোহেব্বুল্লাহ মিয়াজী যেই বাসে করে পঞ্চগড় গিয়েছিলেন সেই বাসের চারজন যাত্রীর সাথে কথা বলেছে দ্য ডিসেন্ট। মিয়াজীর সিট নম্বর ছিল ই-১। পাশের সিট ই-২-তে যাত্রী ছিলেন রফিকুল ইসলাম। বাইপাইল থেকে বাসে ওঠেন তিনি। 
তিনি বলেন, উঠে তার পাশের সিটে একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে দেখতে পান। তার পাশের যাত্রীটির বর্ণনা দেন এভাবে, “তিনি একজন ষাটোর্ধ্ব মানুষ ছিলেন। মাথায় টুপি ছিল। আমি তার সাথে কয়েকবার টুকটাক কথা বলেছি তবে তিনি নিজে থেকে কোন কথা বলেননি। আমি জিজ্ঞেস করেছি, কোথায় যাবেন আংকেল? তিনি কোন জবাব দেননি। চুপচাপ ছিলেন। উনাকে দেখলাম বাসে আছরের নামাজ পড়েছেন। মাগরিবের সময় যখন গাড়ি থামায় তখন বললাম আংকেল গাড়ি থামাইসে, আপনি গিয়ে মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে আসেন। পরে উনি মাগরিবের নামাজ পড়তে নামেন।”
হোটেল পেন্টাগনের সিসিটিভি ফুটেজের টাইমস্টাম্প-এ দেখা যায় বাসটি থামান সময় বিকাল ৫টা ৩১ মিনিট, যার একটু পরে মাগরিবের নামাজের সময় হয়। এবং মুফতি মিয়াজী তখন বাস থেকে নেমে কোর্তা গুটাতে গুটাতে অযুখানার দিকে যান।
রফিকুল রংপুরের পীরগঞ্জে বাস থেকে নামেন। নামার সময় তিনি পাশের যাত্রীকে বাসে রেখেই যান।
ডি-১ সিটের যাত্রী ছিলেন শরিফুল ইসলাম। তিনিও গাবতলী থেকে বাসটিতে উঠেন। শরিফুল জানান, তিনি তার সিটের বরাবর পিছনের সিটে (ই-১) মুরব্বি করে একজনকে দেখেছেন এবং তার সাথে একবার কথাও হয়।
২৩ বছর বয়সী শরিফুল বলেন, “হুজুর প্রথমে ভুলে আমার সিটে বসে পড়েন। আমি গাড়িতে যখন উনাকে বলি এটা আমার সিট তখন উনি বলেন যে, এটা উনারই সিট৷ তখন উনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমি কই যাবো? আমি বলি, বীরগঞ্জ। তখন আমি আবার জিজ্ঞেস করি, উনি কোথা থেকে আসছেন? উনি বলেন, টঙ্গী মাদবর বাজার। ‘কই যাবেন’, জিজ্ঞেস করার পর উত্তর দেননি। পরে কন্ডাকটর এসে উনাকে আমার পিছনের সিটে বসান আর আমি আমার সিট বুঝে পাই।”
শরিফুল বীরগঞ্জে নামেন বাস থেকে। তখনও ওই যাত্রীকে বাসে দেখেন তিনি।
এফ-১’র যাত্রী ছিলেন জিয়াউর রহমান। ২২ তারিখ গাবতলী কাউন্টার থেকে শ্যামলীর বাসে উঠেন তিনি। জিয়াউরকে হোয়াটসঅ্যাপে মিয়াজীর ছবি পাঠিয়ে জানতে চাইলে তিনি মোহেব্বুল্লাহকে শনাক্ত করে জানান, গাবতলী থেকে তাকে বাসে উঠতে দেখেছেন তিনি। তার সামনের সিটেই তাকে বসতে দেখেছেন। তিনি বলেন, “দাঁড়ি পাকা, জুব্বা গায়ে দেয়া একজনকে আমার সামনের সিটে দেখেছি। আমি তো পঞ্চগড়ের টিকেট কাটছিলাম, কিন্তু পথে পেট খারাপ হয়ে যাওয়ায় গোবিন্দগঞ্জ নেমে যাই। পরে আরেক বাসে করে রওনা দিই। তখন মুরব্বি বাসেই ছিল।” জিয়াউর জানান বাসটি দুপুর ১:৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ২টায় ছাড়ে গাবতলী থেকে।
এফ-৩ এর যাত্রী ছিলেন জিন্নাত আরা। তিনিও ই-১ নাম্বার সিটে একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।
৪ জন যাত্রীই জানান, বাসটি বগুড়ার শেরপুরে যাত্রা বিরতি দেয় এবং সময় ছিল অনুমানিক সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার আশেপাশে। নামাজের ওয়াক্ত হিসেবে মাগরিবের নামাজের সময় ছিল তখন বলে জানান তারা।
কী বলছেন প্রতিবেশীরা?
মোহেব্বুল্লাহ মিয়াজীর সম্পর্কে টিএন্ডটি বাজারের বিভিন্ন দোকানদার, তার পেছনে দীর্ঘদিন ধরে নামাজ পড়েছেন এমন মুসল্লী কিংবা টিএন্ডটি কলোনিতে বাস করেন এমন বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয় দ্য ডিসেন্ট-এর প্রতিবেদকের। কেউই তার ব্যাপরে কোন নেতিবাচক কথা বলেননি। আলেম হিসেবে তিনি অত্যন্ত সজ্জন এবং ভালো মানুষ বলেই মত দিয়েছেন সবাই। 
একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক), যিনি টিএন্ডটি বাজার জামে মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি বলেন, “হুজুর এমন কাজ করবে তা কল্পনাই করা যায় না। উনাকে এলাকাবাসী সবাই সম্মান করে। তবে এই ঘটনায় আতাউর রহমান বিক্রমপুরীর ভূমিকা সন্দেহজনক। হুজুরের ছোটছেলে আগে থেকেই তার সাথে পরিচিত। এদের কোন যোগসাজশ আছে কিনা তা খুঁজে দেখা উচিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর।”
আগেও কখনও অস্বাভাবিক আচরণ করেছিলেন?
পঞ্চগড় ফিরে আসার পর গত ২৯ অক্টোবর দুপুরে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন মুফতি মিয়াজী। খালি গায়ে ঘর থেকে বের হয়ে দৌড়ে বাজারের দিকে যেতে শুরু করেন। পরিবারের সদস্যরা টের পেয়ে তার পিছনে ছুটেন। পরিবারের সরবরাহ করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, মিয়াজীকে ধস্তাধস্তি করে ফিরিয়ে আনছেন তার ছোটছেলে মোহাম্মাদুল্লাহ। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় আগে কখনো তার বাবা এমন অসংলগ্ন আচরণ করেছেন কিনা?
তিনি হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস মেসেজে বলেন, “উনি আজকে যেরকম করলো এরকম সরাসরি কখনোই করেনাই। চিঠি পাওয়ার পরে এরকম করতেছে। তবে এর আগে উনি হিতাহীত জ্ঞান হারায়া ফেলতো, মানে কই কী করতো, যাইতো, আবার ফিরা আসতো। এরকমভাবে জোর জবরদস্তি করতো না। এগুলা কিছু করতো না। কিন্তু উল্টাপাল্টা করতো, কী করতেছে নিজেই বুঝতো না -এরকম কাজ করতো। এই আরকি।”
বাজারের কাছেই একটি কওমি মাদ্রাসা পরিচালনা করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন আলেম বলেন, “তাকে সবাই পছন্দ করে। ছোটখাটো কিছু বিষয় ছাড়া খুব বেশি অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়েনি। আগে তিনি জুমায় কালো পায়জামা, পাঞ্জাবি ও পাগড়ি পরতেন। সবকিছু কালো পরতেন। পরে আমি তাকে বলেছি নবী সা. একসাথে সবকিছু কালো কখনো পরেননি। উনার একটা বাইক ছিল যেটাতে ছাউনি লাগানোসহ বিভিন্ন জিনিস মাঝে মাঝে মডিফাই করতেন উনি। এগুলো একটু অস্বাভাবিক টেকতো। এছাড়া তেমন কিছু না।”
হাফেজ সাইফুল্লাহ ১৫ বছর ধরে মসজিদটিতে মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। তিনি বলেন, “হুজুরের আচরনে ইতিপূর্বে খুব বেশি অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি। তবে ৩/৪ বছর আগে তিনি একদিন জোহরের সময় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। এছাড়া কথা বলার সময় উনার জ্বিহবা কাঁপতো ও কামড় পড়তো। এজন্য তিনি বহু ডাক্তার ও রাকি (কবিরাজ) দেখিয়েছেন।”
মামলার এজাহার ও মোহেব্বুল্লাহর বক্তব্যে গরমিল কেন?
মোহেব্বুল্লাহ যখন উদ্ধার হন তখন প্রাথমিকভাবে তিনি দাবি করেছিলেন যে, তাকে মাজু খান ব্রিজের পরের রাস্তা থেকে অপহরণ করা হয়। তবে তার-ই স্বাক্ষরিত মামলার এজাহারে লেখা, তাকে ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে অপহরণ করা হয়; যা ব্রিজের আগে অবস্থিত।
বর্ণনার এই গরমিলের কারণে প্রশ্ন ওঠে যে, এর কারণ কী? পুলিশ কেন এজাহারে ভিন্ন তথ্য উল্লেখ করলো।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মেহেদি হাসান বলেন, এজাহারে ঘটনার স্থান সবার সাথে আলোচনা করেই ফিলিং স্টেশন দেয়া হয়। কারণ উনি যে স্থানের কথা বলেন সেটা ফিলিং স্টেশনের কাছাকাছি হলেও টঙ্গী থানার অধীনে পড়ে না। পড়ে পুবাইল থানায়। এখানে অন্য কোন ব্যাপার নেই।
মিয়াজীর আইনজীবি ওমর ফারুক তালুকদার এক ফেসবুক পোস্টে অনুরূপ কথাই লিখেছেন। তিনি লিখেন, “থানা কর্তৃপক্ষ বলে আপনি যে জায়গার কথা বলেছেন সেটা পুবাইল থানার অধীনে। আর ব্রীজের এই পাশটা টংগী পূর্ব থানার অধীনে সেক্ষেত্রে প্লেস অব অপারেশন টা ব্রীজের এই পাড়ে দিলে আমাদের থানার অধীনে হয়। এছাড়া টংগীর আলেম উলামারাও চান এখানেই (মামলা) হোক। বিষয়টা মামলা দায়েরের পর থানার ওসি সাহেব উনার উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকেও জানান। এই কারনে Place of Occurrence ব্রীজের এই পাশে ফিলিং স্টেশনের সামনে দেয়া হয়েছে। (উল্লেখ্য যে, মামলা দায়েরের সময় উনার আইনজীবী হিসেবে আমি উপস্থিত ছিলাম)”
ফিলিং স্টেশনে মিয়াজীর ফিরে আসার ভিডিও নাই কেন? 
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, শিলমুন ফিলিং স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে মিয়াজীর হেঁটে যাওয়ার ভিডিও রয়েছে, কিন্তু পঞ্চগড় যেতে হলে তাকে পিছনে ফিরে আসতে হবে। সামনের দিকে গিয়ে পঞ্চগত যাওয়ার রাস্তা নেই। তাহলে পিছনে ফিরে আসার ভিডিও নাই কেন? 
গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া মিয়াজীর বক্তব্য থেকে জানা যায়, উনি অটোযোগে মীরের বাজার যান। সেখান থেকে সিএনজি করে জয়দেবপুর চৌরাস্তায় যান এবং বাসে করে ঢাকার শ্যামলী পৌঁছান। সেখান থেকে আবার বাসে করে গাবতলী যান। গাবতলী থেকে শ্যামলী পরিবহনের বাসের টিকেট কেটে পঞ্চগড় যান। মুহিব্বুল্লাহ যে গাবতলী যাওয়ার জন্য যে রুটটির কথা বলেছেন সেই রুটে শিলমুন ফিলিং স্টেশনের সামনে দিয়ে গিয়ে আবার পিছনে আসার প্রয়োজন নাই, এবং তিনি আসেননি। ফলে তার ফেরার ফুটেজ নেই।
আলোচিত চিঠি দু’টি সম্পর্কে যা জানা যায়
মুফতি মোহিব্বুল্লাহ ফিরে আসার পর মিডিয়াকে বলেছিলেন, “গত ১১ মাস ধরে আমাকে বেনামি চিঠি পাঠানো হচ্ছিল। এসব চিঠিতে আমাকে অখণ্ড ভারত ও ইসকনের পক্ষে কথা বলতে বলা হয়। এছাড়া ইসলাম, কোরআন ও ধর্মীয় দলগুলোর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে চাপ দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২১ অক্টোবরের চিঠিতে কোরআন ও আল্লাহ শব্দ না বলার নির্দেশও দেওয়া হয়।”
এর মধ্যে ২১ অক্টোবর এবং ২৫ সেপ্টেম্বর তার পাওয়া দুটি কথিত চিঠিতে খতিব ও মসজিদ কমিটির সদস্যদের হুমকি দিয়ে বিভিন্ন কথা লেখা রয়েছে।
২৫ সেপ্টেম্বর পাওয়া চিঠিতে তারিখ লেখা রয়েছে ‘১৪ সেপ্টেম্বর’।
যদিও মুফতি মোহেব্বু্ল্লাহ তার এক বক্তব্যে দাবি করেছেন তাকে ৪টি চিঠি দেয়া হয়েছে, তবে সর্বশেষ চিঠিতে মসজিদ কমিটিকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে, “তোদের খতিবকে এ পর্যন্ত ১০টি চিঠি দেয়া হয়েছে কিন্তু সে কোন মূল্য দেয়নি।”
আলোচ্য দু’টি চিঠিই প্রথমে মসজিদটির মুয়াজ্জিন হাফেজ সাইফুল্লাহর হাতে পড়ে। এর মধ্যে প্রথম চিঠিটি পাওয়ার ব্যাপারে মুয়াজ্জিন সাইফুল্লাহ বলেন, “ওইদিন সকালে হুজুর আমাকে ফোন করে বলেন, তিনি বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। দরজা বাইরে থেকে লাগানো। আমি যেন গিয়ে দরজা খোলার ব্যবস্থা করি। আমি গিয়ে দেখি বাহিরের টিনের গেইট লাগানো। গেইট খুলতে গিয়ে আমি দেখি নীল একটা পলিথিনের ভিতর একটা খাম। খামের উপর লাল কালি দিয়ে লেখা, “মসজিদের খতিব, সেক্রেটারি ও ক্যাশিয়ার ছাড়া চিঠি খোলা নিষেধ”। আমি হুজুরকে মোবাইলে এটা জানালে তিনি মুসল্লিদের ডাকতে বলেন। তখন সবাই চিঠিটি দেখে। এরপর আমরা জানতে পারি যে, হুজুর এর আগে আরও চিঠি পেয়েছেন।
দ্বিতীয় চিঠি পাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, “হুজুর যেদিন নিখোঁজ হন তার আগের দিন মাগরিবের নামাজের পর উনি সবার শেষে মসজিদের মূল অংশে তালা লাগিয়ে বের হন। এসময় আমরা মসজিদের বারান্দায় ছিলাম। কারণ তখন ওখানে এসি ঠিক করার কাজ করছিলেন মিস্ত্রিরা। তারা চলে যান ৭টা ২০ মিনিটের দিকে। তারপর সাড়ে ৭টায় আজান দেয়ার জন্য আমি মসজিদের তালা খুলে ভিতরে ঢুকে। ভিতরে ঢুকে লাইট জ্বালানোর সাথে সাথেই মসজিদের উত্তর পাশে দেখি চিঠিটা পড়ে আছে।”
চিঠির ঘটনায় জিডি করা হয়নি
মোহেব্বুল্লাহ মিয়াজী যখন প্রথম একটি চিঠি মুসল্লিদের নজরে আনেন তখন মসজিদ কমিটির সদস্যরা নড়েচড়ে বসেন। নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য তার বাড়ির আশেপাশে ৫টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। থানায় জিডি করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত জিডিটি করা হয়নি। কেন জিডি করা হয়নি জানতে চাইলে মসজিদটির সেক্রেটারি হাফেজ শহিদুল্লাহ বলেন, “আমরা যখন প্রথম চিঠিটি পাই তখন উনার নিরাপত্তার জন্য ৪০হাজার টাকা খরচ করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করি। থানার ওসিকে ঘটনাটা জানাই। ইমাম সাহেবকে বারবার জিডি করার কথা বলা হয়েছে। উনাকে বলছি, ওসি সাবকে বলা আছে আপনি গিয়ে জিডি করেন। কিন্তু তিনি যাননি। কেন জিডি করতে যাননি সেটা বলতে পারবো না।”
নিখোঁজের ঘটনায় কেন ইস্কনকে দায়ী করা হল?
মোহেব্বুল্লাহ নিখোঁজের পর যখন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না তখন তার ছোটছেলে মোহাম্মাদুল্লাহ টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ইস্কনবিরোধী বক্তব্য দেয়ায় সংগঠনটি তার বাবাকে একের পর এক চিঠি দিয়ে হুমকি প্রদান করে। সর্বশেষ ২১ অক্টোবর পাঠানো একটি চিঠিতে তার বাবাকে গুম করে হত্যার হুমকি চিঠি পাঠায় এবং তার পরদিনই তিনি অপহৃত হন। পরিবারের পক্ষ থেকে এমন দাবি তোলার কারণে ইস্কনকে দায়ী সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়।
উদ্ধার হওয়ার পর মিয়াজীও অভিযোগ করেন, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিনি বেনামে ৪টি চিঠি পান। তিনি দাবি করেন, এসব চিঠিতে তাকে অখণ্ড ভারত মাতার পক্ষে কথা বলা, ইস্কনের মহাপ্রভু চিন্ময় কৃষ্ণের জামিনের পক্ষে কথা বলা, বিএনপি ও এনসিপির বিরুদ্ধে কথা বলা ও মুসলিম মেয়েদের হিন্দু ছেলেদের সাথে প্রেমে বাঁধা নাই বলে মসজিদে বক্তব্য দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় তাকে হত্যা করা হবে বলেও সতর্ক করা হয়। তিনি দাবি করেন, এই ৪টি চিঠিই তিনি কাউকে না জানিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন। পরবর্তীতে ২৫ সেপ্টেম্বর ও সর্বশেষ ২১ অক্টোবর তাকে আবারও চিঠি দেয়া হলে এবং সেগুলোতে মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধেও হুমকি থাকায় তিনি এই দুটি চিঠি কমিটির নজরে আনেন।
 
       
                 
                
 
                                                  
                                                  
                                                  
                                                  
                                                 